ঢাকা টু কান: স্বপ্ন অনেক, প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ
২৩ মে ২০১৯ ১২:৪৯
নাহ। কান সৈকতে ইন্টারন্যাশনাল প্যাভিলিয়নে এবারও ওড়েনি বাংলাদেশের পতাকা। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭২ তম আসরে মার্শে দ্যু ফিল্মের ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালে এবার ৬০টি দেশের প্যাভিলিয়ন রয়েছে। সেখানেও নেই বাংলাদেশের কোন প্যাভিলিয়ান।
গেলো তিন বছর ধরে কাভার করছি, বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় এই আসরটি। সবসময়ই মনে হয়েছে, যদি বাংলাদেশেরও একটা প্যাভিলয়ন থাকতো!
সেই শূন্যতা দূর করতে কি করা যায়? কেমন করে বাংলাদেশের ছবির সঙ্গে চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক সার্কিটের পরিচয় ঘটবে?
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই, কানে এবারের আসরে যোগ দেওয়া বাংলাদেশের ফিল্ম প্রফেশনালসদের এক আড্ডার আয়োজন হলো, অনেকটা ব্যক্তিগত ইচ্ছে থেকেই। সেই আড্ডায় তাগিদ উঠলো একটা প্লাটফর্ম তৈরীর। আহ্বান জানানো হলো বিশ্বময় বাংলাদেশের ছবির জানান দিতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার।
আড্ডায় ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইইএফটিএ) সভাপতি সামিয়া জামান, স্টার সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান, নির্মাতা জসীম আহমেদ, প্রবাসী নির্মাতা স্বপন আহমেদ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকসের (ফিপরেস্কি) এবারের বিচারক সাদিয়া খালিদ রীতি এবং নির্মাতা তাসমিয়াহ আফরীন মৌ। মেরিল-প্রথম আলোর ‘আগামীর নির্মাতা’ আয়োজনে বিজয়ী হবার সুবাদে কানে এবারই প্রথম আসা নির্মাতা তাসমিয়াহ আফরিন মৌ এর। কান উৎসবে যোগ দেওয়া তার জন্য বড় সুযোগ এমনটা দাবী করে মৌ বললেন, ‘আমি মনে করি এখানে এসে যে আমি শুধু দারুন সব ছবি দেখছি তা নয়, এখানে এসে আমার চোখটাও খুলছে। বিভিন্ন সেক্টরে যারা কাজ করছেন যেমন সিনেমা প্রডিউসিং, মার্কেটিং, সেলস, ডিস্ট্রিবিউশন – তারা কিভাবে কাজ করছে তা সামনাসামনি দেখার সুযোগ মিলছে’।
আরও পড়ুন : চলে গেলেন শিল্পী খালিদ হোসেন
দীর্ঘ ১০ বছর পর ফিপরেস্কির বিচারক হওয়ার সুযোগ পাওয়া সাদিয়া খালিদ রীতি তার এবারের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বললেন, ‘ কানের প্যারালাল একটি সেকশনের জুরি হয়ে আসা নিশ্চয় বড় একটা সুযোগ। জানি না তা সদ্ব্যবহার করতে পারছি। এখানে অনেক স্ক্রিনিং এ প্রায়োরিটি এক্সেস আছে, যেগুলোতে যাবার সুযোগ মিলছে না। জুরি হবার কারণে এতগুলো ছবি দেখতে হচ্ছে নিজের সেকশনের জন্যই যে অন্য ছবিগুলোর জন্য সময় বের করা যাচ্ছে না। ফিপরেস্কির সব ছবিই বড় পর্দায় দেখছি, ভালোই লাগছে’। রীতি বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে প্রথম ফিপরেস্কির বিচারক হলেন।
প্যারিসে বসবাস করা নির্মাতা স্বপন আহমেদের কাছে কানের এই উৎসব তাকে দেশের গন্ধ এনে দেয়। তবে দুঃখের সাথে জানালেন, ‘কানে আমাদের ছবি নেই। কম্পিটিশন, আউট অব কম্পিটিশন, ডিরেক্টর ফোর্ট নাইটে, কোন জায়গায় আমাদের ছবি নেই। আমাদের কোন প্যাভিলিয়ন নেই, আমাদের কোন স্টল নেই, আনাদের কোন প্রমোশন নেই। তবু ভালো লাগছে বেশ কিছু দিন ধরেই আমরা আলোচনা করছি, সামনে আমরা কি করব’?
গেল দুইবার শর্ট ফিল্ম কর্ণারে ছবি নিয়ে আসা নির্মাতা জসীম আহমেদ, নির্মাতা স্বপন আহমেদের কথার রেশ ধরেই বললেন, ‘আমরা যে টুকু লড়াই করছি, নিজেরাই করছি। এখানে যদি সরকার থেকে কোন উদ্যোগ থাকতো, তাহলে বাংলাদেশের সিনেমা উপকৃত হতো। তথ্য মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগটা নেবে আমি আশা করি’।
আর সবার অংশগ্রহণে একটা প্লাটফর্ম এর ওপর গুরুত্ব দিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান। বললেন, ‘ প্যাভিলিয়ন না নিলেও যদি আমরা বুথ নেই, যেমন ব্রাজিলের বুথ আছে, তারা সেখানে তাদের সিনেমা শো কেস করেছে, আমরা যদি সবাই মিলে আমাদের সিনেমাগুলোকে শো কেস করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের ছবির বিদেশে বাজারজাতের সম্ভাবনা তৈরী হয়। এবং আবারও বলছি, যদি একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা যায় তাতে আমার প্রতিষ্ঠানও ভূমিকা রাখবে’।
সব মিলিয়ে দারুণ আশাবাদী নির্মাতা সামিয়া জামান। ঢাকা টু কান প্রকল্পের সহায়তা প্রতিষ্ঠান, ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, সংক্ষেপে আইইএফটিএ-র সভাপতি সামিয়া সারা বাংলাদেশের ছবিকে ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানালেন। বললেন, ‘বার্লিন, কান, টরেন্টো কিংবা আমাদের দেশের পাশেই গোয়া ফিল্ম বাজার কিংবা বুসান-সব জায়গায় আমাদের যেতে হবে। বলতে হবে জোর গলায়, বাংলাদেশে ছবি হয়, ফিকশন হয়, শর্ট ফিল্ম হয়, ডকুমেন্টারি হয়, বাংলাদেশে আরো ভালো ছবি হবে। আমার মনে হয়, আমরা একটা ‘টিপিং পয়েন্ট’ বা একটা জায়গায় পৌঁছেছি। তাতে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে। এরমধ্যেই একটি ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশকে ফোকাস করা হয়েছে। এমন করেই আরো বড় জায়গায় আমরা পৌঁছাবো। আমি আশাবাদী’।
পুরো বৈঠকেই এই আশাবাদের কথা বলেছেন সবাই।
সারাবাংলা/পিএম
আরও পড়ুন : ‘মিশন এক্সট্রিম’ শেষ করলো দুবাই অপারেশন