কয়েক সিঁড়ি উঠলেই ওয়াইফাই: কী বলতে চাইছে প্যারাসাইট?
২৬ মে ২০১৯ ১৬:১৯
ম্যাট্রিক্স মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। ১৯৯৯ সালে প্রথম, ২০০৩ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তি মুক্তি পায় ছবিটির।
আরও অনেক ছবির মতো ম্যাট্রিক্স ছবির শুটিং হয়েছিল গোপনীয়তায়। কিন্তু আমেরিকান নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজউইক’-এর সাংবাদিক ডেভিন গর্ডন অনুমতি নিয়েই ছিলেন শুটিং স্পটে।
ছবি মুক্তির পর ডেভিন গর্ডনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ম্যাট্রিক্স নিয়ে এত আলোচনা কেন? ছবিটি কী সিনেমার পরবর্তী সময়কে পরিবর্তন করতে পারবে? ডেভিন গর্ডন বলেছিলেন, ‘না বুঝলে মনে হবে ম্যাট্রিক্স একটা অ্যাকশনধর্মী সিনেমা। সাধারণত অ্যাকশন ছবিতে ভালো গল্প থাকে না। তবে ম্যাট্রিক্স অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত গল্প, সঙ্গে অ্যাকশনও যুক্ত হয়েছে।’
‘প্যারাসাইট’ ছবির পাম ডি’অর জেতার পর এমনটাই মনে হচ্ছিল। ৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে ছবিটি। এর পরিচালক ও গল্পকার বং জুন-হো। ছবিটি দক্ষিণ কোরিয়ার।
সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, বং জুন-হো এমন একটি ছবি বানিয়েছেন যা গরিব ও ধনির গল্প বলে। কিন্তু তার গল্প বলার ঢং এবং দেখানোর কৌশল এতটাই নান্দনিক ও স্বকীয় যে—বং নিজেই একজন ঘরানা হয়ে গেছেন।
বিবিসির বিনোদন প্রতিবেদক এমা জোন্স, তিনি এবার ছিলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে। একটি রিভিউতে তিনি বলেছিলেন- তারান্তিনো বা আলমোদোভারের মতো বংও নিজের একটি স্টাইল তৈরি করে ফেলেছেন।
‘প্যারাসাইট’-এর বাংলা অর্থ পরজীবী। ছবিটিকে বলা হচ্ছে ব্ল্যাক কমেডি ঘরানার। মূলত মানুষের শ্রেণী-বিভেদ নিয়ে যে ভাষ্য সমাজে বিরাজ করে, তার একটি নান্দনিক চলচ্চিত্র রূপ ‘প্যারাসাইট’।
গল্পটি শুরু হয় এক পরিবারের চার সদস্যের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখানোর মধ্য দিয়ে। মা-বাবা-ভাই-বোনের এই পরিবারটি বাস করে দরিদ্র সীমার নিচে। তারা পিৎজার বাক্স বানায়। তবে এই কাজের মাধ্যমে তাদের উন্নতি হয় না।
পরিবারে অভাব থাকলে নাকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মিল থাকে না। কিন্তু দ্য গার্ডিয়ানের পিটার ব্র্যাডশো তার রিভিউতে বলেছেন, চরিত্রগুলোকে বং সাজিয়েছেন মানবিক গুণ, সহযোগিতাপূর্ণ ও বিশ্বস্ত করে।
একদিন হঠাৎ করেই পরিবারটির ছেলে সন্তান আবিষ্কার করে, বেজমেন্টে তাদের বাসা থেকে কয়েকটি সিঁড়ি উপরে উঠলেই মোবাইলে পাওয়া যায় ওয়াইফাই কানেকশন। একটু উপরে উঠলেই সুবিধা পাওয়া যায়, সমাজের এই রীতি এখানে পুরোপুরি স্পষ্ট।
আরও পড়ুন : রাবেয়া খাতুনের গল্পে আবুল হায়াতের ঈদ নাটক
গরিব হলেও পরিবারটির ছেলে-মেয়ে দুটি মেধাবী। ভালো থাকার চেষ্টা করতে গিয়ে ছেলেটি পেয়ে যায় ছাত্র পড়াবার কাজ। যে ঘরে ছেলেটি পড়াতে যায়, তারা অনেক টাকাওয়ালা পরিবার। একসময় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সন্তানটিও সেই বাড়িতে চিত্রাঙ্কণের শিক্ষক হিসেবে কাজ পায়।
ভাই-বোন দুজনেই বুঝতে পারে তারা নিজেদের ঘরের চেয়ে টাকাওয়ালার বাড়িতে থাকতেই বেশি পছন্দ করছে। কারণ তারা ওই বাড়িতে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা পায়।
এতক্ষণ ঘটনা সাধারণ মনে হলেও বং-এর নির্মাণ ও গল্প সাধারণ নয়। একটা সাধারণ, এমনকি কমেডি গল্পকে ধীরে ধীরে ট্র্যাজেডিতে রূপ নেওয়ানোর অসীম দক্ষতা রয়েছে পরিচালকের। ‘প্যারাসাইট’ ছবিতে তিনি তাই করেছেন। যেমনটি করেছিলেন তার আগের ছবি ‘ওকজা’, ‘স্নোপিয়েসার’ এবং ‘দ্য হোস্ট’ ছবিতে।
‘প্যারাসাইট’ ছবির পোস্টার লক্ষ্য করলে একটা দ্বিধায় পড়তে হয়। দেখা যায় যে, চারটি মানুষ কিন্তু তাদের মধ্যকার সম্পর্ক সেখানে অব্যক্ত এবং সবার চোখে ভিন্ন রঙের বারকোড। পোস্টারের বাইরে থেকে একাধিক পা ঢুকে গেছে পোস্টারের মধ্যে। এর অর্থ বুঝতে হেলে দেখতে হবে ছবিটি।
সারাবাংলা/পিএ/এমআই
আরও পড়ুন :
. কানের সেরা ছবি কোরিয়ার প্যারাসাইট, তারান্তিনো ফিরলেন খালি হাতে
. ১২০তম নজরুল জয়ন্তীতে দিনভর নজরুল বন্দনা
. চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি: মেয়াদ শেষ, নেই নির্বাচনের তোড়জোড়
. স্বজনপ্রীতি চাপ বা বিনিময়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন: নাসির উদ্দীন ইউসুফ