‘জাজের সার্ভার বন্ধ হয়ে গেলে বাংলা চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে যাবে’
৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:৪৪
তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
২০১২ সালের পাঁচ অক্টোবর প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্বাধিকারী আব্দুল আজিজ। অর্ধযুগ আগের সেই দিনটিতে মুক্তি পায় জাজ প্রযোজিত প্রথম সিনেমা ‘ভালবাসার রঙ’। ছয় বছরের সিনেমাযাত্রায় তার অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে চল্লিশটিরও বেশি সিনেমা, ডিজিটাল হয়েছে আড়াইশরও বেশি প্রদর্শন হল। তারপরও তার নাম জড়িয়ে সিনেমা পাড়ায় চলে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা, তাকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বিতর্কের তীর। কিন্তু কেন? আব্দুল আজিজের নিজস্ব বর্ণনায় শুনবো সেসব প্রশ্নের উত্তর…
- যতদূর জানি, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে আপনি সিনেমায় আসতে চেয়েছিলেন। সালমান শাহকে নায়ক করে একটা সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা ছিল। সেটা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১১ সালে সিনেমায় আসলেন। বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে তখন লক্ষ্যটা কি ছিল?
সিনেমা আমি ছোটবেলা থেকেই ভালবাসি। প্রচুর সিনেমা দেখতাম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতাম, মার খেতাম। জানতাম মার খাব। পরে মনে হতো সিনেমা তো দেখে নিছি। যখন সালমান শাহ ছিলেন, ৯৫-৯৬ সালে আমি চেষ্টাও করেছি। আমার অফিসের সবাই সেটা জানে। সেসময় আমি আমেরিকায় ছিলাম। সেপ্টেম্বর মাস ছিল সম্ভবত। বাংলাদেশ থেকে জানানো হলো সালমান শাহ মারা গেছেন। খুব খারাপ লাগলো। আমার সিনেমার প্রজেক্টাও মারা গেল। তখন এদিকে আর আগাই নাই।
তারপর ২০১০ সালে ভাবলাম নতুন একটা বিজনেস করবো। কি করা যায়! সিনেমার দিকে একটা ঝোঁকও আছে, ভালবাসা আছে। প্রথমে একটা নাটক বানাই। ধারাবাহিক নাটক ‘আকাশী রঙের রুমাল’, চ্যানেল আই দেখায়ছিল নাটকটা। এটা কেউ জানে না। আজকেই প্রথম জানালাম। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা, পরিচালনায় ছিলেন নাদের চৌধুরী। তারপর ২০১১ সালে ভাবলাম সিনেমা বানাই। তখন সিনেমা নিয়ে স্টাডি করলাম। বানাবো কি বানাবো না! তখন দেখলাম যে, ফুজি-কোডাক ঘোষণা করছে যে তারা সিনেমা বানানো বন্ধ করে দিবে। তখন অলরেডি ডিজিটাল মিডিয়া চলে আসছে। হলিউডে এবং বলিউডে এই মাধ্যমে ছবি বানাচ্ছে।
আমাদের দেশের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম, ওরা ডিজিটাল ব্যাপারটা বুঝেই না। জানেই না। আমার মনে হলো, ডিজিটালে না গেলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়। কয়েকটা মাত্র ছবি হচ্ছিল তখন, শাকিব খান করতেছিল। আর কোন ছবির শুটিংই নাই। ৩৫ মিলিমিটার বন্ধের পথে। আর এটা বন্ধ হয়ে গেলে আল্টিমেটলি বন্ধই হয়ে যাবে। কন্টিনিউ করবে কি দিয়ে! তখন আমি ভাবলাম নতুন করে কিছু রিক্রিয়েট করি। মানুষকে দিতে হলে নতুন কিছু ইনোভেশন করতে হবে। যদি আগের সেই জিনিসই নিয়ে আসি তাহলে চলবে না। আমি ডিজিটাল ক্যামেরা আনলাম প্রথমে। এরপর রেড ক্যামেরাটা আনলাম। আনার পর ডিরেক্টর শাহীন-সুমনকে বললাম এই আমার ক্যামেরা। ওরা বললো, এই ক্যামেরা দিয়ে শুট করবো না। এটা প্লাস্টিক ক্যামেরা। আর্টিস্টরাও বলে, প্লাস্টিক ক্যামেরা, কাজ করবে না। কিন্তু আমি ডিটারমাইন্ড ছিলাম। কারণ ওইটা, রেড এমএক্স, তখনকার সবচেয়ে উন্নত ডিজিটাল ক্যামেরা। আমি বললাম, এটাই করতে হবে নাহলে আমরা অন্য কেউরে নিয়া করবো। শেষে ওনারা করলো। গল্পের ধরণটা পরিবর্তন করলাম, গানের ধরণটা বদল করলাম, নতুন নায়ক-নায়িকা নিলাম। নতুন কনসেপ্ট নিয়ে একটা সিনেমা তৈরী করলাম। ওই সময় গতানুগতিক সিনেমা চলতেছিল।
আমি ফর্মূলা ফিল্ম থেকে বের হতে চাইলাম। তখন ডিরেক্টরকে একটা গল্প দিলাম। স্বপ্নের ভালবাসা, কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানার একটা পার্ট। গল্পটা দেখলাম সিনেমাটিক। এখান থেকে গল্পটা নিয়ে আমরা বানালাম ‘ভালবাসার রঙ’। ছবিটা বানানোর পর তিন মিনিটের একটা ফুটেজ নিয়ে আমরা থাইল্যান্ড থেকে থার্টিফাইভে ট্রান্সফার করে নিয়ে আসলাম। প্রথমে এফডিসিতে দেখলাম, খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে। তারপর এই তিন মিনিটের সিনটা নিয়ে গেলাম টঙ্গীর ‘আনারকলী’ সিনেমা হলে। সেখানে গিয়ে দেখলাম সাউন্ড বোঝা যায় না, দৃশ্য বোঝা যায় না, কোয়ালিটি বোঝা যাচ্ছে না। আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরী করলাম, নতুন কিছু দেখাবো, ঝকঝকে কিছু দেখাবো, সেটা হলো না। কি করা যায় এখন? তখন হংকংয়ে গিয়ে এক সিনেমা হলের মালিকের সঙ্গে কথা বললাম। ওরা ডিজিটালে ছবি চালায়। তারপর গেলাম চেন্নাইয়ে।
সেখানে প্রাসাদের [পিএক্সডি] সঙ্গে কথা বললাম, ওরা সারা ভারতে ডিজিটালে সিনেমা ডিস্ট্রিবিউট করে। তারা বাংলাদেশে ডিজিটাল মেশিন বসানোর আগ্রহ দেখালো। শর্ত হলো কন্ট্রোলিংটা তাদের হাতে থাকবে। আমি সেফ ফিল করলাম না তখন। আমরা তাদের কাছ থেকে একটা সার্ভার এর আরেকটা প্রজেক্টর কিনে নিয়ে আসলাম। এরপর আমি বাংলাদেশের কয়েকটা ছেলেরে নিয়োগ করলাম, তারা বললো এটা একটা সফটওয়্যার। এটাকে ক্রিয়েট করতে হবে। খুব প্রটেক্টেড একটা সফটওয়্যার। আমরা বললাম বানাতে পারবে? ওরা একটা টিম গঠন করলো। কিছু বুয়েটের ছেলে, কিছু ঢাবির ছেলে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেপেলে নিয়ে ওরা কাজ করা শুরু করলো, পনের বা বিশ লাখ টাকা দিয়ে চুক্তি করলাম। ওদের ছয় মাস লাগল সফটওয়্যারটা ডেভেলপ করতে। তারপর আস্তে আস্তে আমরা সার্ভার নিয়ে আসলাম, প্রজেক্টর নিয়ে আসলাম এবং ডিজিটাল সাউন্ড নিয়ে আসলাম। পঞ্চাশটা সেট করলাম, এখন হলে চালাবে। কিন্তু হল মালিক কেউ এই মেশিন বসাতে চায় না। অনেক অনুরোধ করার পর সাতাশটা হলরে রাজী করানো গেছে। এই হলগুলোতে আমি ‘ভালবাসার রঙ’ রিলিজ করি। ছবিটা হিট করলো। বাংলাদেশের দর্শক বোধহয় অনেকদিন পর স্বচ্ছ সাউন্ড, ঝকঝকে ছবি দেখলো। দর্শক মুগ্ধ হলো। তারপর আস্তে আস্তে পঞ্চাশটা হলে মেশিন বসলো।
