পরিচালকের পেছনে লেগে সিনেমা ধ্বংস করা ঠিক না: মালেক আফসারী
১২ জুন ২০১৯ ১৪:১৭
চলচ্চিত্র পরিচালক মালেক আফসারীকে নিয়ে বিতর্ক যেনো থামছেই না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সেখানকার চলচ্চিত্র গ্রুপগুলোতে তাকে নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। অভিযোগ, তিনি তার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পাসওয়ার্ড’ নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।
ছবির শুটিংয়ের শুরু থেকে মালেক আফসারী বলে আসছিলেন ‘পাসওয়ার্ড’ মৌলিক ছবি। তামিল–তেলেগু ছবির সাথে ছবির কোনো মিল নেই। কেউ নকল ধরিয়ে দিতে পারলে তাকে দশ লাখ টাকা দেয়া হবে। কিন্তু ছবি মুক্তির পর দেখা গেলো ছবিটি কোরিয়ান ছবি ‘দ্য টার্গেট’ এর ফ্রেম টু ফ্রেম নকল। বিষয়টি নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রচার করে।
কিন্তু ছবির নকল ধরা পড়ায় মোটেও চিন্তিত নন মালেক আফসারী। বরং আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন সারাবাংলার সাথে আলাপকালে। পাল্টা অভিযোগ করলেন, টেলিভিশনে প্রচারিত ওই প্রতিবেদনে তার অসম্পূর্ণ কথা প্রচার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিজেদের তৃতীয় ছবির দ্বিতীয় লটের কাজে ব্যস্ত সিয়াম-পূজা
মালেক আফসারীর ভাষায়—আমি বলেছি, আমার ছবি যদি ‘ডায়নামিক’ এবং ভারতের ২৭টি ভাষার ছবির সাথে কেউ মিলিয়ে দিতে পারে তাহলে তাকে দশ লাখ টাকা পুরস্কার দেবো। কিন্তু তারা শুধু দশ লাখ টাকার কথাটি রেখে বাকি কথাগুলো কেটে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাকে ছোট করার জন্য, হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এমন কাজটি করা হয়েছে। এতে করে যে আমার ক্ষতি করা হচ্ছে তা নয়। দেশের ছবির ক্ষতি করেছে তারা। এটা খুব লজ্জাজনক।
ভারতীয় কোনো ছবির সাথে মিল পাওয়া যায়নি। কিন্তু কোরিয়ান ছবির সাথে তো মিল পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে এখানেও মালেক আফসারী আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। তিনি বলেন, কোরিয়ান ‘দ্য টার্গেট’ ছবিটি এক ঘন্টা ৩৭ মিনিটের ছবি। আর ‘পাসওয়ার্ড’ দুই ঘন্টা ১৭ মিনিটের ছবি। কোরিয়ান ছবিটিতে কোনো নায়িকা নেই। আমার ছবিতে নায়িকা আছে। তাছাড়া ওই ছবিতে ‘পাসওয়ার্ড’ নিয়ে কোনো গল্পই নেই। কোরিয়ান ছবিটিতে পুলিশ অফিসার ভিলেন। আমারটায় একজন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ভিলেন। শুধু তাই নয় আমার ছবির ভিলেনের চাল চলনও সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কিন্তু ‘দ্য টার্গেট’ ছবির সাথে আপনার ছবির অনেক দৃশ্যই মিলে যায়। এরপরও ছবিটিকে মৌলিক বলা কতটা যৌক্তিক— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম মিলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এটা নিয়ে যারা আলোচনা করে তাদেরকে আমি বেকুব বলব। কারণ, আমার ছবি দেশের পঞ্চাশটি সিনেমা হলের তালা খুলে দিয়েছে। এটা একটি ভালো লক্ষন। সিনেমা শিল্পের সাথে জড়িত সবার সংসার আছে। আমার ছবির কারণে তাদের কিছু আয় হয়েছে।
আফসারী আরও যোগ করেন, আমি সিনেমার মাধ্যমে বিনোদন দিচ্ছি। তারা সময় খরচ করে আমার ছবি দেখছে। যারা সিনেমা দেখছে তারা কোনো ক্রাইম করছে না। এমনকি পরিবার পরিকল্পনায় বড় প্রভাব ফেলছে। সিনেমা দেখার সময়টায় কোনো ধর্ষণ হচ্ছে না। সুতরাং যারা এসব বাকওয়াজ নিউজ করছেন তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। যারা দেশ লুটপাট করছে তাদের নিয়ে বেশি বেশি প্রতিবেদন করা উচিত। পরিচালকের পেছনে লেগে সিনেমার ধ্বংস করা ঠিক না।
মালেক আফসারী নিজেই স্বীকার করে নেন, তিনি মৌলিক ছবি নির্মাণ করেন না। বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখে সেখান থেকে কাহিনী নিয়ে নিজের মতো করে ছবি বানান। তার মতে, মৌলিক ছবি বানিয়ে প্রযোজককে পথে বসানো ঠিক না। তিনি বলেন, আমি কখনোই মৌলিক ছবির পরিচালক না। তবে আমি পরিচালক। আমার নীতি থেকে বের হতে পারব না। যারা মৌলিক ছবি বলে চিৎকার করে তারা আমার ছবি না দেখে মৌলিক ছবি দেখুক। আমার কোনো আপত্তি নেই। এই যে, এবার ঈদে আরও দুটি মৌলিক ছবি মুক্তি পেয়েছে। কই সেই ছবি তো কেউ দেখছে না। আমার ছবি দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই শ এর বেশি হলে মুক্তি পাচ্ছে। অন্য মৌলিক ছবিটি নামিয়ে দিয়ে আমার ছবি চালানো হবে। তাহলে কোন ছবির জোর বেশি—আপনি বলুন।
আফসারী আরও বলেন, ‘নোলক’ ছবি জাজ মাল্টিমিডিয়া পরিবেশনা করেছে। এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্ববধায়নে ২০টি সিনেমা হল আছে। অথচ তারা আমার ছবিকে ১২টি সিনেমা হল দিয়েছে, আর ‘নোলক’কে দিয়েছে মাত্র ৮টি সিনেমা হল। আমার ছবিকে প্রথমে ১৫টি সিনেমা হল দিয়েছিল। কিন্তু প্রযোজক তিনটি ছেড়ে দিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএম
আরও পড়ুন : জুলাইতে মুক্তি পাচ্ছে আমদানিকৃত ছবি ‘বচ্চন’