তারপর যে প্রজেক্টটা বাড়াবো সেই উৎসাহ পাচ্ছি না। কারণ পেছনে কোন ছবি নাই। থার্টি ফাইভ থেকে ট্রান্সফার করে ডিজিটাল করতেছে সবাই, কিন্তু তারপরও ছবি নাই। পরে ‘ভালবাসার রঙ’ ছবির হিট দেখে প্রযোজকরা ডিজিটাল বানানো শুরু করলো। সবাই যে বলে আমি মনোপলি করতেছি, পঞ্চাশটা হলের পর তিনশ পঞ্চাশটা হল ফাঁকা ছিল। কেউ কিন্তু আর মেশিন বসায়নি একবছরে। একবছর পর আমি আরও পঞ্চাশটা হলে মেশিন বসাই। একশ হল কমপ্লিট করি। তারপর আস্তে আস্তে ছবি বানাই আর হলের সংখ্যা বাড়াই।
- আপনার বিরুদ্ধে শুরু থেকে যে অভিযোগটা আমরা শুনে আসছি, আপনি হল দখল করে ফেলছেন। এখনো অনেক প্রযোজক বলে থাকেন, আব্দুল আজিজ চর দখলের মতো করে হল দখল করে ফেলছে। এই অভিযোগটা নিয়ে আপনার ব্যাখ্যা কি?
কোন হলের মালিক আমি না। হ্যাঁ, আমি মেশিন বসিয়ে যাচ্ছি। উদাহরণ দেই, ময়মনসিংহে চারটা হল। আমি মাত্র একটা হলে মেশিন দিয়েছি, তিনটাতে দেইনি। এটা হলো ব্যবসায়িক নিয়ম। আমি একটা স্টেশনে একটা মেশিন দিবো। ভারতে ঠিক একই নিয়মে চলে। কলকাতায় চারটা নিয়ম চলে, ইউফো, কিউব আর ইএমডব্লিউ চলে আর জানি কি একটা চলে। একটা এলাকায় তিনটা হল আছে তিনজন তিনটা হল চালাবে। আমি আমার প্রতিদ্বন্দী হবো না। একটা হলে দিছি, বাকী দুইটা হলে আমি আর দিবো না। এবং দেইও নাই। চার বছর আমি দেই নাই। ওই তিনটা হল কিন্তু ফ্রি পরে ছিল, কেউ মেশিন বসায় নাই। শুধু অভিযোগই দিছে। যারা সিনেমাতে কাজ করে, একজনের ব্যাগ টানতো, সেখান থেকে বড়লোক হয়েছে, প্রযোজক হয়েছে। অশ্লীল ছবির সময় অশ্লীল ছবি বানিয়ে প্রচুর টাকা বানিয়েছে। তারা কিন্তু মেশিন বসায়নি। একশ হল করতে আমার চার বছর লাগছে। তখন আরো তিনশ হল খালি ছিল। তারা দখল করেনি কেন? মানে তারা কেউ ইনভেস্ট করবে না কিন্তু বলবে।
তারপরে মনে করেন, বাকী তিনটা হল [ময়মনসিংহ] ছবি পায় না কোনো! তারা আমার কাছে আসে। তাদের একটা হল বন্ধ হয়ে গেল মেশিনের অভাবে। এর চারবছর পর আমি বাকী তিনটা হলে মেশিন দিলাম। এভাবে আমরা দুইশ তেহাত্তরটা হল পর্যন্ত যেতে পারছি। আর যাবো না। তবে এখন অনেক হল ডিজিটাল মেশিনের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে।
আর চর দখলের মতো কি? আমি হলে মেশিন বসাইছি। বসানোর পর এইখানে যে কেউ এসে মেশিন বসাতে পারে। সরকার আনতেছে মেশিন। সরকার বসাবে। এটা তো মুক্তবাজার। আমি হলের মালিক। আমি বন্ধ তেইশটা হল খুলে দিছি। এই তেইশটা হলের মালিক আমি। এই হলগুলিতে কোন মেশিন বসবে, কোন ছবি চলবে সেটার সিদ্ধান্ত আমার। আর বাংলাদেশের বাকী হলগুলি আছে সেগুলো ডিসিশন নেয় হল মালিকরা। শ্যামলি হল তো ওদের মেশিন বসিয়ে নিয়েছে। সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টারে তো আমার মেশিন চলে না। যে কোন হল মালিক চাইলে এটা করতে পারে। এটা তাদের স্বাধীনতা। তার মানে কি? কেউ আগাবে না, কেউ ইনভেস্ট করবে না, কিন্তু যেহেতু নেতারা ছিলো, তাদের নেতাগিরি নাই, নেতাগিরি করবে কি নিয়া? তাই একটা কিছু বলতেছে। চর দখল।
- [কিন্তু] অনেকে বলে থাকে আপনি জোর করে হলে ছবি দেন…
অনেকে বলে যে আমি হলে জোর করে ছবি দেই। উদাহরণ দেই, আমার ‘পোড়ামন ২’ বাইশটা হলে চলেছে প্রথমে সপ্তাহে। এর মধ্যে ঢাকার চারটা বড় হল। বাকী যে আঠারটা হল সেগুলো আমার নিজের মালিকানার হল। আর কোন হল কিন্তু আমি পাই নাই। এর বিপরীতে শাকিব খানের ছবি পেল আড়াইশর মতো হল। এমনকি আমার বাইশটা হলের চারটাতে ম্যানেজার চুপেচুপে শাকিবের ছবি নিতে চাইছে। পরে আমার ধমক খেয়ে ‘পোড়ামন ২’ নিছে। আমি জানি ‘পোড়ামন ২’ ভালো ছবি, হিট করবে। এই কনফিডেন্ট আছে বলে আমি কম হল নিছি। পরের সপ্তাহেই সব হল মালিক আমার পেছনে লাইন ধরছে। কারণ প্রথম সপ্তাহে ‘পোড়ামন ২’ বাম্পার ব্যবসা করেছে। এখনো করছে। টানা ষোল সপ্তাহ ধরে চলছে। এটা একটা উদাহরণ গেল।
এর আগে একটা ছবি ছিল ‘নূরজাহান’। তখন সম্ভবত ‘শাকিবের আমি নেতা হব’ ছবিটাও আসছিল। সেসময় আমি বারটা বা তেরটা হল পেয়েছি। বাকী সব হলে শাকিব চলেছে। এখন আমি যদি জোর করে দিতাম তাহলে তো আমার ছবি দিতাম। ‘নূরজাহান’ তো ভালো ছবি। আমি তো জোর করে কোন হলে দেই নাই। এমন অনেক ঘটনা আছে। আবার আমি যখন ‘শিকারী’ ও ‘বাদশা’ রিলিজ করছি, শাকিব এবং জিতের। তখন আমি সব হল পেয়েছি। আমার সঙ্গে আরেকটা ছবি ছিলো ‘রাজনীতি’, সে পেয়েছিল চল্লিশটা হল। হল মালিকরা মনে করেছিল আমার ছবি ব্যবসা করবে বেশি। করেছেও তাই। বাম্পার ব্যবসা করেছে। তার মানে যে ছবিটা ব্যবসা করবে বলে মনে করে হল মালিকরা সেটাই নেয় তারা। এখানে জাজের কোন পাওয়ার খাটে না, খাটায়ও না।
- যৌথ প্রযোজনার সিনেমা আমাদের দেশে আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু যখন আপনি ব্যবসাটা শুরু করলেন তখনই শুরু হলো বিতর্ক। শিল্পীরা রাস্তায় নেমে এলো। আন্দোলন করলো। ওরা অভিযোগ করছে, আপনি তাদেরকে ঠকাচ্ছেন। ভিনদেশী শিল্পীদের এখানে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। এটা আসলে কতটা সত্য?
যৌথ প্রযোজনায় যাওয়াটা তখন সময়ের দাবী ছিল। ওইসময় ছবি আর চলতেছিল না। ‘রোমিও ভার্সাস জুলিয়েট’ এসে বাম্পার ব্যবসা করলো। যৌথ প্রযোজনার ছবি যখন করি, তার নিয়ম হলো প্রথমে আমি প্রিভিও কমিটিতে স্ক্রিপ্ট জমা দেই। এরপর কোন চরিত্রে কে অভিনয় করবে তার তালিকা দেই। কোন দেশে কতটুকু শুটিং হবে সেটা দেই। টোটাল জিনিসটা আমরা প্রিভিউ কমিটিকে জানাই। সেখানে থাকে পরিচালক সমিতির সভাপতি, শিল্পী সমিতির প্রতিনিধি, প্রযোজক সমিতির সদস্য, এর বাইরে যারা থাকেন তারা সবাই সরকারি আমলা। এরা সবাই মিলে দেখে স্ক্রিপ্ট পাশ করলে আপনি যৌথ প্রযোজনার ছবি বানাতে পারবেন। আমি নিয়ম ভাঙলে প্রিভিও কমিটি আমাকে আটকাতে পারে। তারা আমাকে কেন পারমিশন দিলো। কথা উঠছিলো ‘বস ২’ নিয়ে। ওরা বলছে আমি নিয়ম মানিনি। আমি বলছি স্ক্রিপ্টের সঙ্গে ছবি মিলান। প্রথমবার না করলো। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। দেখে চিত্রনাট্য অনুযায়ী সব ঠিক আছে। তাহলে আমার দোষটা কোথায়?
আরেকটা অভিযোগ হলো ভারতীয় শিল্পী বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে! আমার কথা হলো, নায়ক ফারুক ভাই সেদিন একটা কথা বললো, ‘শিল্পীর কোন দেশ নাই, কোন জাত নাই, কোন ধর্ম নাই। সারা পৃথিবী তার ঘর।’ আমিও এই কথাটা বিশ্বাস করি। শিল্পী সারা দুনিয়ার জন্য শিল্পী। সিলভেস্টার স্ট্যালোন যেমন অ্যামেরিকার শিল্পী তেমনি সে আমাদের জন্যও শিল্পী। সেজন্যই আমি মনে করি ইন্ডিয়ান শিল্পী কি বাংলাদেশী শিল্পী সেটা বড় কথা নয়।
এখন ধরেন ভারতীয় শিল্পী কে কে বাংলাদেশে অভিনয় করছেন? অংকুশ করছে, জিত করেছে আর ওম করছে। এই তিনজন। আর হিরোইনদেন মধ্যে করছে শ্রাবন্তী, শুভশ্রী আর রিয়া সেন একটা ছোট্ট চরিত্র করছেন। আর আমাদের দেশ থেকে করছেন শাকিব খান, আরিফিন শুভ, রোশান, জলি, ফারিয়া, মাহী, পূজা, পরীমনিসহ এমন অনেকেই করছেন। আমি খুব সম্ভবত এগারোটা থেকে তেরটা ছবি যৌথ প্রযোজনায় করেছি, বাকী সাতাশটা ছবি লোকাল। এই যৌথ ব্যবসায় আপনি দেখেন ‘নিয়তি’ ছবিতে নায়ক আরিফিন শুভ, নায়িকা জলি। ডিরেক্টর জাকির হোসেন রাজু। ক্যামেরায় সাইফুল শাহীন। সবাই বাংলাদেশের। শতভাগ শুটিং হয়েছে বাংলাদেশে। শুধু গানগুলো হয়েছে হায়দারাবাদে। ‘অঙ্গার’ ছবিটা দেখেন। নায়িকা জলি, নায়ক ওম, পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন। সম্পূর্ণ শুটিং হয়েছে বান্দরবনে। এখানে ওমসহ চারজন ছিল ভারতের। আর বাকী চল্লিশজন শিল্পী বাংলাদেশের। শুধু গানগুলো হয়ে উত্তর ভারতে। ‘রক্ত’ ছবিতেও নায়ক রোশন, নায়িকা পরীমনি, পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন। ক্যামেরায় শাহীন। শুটিং আশি শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশে।
আমি এমন কোন ছবি করি নাই যেখানে ওদের লোকজন বেশি ছিল। নায়ক ওদের থাকলে নায়িকা আমাদের। নায়িকা ওদের হলে নায়ক আমাদের। এই যৌথ প্রযোজনার কারণে বাংলাদেশের শিল্পীরাও ভারতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আজকে শাকিব ওই দেশে কাজ করছে, আরিফিন শুভ, রোশান কাজ করছে। কলকাতায় অনেক ছবির অফার পাচ্ছে। জয়েন ভেঞ্চারের কারণে, ‘শিকারি’, ‘বাদশা’-এর জন্য অনেকগুলো হল তাদের সাত আট মাসের খরচের টাকা উঠিয়ে নিতে পেরেছে। পরে ‘নবাব’ আর ‘বস টু’র জন্য তুললো আরেক বছরের টাকা। এই ঈদে এমন ছবি আমি দেই নাই। এমন আন্দোলন গ্যাঞ্জাম আমাদের দরকার নাই। দেখেন হল এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ঈদের সময় ওরা ছয়-সাত মাসের যে খোড়াকটা তোলে এটা এবার ওরা তুলতে পারে নাই। এজন্য খুব দ্রুত পঞ্চাশটা হল বন্ধ হয়ে যাবে।
তার মানে এখানে চলচ্চিত্র বাঁচাতে হলে সবার আগে নীতিমালা দরকার। আর এই নেতা যারা বিরোধীতা করতেছে তারা কি করতেছে? তারা কোন কাজ করে? না যৌথ প্রযোজনা করে, না লোকাল করে! যদি কোন কাজ করে বিরোধীতা করতো তাহলে বুঝতাম। ওরা কাজও করবে না, বিরোধীতা করবে শুধু। এটাই আমাদের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা। যৌথ প্রযোজনার জন্য কেউ যদি দোষ দিয়ে থাকে, তাহলে দোষ হবে প্রিভিউ কমিটির।
- এই যে আপনি বলছেন, সিনেমা দেন নাই বলে পঞ্চাশটা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে! আপনার কি নিজেকে বাংলা সিনেমার রক্ষাকর্তা মনে হয়? অনেকে বলে আপনি সিনেমা ধ্বংস করছেন…
আমি সিনেমাটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। ওরা বলে আমি বাঁচিয়ে রাখতেছি আমার মেশিনের জন্য, ব্যাপারটা এমন নয়। আমি জাজ মাল্টিমিডিয়ার টাকায় খাই না, চলিও না। এটা আমার ছোট্ট একটা ব্যবসা, এই জাজ থেকে আমি আজকে পর্যন্ত একটা পয়সাও নেই নাই। এখানে আশি কোটি টাকার মতো লগ্নি করছি। এমন কি বিদেশে যে যাই সেটাও জাজের টাকায় যাই না। এখন সিনেমাটাকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এক দিকে যেমন কন্টেন্ট দিচ্ছি, আরেকদিকে তেমন মেশিন দিচ্ছি। বার সালে মেশিনের ভাড়া ছিলো বার হাজার রুপী, ক্যাডিয়াম চার্জ। এখন সেটা গড়ে ছয় হাজার চল্লিশ টাকায় নিয়ে আসছি। এখানে চৌদ্দ-পনেরজন ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে। এবং সবাই উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার। তাদের বেতন আছে মাসে চল্লিশ লাখ টাকা। সারা দেশে ছয়টা অফিস। একশ হল থেকে যদি ছয় হাজার টাকা করে আসে তাহলে তো খরচটা কাভার দিতে পারে না। লস দিয়ে দিয়ে চালাচ্ছি।
এরপর লাভ করুক লস করুক একেরপর এক কন্টেন্ট দিয়ে যাচ্ছি, যাতে দর্শক হলে রেগুলার থাকে। আরেকটা দিকে হল যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, হল বন্ধ হয়ে গেলে প্রযোজকরা ছবি রিলিজ দিবে কোথায়? যার কারণে বন্ধ হলগুলো একটা একটা করে চালু করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনেক সময় পারি, অনেক সময় পারি না। এ পর্যন্ত আমি তেইশটা হল চালু করেছি। হলগুলোর জন্য পচিশ-তিরিশ লাখ টাকা করে খরচ করেছি। এটা চলচ্চিত্রর প্রতি ভালবাসা থেকে করেছি। যারা বলছে আমি ধ্বংস করছি, মার্কেট তো ওপেন, তারা কেন সেভ করছে না? চলচ্চিত্র বাচানোর জন্য সবচেয়ে বড় উপাদান হলো কন্টেন্ট। আপনাকে ভালো চলচ্চিত্র দিতে হবে। আপনি ছবি বানান তাহলে না হিট করবে! আপনি তো ছবিই বানাচ্ছেন না। ওরা কি সেইভ করছে? যা করার জাজ এককভাবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। কতদিন পারবো জানি না, তবে চেষ্টা করবো।
- এই যে আপনাকে নিয়ে এতো কথা, এতো বিতর্ক; হতাশ লাগে না? নাকি এই ব্যাপারগুলো আপনাকে আরো আশাবাদী করে তোলে?
কেবল সিনেমা নয়, যেকোন ব্যবসায় আপনাকে যদি মানুষ পদে পদে বাঁধা দেয়, টেনে ধরে তাহলে বুঝবেন আপনি ঠিক পথে আগাচ্ছেন। প্রথম যখন বাঁধা আসলো তখন আমার এটা মনে হতো। বাঁধা আসলে আমি ভাবতাম সব ঠিক হয়ে যাবে। একটা সময় সব ঠিক হবে। কিন্তু কিছুই ঠিক হচ্ছে না। আমি আসলে ক্লান্ত। যৌথ প্রযোজনার কিছু বানাচ্ছি না। আগে হয়তো চারটা যৌথ করতাম, দশটা লোকাল করতাম বছরে, এখন লোকালই করছি কেবল তিন চারটা। করার দরকার তাই করতেছি। ভাল কন্টেন্ট পেলে কেবল করতেছি। এতে করে কি হলো, কন্টেন্টের সংখ্যা কমে গেল। আগে মেশিনগুলো রিইনোভেশন করতাম, মেশিন নষ্ট হয়ে গেলে নতুন মেশিন কিনতাম, এখন সেটাও করা বন্ধ করে দিয়েছি। আস্তে আস্তে এগুলো কমতে থাকবে আমার। মানে আমি গুটিয়ে ফেলবো না, তবে নতুন করে ইনভেস্টও করবো না। এটা আমি আরো একবছর আগেই বলেছি। কারণ ইনভেস্ট করে তো লাভ নাই। বাঁচায়ে রাখবো, মানুষ তো এখনো বিরোধীতা করছে। বেকাররা। এখন ওরা ইনভেস্ট করুক, ওরা মেশিন বসাক। আমি ছেড়ে যাচ্ছি, আস্তে আস্তে এটা কমে আসতেছে। আমার ছবির সংখ্যাও কমে গেছে।
- আচ্ছা মনে করেন, জাজ মাল্টিমিডিয়া বাংলা সিনেমায় নাই। ছিলেন আপনারা। অনেক সিনেমা দিয়েছেন, কাজ দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর নাই। তাহলে বাংলা সিনেমার চেহারা কেমন হতে পারে? মানে সিনেমার ভবিষ্যৎ কি হবে?
জাজ যদি মনে করে এই মুহূর্তে তার মেশিনটা বন্ধ করে দেবে তাহলে আজকেই সব হল বন্ধ হয়ে যাবে। খালি তিনটা হল চলবে, সিনেপ্লেক্স, ব্লকব্লাস্টার আর শ্যামলী। এর বাইরে আর কারো ডিজিটাল সিস্টেম নাই। ডিপজল সাহেব অনেকসময় ঘোষণা দিয়েছে দুইশ হল ডিজিটাল করবেন। করেননি আর। হয়তো হিসাব নিকাশ করে দেখছেন লস। খসরু সাহেব বলছেন কিন্তু করেন নাই। ডিপজল সাহেব তার নিজের হলটা পর্যন্ত করেন নাই। খসরুর হলে এখনো আমার মেশিন চলে। নিজের টাকায় ডিজিটাল করবেন না। জাজের মেশিনের সার্ভারটা বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে [বাংলা] চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে যাবে।
হল মালিকরাও বলে, আপনি যদি সিনেমা বানানো বন্ধ করে দেন ছয় মাস আগে আমাদের জানাবেন। কেন? বলে, তাহলে আমরাও হল বন্ধ করে দেব। কারণ আপনি যদি কন্টেন্ট না বানান তাহলে হল আর টিকে থাকবে না। এটা হল মালিকদের কথা। সো, নতুন করে যদি আরেকটা জাজ জন্ম না নেয়, আরেকজন লগ্নিকারী যদি না আসেন তাহলে বাংলা চলচ্চিত্র বলে আর কিছু থাকবে না। বাংলাদেশে জাজের মতো ছয়টা প্রতিষ্ঠান দরকার। এটলিস্ট পাঁচটা থাকা উচিত, চারটা থাকা উচিত। এখন যদি জাজ বন্ধ হয়ে যায়, আরেকটা জাজ যদি ক্রিয়েট না হয় তাহলে হল মালিকরা হল বন্ধ করে দিবে। জাজ শুধু হল বানাচ্ছে না, টিকায়া রাখতেছে না, সিনেমা বানাচ্ছে না, নতুন নায়ক নায়িকাও দিচ্ছে।
- এখানে একটা কথা আছে। মানছি, আপনি সিনেমার জন্য অনেক কিছু করছেন। নতুন নায়ক-নায়িকা দিচ্ছেন, সিনেমা বানাচ্ছেন। কিন্তু নতুন পরিচালক কয়জন দিয়েছেন? সিনেমা তো আসলে টিম ওয়ার্ক। ভাল সিনেমায় সবার অংশগ্রহনটা জরুরী। একজন লাইটম্যানও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাটায় জাজ কি আদৌ কিছু করতে পারছে?
নতুন পরিচালক বলতে আমি সৈকত নাসিরকে এনেছি। রায়হান রাফিকে এনেছি। এই দুইজন নতুন পরিচালক এনেছি। একটা সিনেমাটোগ্রাফারও দিয়েছি নতুন। সে ফেল করছে। ‘দহনের’ জন্য সে কাজ করছিলো, ওর ফুটেজ ফেলে আবার নতুন করে শুট করতে হচ্ছে। মিউজিক ডিরেক্টর নতুন দিয়েছি। নতুন গায়ক-গায়িকা দিয়েছি। লিরিসিস্ট, চিত্রনাট্যকার নতুন দিয়েছি। ডিরেক্টর আসলে নতুন বলে কিছু হয় না। তাকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে হবে। আপনি নায়ক নায়িকা তৈরী করতে পারবেন কিন্তু পরিচালক পারবেন না। তারে অভিজ্ঞতা আর মেধা নিয়ে আসতে হবে তখন আপনি তাকে সুযোগ দিতে পারবেন। এখানে বাংলাদেশ থেকে মাত্র দুজনকেই পেয়েছি সুযোগ দেয়ার মতো। এখন মাসুদ রানার জন্য নতুন একজন পরিচালক দিবো, খুঁজছি। বাংলাদেশের জন্য নতুন, হলিউডের জন্য পুরাতন। পরিচালনায় রোমান নামে আরেকটা ছেলেকে আনছি। সে অনেকদিন থেকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছে।
জাজ একটা প্রোডাকশন হাউজ, ফিল্ম স্কুল না। তারপরও যখন নায়ক-নায়িকা আনি আমরা নিজেরা কোন ট্রেনিং দিতে পারি না। ভারতে পাঠিয়ে দেই, বাংলাদেশে ট্রেনিং দেই। যেমন রোশানকে ট্রেনিং দিয়েছি তারিক আনাম স্যারের কাছে। ডান্স শিখিয়েছি ঈগলের কাছে। জলিকে শিখতে পাঠিয়েছি ভারতে। এরকম অনেককে আমরা ট্রেনিং দেই। কিন্তু যে ক্যামেরাম্যান তাকে আলাদা করে শেখানোর কিছু নাই। যে ক্যামেরা চালায় তার সঙ্গে থেকে থেকে শিখতে হবে। আপনি স্কুলে কখনো তারে তৈরী করতে পারবেন না। আর্ট ডিরেক্টরকে স্কুলে তৈরী করতে পারবেন না। এটা থেকে থেকে কাজ শিখতে হবে। এখানে আপনি নতুন এনে ট্রেনিং দিয়ে করতে পারবেন না। আমার ক্যামেরা চালানো শেখানোর জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। অ্যাসোসিয়েশনে চিঠিও দিয়েছি। শুরুর দিকে। ডিজিটালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। পরিচালক সমিতিকেও বলেছি। সাড়া পায়নি। মেকাপে ভালো লোক দিয়েছি, ফলো ফোকাসে একজনকে ডেভলপ করেছি। আমার ইন হাউজ কাজ করতে করতে শিখেছে।
- বাংলা সিনেমার সঙ্গে বেশ কয়েকজন নতুন নায়ক-নায়িকার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে মাহী আর নুসরাত ফারিয়া ছাড়া আর কেউ রেসে নাই। নায়কদের মধ্যে রোশানকে নিয়ে সামান্য আলোচনা হয়, আর তেমন কেউ নাই। এই জায়গায় মনে হয় আপনি কিছুটা অসফল…
না, আমি এখানে সফল। কারণ বাপ্পীর উপর একটা সময় হল বুকিং হলে প্রডিউসার ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত পেতো। শাকিবের পরেই তার অবস্থান ছিলো। কিন্তু একটা সময় এসে যখন গড্ডালিকায়… আরেফিন শুভ তো ভাল পজিশনে গেছে। তারা যদি ধরে না রাখতে পারে এটা তাদের ব্যর্থতা, আমার ব্যর্থতা না। আমি কিন্তু হিট বানিয়েই তাকে মার্কেটে ছেড়েছি। হিট বানানোর পর মাহীকে মার্কেটে ছেড়েছি। এখন মাহীর ছবি চলে না এটা তার ব্যর্থতা। এখন রোশানকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কারণ সে কাজ করছে। আর একজন আর্টিস্ট যদি টাকার জন্য কাজ করে, টাকা পাইলাম কিন্তু বুঝলাম না ছবিটা চলবে কি চলবে না, এখন তো বাপ্পী বলেন আর মাহী বলেন, এরা টাকা পেলেই কাজ করে। সো এরা তো টিকবে না।
একটা শিল্পীকে ধৈর্য ধরতে হয়। যে শিল্পীর অর্থলোভ থাকবে সে-ই পড়ে যাবে। নুসরাত ফারিয়ার কথা ধরেন, বক্স অফিস যদি ধরি, কাকরাইলের বুকিং এজেন্ট ধরি, ওদের দৃষ্টিতে এখন এক নম্বরে আছে নুসরাত ফারিয়া। ওর একটা নিজস্ব দর্শকশ্রেণী আছে। ওকে দেখতে দর্শক হলে আসে। এই জায়গাটায় মাহীর থাকার কথা ছিলো। সে থাকতে পারেনি, তার পরপর অনেক ছবি ফ্লপ গেছে। এবং সামনে যে ছবিগুলো আসবে সেগুলোও চলবে না, ডিস্ট্রিবিউটরদের ভাষ্য মতে। তার মানে, এটা সে ধরে রাখতে পারেনি। অনেক আজেবাজে ছবি করেছে। যে ছবি তার করা উচিত ছিলো না…
- মাহীকে নিয়ে যা বলেছেন, এটা কি তার সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে বলছেন…
না… তার ছবির কন্টেন্ট দেখে বলছি। তার ছবি তো চলতেছে না, খুব বাজে ছবি। একদিন পর হল থেকে নামিয়ে দিয়েছে, দুইদিন পর নামিয়ে দিয়েছে এমনও আছে। আমি শুধু মাহীর কথা বলি নাই, বাপ্পীর কথাও বলেছি। তার ছবিও কিন্তু চলে না আর। আশি লাখ টাকা ছিলো তার বুকিং মানি, সেটা এখন নামছে এসে বিশ লাখে। তার মানে বাপ্পীর মার্কেটা পড়ে গেছে। এখন মার্কেটে আছে শাকিব খান, রোশান আর সিয়াম। আরিফিন শুভ পরবর্তী ছবি আসলে বুঝা যাবে। সে ঢাকা অ্যাটাক দিয়ে খুব ভালো পজিশনে গিয়েছিলো আবার দুইটা ছবি সে ভুল চয়েজ করেছে, দুইটা ছবিতে সে পড়ে গেছে।
ছবি হিট করার উপর তার মার্কেট ভ্যালু বাড়ে, ডিস্ট্রিবিউশন। দর্শক তো ছবিটা পরে দেখবে, আগে ডিস্ট্রিবিউটর দিয়ে ছবিটা যেতে হবে। জুটির ভিতর হিট আছে এখন পূজা আর সিয়াম। কারণ ওদের একটা ছবি, সেটাই বাম্পার হিট। তারা লাইম লাইটে চলে আসছে। ফারিয়া দেখেন, ফ্লপ কোন ছবি নাই তার হাতে। তার ছবি খুব খারাপ গেছে এমন নাই। যদি থাকে সেটাও মোটামুটি চলছে।
- শুরুর আলোচনা থেকে একটা প্রশ্ন করি। বলছেন যে, অনেকেই আপনার কাজে বাঁধা দিচ্ছে। অনেক সময় শিল্পী সমিতি বা পরিচালক সমিতির সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে… আপনার কি মনে হয়, যারা বাঁধা দিচ্ছে তারা যদি বাঁধা না দিয়ে অন্যকিছু করতো তাহলে বাংলা সিনেমার জার্নিটা আরেকটু অন্যরকম হতো…
শিল্পী সমিতির আগের যে কমিটি ছিলো, শাকিব খান-অমিত হাসান সবসময় কাজে ব্যস্ত ছিলো। তাদেরকে কখনো শুনেছেন আমার বিরুদ্ধে কিছু বলতে! কারণ ওরা কাজ করে। চলচ্চিত্র এগিয়ে নিচ্ছে। তারা কখনো কিছু বলেনি। শুধু এই কমিটিটা আসার পর, মিশা সওদাগর আর জায়েদ খান, মিশা এখন আর বলে না। কারণ সেও কাজ করে। সে বুঝতে পারছে সে ভুল করছে। এখন যার কোন কাজ নাই, তারতো নেতাগিরি করতে হবে।
তো আর কি করবে অফিসে বসে? যদি কিছু না বলে, বক্তব্য না দেয় নেগেটিভ, তার কাছে পজিটিভ কোন বক্তব্য নাই। তো কারো নামে তো নেগেটিভ বলতে হবে। লাইমলাইটে থাকতে হবে। নেগেটিভ বলতে হলে শাকিবের নামে কিছু বলবে, না হলে জাজের নামে কিছু বলবে, তাহলে আলোচনায় আসবে। এর বাইরে তার নেগেটিভ বলার কোন অপশন নাই। তারা যদি এটা না করে কাজ করতো তাহলে চলচ্চিত্র এগিয়ে যেত।
আমরা যদি খারাপ কাজ করি, তাহলে তুমি ভালো কাজ করো! ভাল কাজও করে না, খারাপ কাজও করে না। আমরা যদি খারাপ কাজও করি, তাও তো শুটিং চলছে। একশ বিশটা লোক কাজ করে খাচ্ছে।
- আপনি এতো হিরোকে সুযোগ দিছেন, জায়েদ খানকে তো কখনো সুযোগ দেন নাই। তার তো একটা ক্ষোভ থাকতে পারে আপনার প্রতি…
সে আমার অফিসে আসছে অনেকবার। অনেকবার বলছে যে আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই, আপনি ভার্সিটির বড় ভাই। এফডিসির এদের সঙ্গে বসা যায় না। রেকর্ড নাই। সব অশিক্ষিত। এসব বলছে। কিন্তু আমি আমার গল্পের জন্য যাকে প্রযোজন মনে করছি, তাকেই নিয়েছি। আমি প্রভাবিত হয়ে বা চাপে কখনো হিরো-হিরোইন-ডিরেক্টর নেই নাই। নিবোও না। কারণ জাজ একটা ব্রান্ড। জাজের ছবি দেখতে দর্শক হলে যায়। আমাদের উপর মানুষের ভরসা আছে, বিশ্বাস আছে। এটা আমি নষ্ট করতে পারি না। সো সবার আগে ব্রান্ড ভ্যালু এবং দর্শকের কথা চিন্তা করি আমরা। তার ক্ষোভ থাকতেই পারে। হ্যা, তার ক্ষোভ আছে। তারে যদি একটা ছবিতে ডাক দেই, বদিউল আলম খোকনকে যদি একটা ছবি দেই, তার ইচ্ছা ছিলো জাজের ঘরে ছবি করবে, গুলজার ভাইও বলছে, আজিজ ভাই ছবি দেন না কেন! একটা ছবি দিয়ে দিলে তাদের কোনো সমস্যা ছিলো না।
এই কমিটির আগের কমিটিতে কারা ছিলো? দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ভাই ছিলো, তার আমলে কোন সমস্যা হয় নাই। তার আগের কমিটিতে ছিলো শহীদুল ইসলাম খোকন, তিনি আমাকে সবসময় উৎসাহিত করছেন, ওনাদের সমস্যা হতো না। সমস্যা হয় গুলজার এবং খোকনের, ওদেরকে একটা করে ছবি দিয়ে দিলে সমস্যাটা আমার হতো না। ওরা বিরোধীতা করতো না। দরকারে আমি সৈকত নাসিরকে নিয়ে আসছি, নতুন ছেলে রাফিকে নিয়ে আসছি, তাদের এটা একটা রাগ, পরিচালকদের, যারা নেতা আছেন। তারপরে দেখেন, আমি জাকির হোসেন রাজুকে ছবি দিছি, শাহীন সুমনকে দিছি, এখন অন্যদের কেন দেই না! এইটা তাদের একটা ক্ষোভ আছে আমি জানি। আমি যাকে যোগ্য মনে করি, তাকেই কাজ দেই। এবং সব পরিচালকের উচিত হবে যে যোগ্য, সম্মানিত তাকেই নির্বাচন করা।
দেখেন কি রকম দ্বন্দ্ব করে তারা এখন। এটা অবশ্যই লিখবেন। ‘পোড়ামন ২’ ছবির পরিচালক রায়হান রাফি পরিচালক সমিতিতে অ্যাপ্লাই করছে সদস্যপদের জন্য। তাকে সদস্যপদ দেয়া হয় নাই কারণ সে জাজের সিনেমা করছে। কতখানি হিংসা করছে! অথচ রাফি অনেক মেধাবী একজন পরিচালক, দেশে এবং বিদেশে ছবি বানিয়ে সুনামও অর্জন করেছে। তার মতো একজন পরিচালককে তারা সদস্যপদ দেয় নাই।
আমাদের একটা ছবি ছিলো ‘বেপরোয়া’, নাম এন্ট্রি করার জন্য পাঠিয়েছি বলছে নাম খালি আছে। টাকা নিয়ে যখন জমা দিতে গেছি তারা বলে না এই বুক করা হয়ে গেছে। ব্যাকডেটে একটা বুক করা নাম দেখিয়েছে। জাজের কোন নাম পরিচালক সমিতিতে এন্ট্রি করবে না। এতে কি হলো? আমার কি কোন ক্ষতি হয়েছে? হয়নি। আমি এখন আর পরিচালক সমিতিতে এন্ট্রি করি না। তার মানে পরিচালক সমিতি এটা প্রমাণ করিয়ে দিলো যে পরিচালক সমিতির সদস্য না হলেও যেকোন বাংলাদেশের নাগরিকই ছবি বানানোর অধিকার রাখে। এর জন্য এন্ট্রি করার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই। সেন্সরের নীতিমালাতেও নাই, সরকারের আইনেও নাই, আদালতের আইনেও নাই।
এমন কোন আইন নাই যে নামটা পরিচালক সমিতিতে এন্ট্রি করতে হবে। এখন আমার ‘স্যাটারডে আফটারনুন’, ‘পোড়ামন ২’, ‘বেপরোয়া’, ‘দহন’ এমন কোন ছবির এন্ট্রি নাই। কিন্তু আমাকে আটকাবে? এই নাম আরেকজন ইউজ করতে পারবে? তা কখনো পারবে না! কারণ এই নামটা আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে কপিরাইট অ্যাক্টে নিবন্ধন করেছি। এবং এটাই হলো সবচেয়ে সঠিক আইনগত মাধ্যম, যেটা সরকার স্বীকৃত, যেটা আদালত দ্বারা স্বীকৃত, যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ‘দহন’ নামে অন্য কেউ আর ছবি বানাতে পারবে না। ‘পোড়ামন ২’ নামে পারবে না। কারণ কপিরাইটের সার্টিফিকেট আমার কাছে আছে। তার মানে তারা আমার সঙ্গে দ্বন্দ করে বা জাজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব করে তারা তাদের পরিচালক সমিতিটারে বিতর্কিত করলো। তার মানে তারা বুঝায়ে দিলো পরিচালক সমিতির সদস্যপদের দরকার পড়ে না। সমিতির নেতা হবে সবার জন্য।
আমাদের কতই দুর্ভাগ্য, সেন্সরবোর্ডে পরিচালক সমিতি থেকে গুলজার প্রতিনিধিত্ব করে আর প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতি থেকে দিলু ভাই ও নওশাদ ভাই থাকেন। এই তিনটা লোক আমাদের সিনেমার লোক, আর বাকী সবাই সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত আমলা। চলচ্চিত্রের লোকদের কাজ হলো আমাদের ছবিগুলো পাশ করিয়ে দেয়া। আর সরকারের লোকদের কাজ হলো বিভিন্ন ভুলত্রুটি বের করে আটকানো। এ জন্যই ব্যালেন্স করা। দুঃখজনক হলো গুলজার সাহেব সবজায়গাতে আটকানোর চেষ্টা করে। গত ঈদের সময় মনে করেন শাকিব খানের একটা ছবি গেল, ‘সুপারহিরো’, শেষদিনে সেন্সর হয়েছে। পোস্টারটা তারা হয়তো আগে বানিয়েছে, এটা নিয়ে তার অবজেকশন! নিয়ম হলো সেন্সরের পর পোস্টার বের করতে হবে। এটা কিন্তু আমলারা কেউ জানে না, ওনারা তো এসব খবর রাখে না। উনি [গুলজার] ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়। শাকিব খানের ছবি উনি বাঁধা দিছেন। জাজের ছবি বিভিন্ন ভুল দেখায়ে উনি বাঁধা দিয়েছেন।
সেখানে আমাদের সৌভাগ্য আমাদের দুইজন প্রতিনিধি আছেন, নওশাদ ভাই আর দিলু ভাই। গতবার নওশাদ ভাই মোটামুটি ঝগড়াই করছেন, আপনি প্রতিটা ছবিতে… তারপর একজন টেকনোক্রেট মানে একজন সংবাদকর্মী থাকেন, উনি প্রশ্ন করছেন, জাজের ছবি আসলে আর শাকিবের ছবি আসলে গুলজার সাহেব আপনি বাঁধা দেন, কারণটা কি? তখন গুলজার সাহেব আর কোন উত্তর দেয়নি। দেখেন, আমাদের কি দুর্ভাগ্য, আমাদের প্রতিনিধি, যারা ছবিটা ছাড়ানোর চেষ্টা করবে, সেই লোকটাই আমাদের সবগুলো ছবি আটকিয়ে দিচ্ছে। সেটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য আসলেই খুব দুর্ভাগ্য। আমরা দুর্ভাগ্যের একটা সময় পার করতেছি আমরা এরকম পরিচালক সমিতির নেতা পাইছি, এরকম শিল্পী সমিতির নেতা পাইছি।
- এই আলোচনা বাদ দেই, যদি সিনেমায় থাকেন বাংলা সিনেমাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করেন? স্বপ্ন নয়, বাস্তবতার জায়গা থেকে বলবেন…
একবার অনেক আগে একটা মন্ত্রী দেখেছি দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পর সে বাজারে যাচ্ছে, দোকানীর সঙ্গে কথা বলছেন, ধমক দিচ্ছেন, এই তুমি দাম বেশি নিচ্ছ কেন? আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি এটা শিখছি যে বাজারে গিয়ে কখনো দাম কমাতে পারবা না। দাম কমাতে হলে তোমাকে টেবিলে বসে দাম কমাতে হবে। আমার সিনেমা ভাল হবে নাকি খারাপ হবে সেটা আমি শুটিং স্পটে গিয়ে ভালো করতে পারবো না। সিনেমাটা ভাল করতে হবে আমার টেবিলে, বানানোর আগেই। দেখবেন যে আমি শুটিংয়ে কম যাই, গেলেও গল্পটল্প করে চলে আসি। আজকে যেটা করলাম, আমি কিন্তু শুটিংয়ে আসিনি, আপনাকে সাক্ষাৎকার দিতে এসেছি। [প্রসঙ্গত, সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছে ‘দহন’ সিনেমার সেট থেকে] আমি যাই, তবে আড্ডা দিতে যাই।
এইরকম, যেকোন কিছু উন্নত করতে তার জন্য পলিসি এবং নীতিমালা দরকার। এই পলিসিটা তৈরী হবে টেবিলে। আমি সিনেমাটা যদি উন্নত করতে চাই, তাহলে আমাকে আমার পলিসি দিয়ে সিনেমাটা উন্নতি করতে হবে। সেখানে জাজ একটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আমি জানি চলচ্চিত্রের জন্য কি ধরণের পলিসি দরকার, কিন্তু এই যে নেতারা আছে, গুলজার সাহেব, তারা সবসময় কমপ্লেইন করে জাজ এই করলো সেই করলো, উনারা কিন্তু একবারও পলিসি নিয়ে কথা বলেন নাই। একটা সিনেমা হল বাঁচাতে কি করা উচিত সেটা বলেন নাই। হয় তাদের বলার এই জ্ঞানটা নাই, তারা বাজারে বাজারে দৌঁড়াচ্ছে, সিনেমা কি করা যাবে, মিটিং করবে মিছিল করবে, কিন্তু সরকারকে ভালো পলিসি দেবে না। সরকার যখন তাদের ডাকছিলো নীতিমালা করার জন্য, তারা একটা ভালো পলিসি দেয় নাই।
ভালো পলিসি কি হতে পারে? চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু শিল্পের কোন সুবিধা পাচ্ছে না। নেতারা কখনো বলছে সরকারকে আমরা শিল্পের সুবিধা পাচ্ছি না। শিল্পের সুবিধা পেলে, একটা হল শিল্পের আন্ডারে মেশিন আমদানী করলে তার ডিইটি পড়বে এক পার্সেন্ট, এখন বাণিজ্যিকভাবে সে আমদানি করে, তাকে দিতে হবে ৩৭ পারসেন্ট কোন ক্ষেত্রে ৬৭ পারসেন্ট ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বিদ্যুত বিলও বাণিজ্যিক হিসেবে দিতে হয় বলে বেশি দিতে হয়। শিল্পের কোন সুবিধা সে পাচ্ছে না। নেতারা আজ পর্যন্ত মিটিংয়ে উঠে এই কথাটা বলে নাই। মন্ত্রী আসলেও বলে না। মঞ্চে দাঁড়ালেই জাজ এই করলো, ওই করলো। ওনাদের জ্ঞান জাজের বাইরে কিছু নাই। ওনারা বাজারে দৌঁড়াচ্ছে, পলিসি করতে পারছে না।
তারপর দেখেন, শেয়ার মানি ঠিক নাই। ঢাকা শহরে ‘পোড়ামন ২’ ছবিটা চার কোটি টাকার মতো সেল করেছে। প্রযোজক যদি ফিফটি পারসেন্ট শেয়ার পেত, তাহলে এখানে দেড় কোটি বা পৌনে দুই কোটি টাকার মতো শেয়ার আসতো। প্রযোজকের শেয়ার মানি অনেক কম। এই আইনটা তৈরী করে গেছে আগের যারা প্রযোজক সমিতির ছিলো এরা। সেটাই চলে আসছে। একটা সময় ফিফটি ফিফটি ছিলো। এই আইনটা ঠিক করা উচিত সারা বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। কিন্তু এটা নিয়ে তারা কখনো কথা বলেনি।
বাংলাদেশের অনেক পণ্য আছে এক্সপোর্ট হলে ইনসেনটিভ পাওয়া যায়, কিন্তু চলচ্চিত্রের জন্য কোন ইনসেনটিভ নাই। এটা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন কথা বলে নাই, এরা জানেই না। সুতরাং আপনাকে পলিসি তৈরী করতে হবে। আর সেটা তৈরী করতে হয় সবসময় টেবিলে। আর দায়িত্বটা দিতে হবে যোগ্য কাউকে। একটা ব্যবসায়ীকে সেটা দিতে হবে, একটা আর্টিস্ট পলিসি জানে না। পরিচালকের যদি জ্ঞান থাকে, লেখাপড়া থাকে সে দিতে পারবে। এখন যে নেতা আছে তাদের তো সেই লেখাপড়া নাই। একজন বানিয়েছে অশ্লীল ছবি, আরেকজন বানিয়েছে আর্ট ফিল্ম, যে ছবি একটাও চলেনি। লেখাপড়া কতদূর হবে। লেখাপড়াটা ছিলো শহীদুল ইসলাম খোকন ভাইয়ের, ওনার মাথায় অনেক কিছু ছিলো। আমাদের দুর্ভাগ্য তাকে হারিয়েছি। ঝন্টু ভাই কিছুটা বুঝতো। এখন যে দুইজন আছে তারা এসব জানেই না।
এজন্য চলচ্চিত্র উন্নয়ন জাজ একা পারবে না। এটা জাজের কাজ না। এটা নীতি নির্ধারকদের কাজ। এটা সমিতির কাজ। আমি তো সরকারের সঙ্গে কোন মিটিংয়ে বসিনি আজ পর্যন্ত, মিটিংয়ে বসে কে, গুলজার সাহেব বসে। আমার নেতাগিরি করার কোন ইচ্ছা নাই। আমার কাজ আছে, আমি কাজ করবো। কাজ করার জন্য আসছি।
- প্রত্যেকটা ইন্ডাস্ট্রির কিছু কাল্ট ফিল্ম থাকে। হলিউড থেকে আমরা ‘গডফাদার’ বা ‘ডলার ট্রিলজি’র কথা বলতে পারি, বলিউডে সাম্প্রতিককালে ‘গ্যাংস অফ ওয়েসিপুর’ নির্মাণ করেছে, আপনার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে কি এমন কিছু নির্মাণ করার ইচ্ছে আছে?
গডফাদার যিনি বানিয়েছেন [ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা] তিনি হয়তো জানতেন না এটা কাল্ট ফিল্ম হবে। সার্জিও লিয়ন বা অনুরাগ ক্যাশ্যপও হয়তো জানতো না। হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ছবি হলো, আমার দৃষ্টিতে, ‘জীবন থেকে নেয়া’, এরপর হলো ‘আগুনের পরশমনি’। যখন বানিয়েছে তখন হয়তো জানতো না এটা কাল্ট সিনেমা হবে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিকে ছাড়িয়ে যাওয়া অত সহজ হবে না। আমরা হয়তো টেকনিক্যালি উন্নতি করবো কিন্তু যে গল্প, যে গাঁথুনি, লাইন আপ, সংলাপ, এটাকে ছাড়িয়ে যাওয়া অত সহজ না। তারপরও কখনো কোন একটা ছবি হয়ে যেতে পারে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। আমরা মাসুদ রানা বানাচ্ছি, ‘ডুব’ বানিয়েছি, এই ছবিটা যেখানে গেছে সেখানেই প্রশংসিত হয়েছে, মস্কো থেকে সেরা সিনেমার পুরস্কার নিয়ে আসছে, অস্কারে যাচ্ছে। এখন যেটা বানাচ্ছি, ‘দহন’, এর পাশাপাশি ‘স্যাটারডে আফটারনুন’ শেষ হয়েছে, এই দুটো ছবিও কাল্ট সিনেমার তকমা পেয়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ ছবি বলতে যেমন আমরা ‘জেমস বন্ড’ বুঝি, ‘মাসুদ রানা’ও হয়তো তেমনি একটা কিছু হবে। আমি জানি না কোন ছবিটা হবে। কিন্তু আমি সবসময় ভালো ছবি বানানোর চেষ্টা করে যাবো।
ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত ও অন্তর্জাল
সারাবাংলা/টিএস/পিএম
আরও পড়ুন :
আন্তর্জাতিক মুক্তির দিনেই বাংলাদেশে ‘ভেনম’
দেবী’র আনকাট সেন্সর, মুক্তি ১৯ অক্টোবর
হাতিরঝিল মঞ্চে ‘ওয়াটারনেস’
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মঞ্চে ‘গ্যালিলিও’
পুরস্কার নিজের কাছেই রাখছেন প্রকাশ রাজ
আরো দেখুন :
সারাবাংলা’য় আড্ডা। অতিথি : শিমুল মুস্তাফা। উপস্থাপনা : পলাশ মাহবুব
https://www.youtube.com/watch?v=z1mma2NR4_k
আব্দুল আজিজ জাজ মাল্টিমিডিয়া মাহিয়া মাহি মুশফিকুর রহমান গুলজার শহীদুল ইসলাম খোকন শাকিব খান