রুগ্ন হচ্ছে দুর্বল এফডিসি
২৭ জুন ২০১৯ ১৮:৪৬
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) যেন এক দুঃখ সাগর। সেই দুঃখের সাগরে নোনা জল বাড়ছে হু হু করে। বিষাদের স্রোত ফণা তুলছে ফোঁস ফাঁস করে। অতীত ঐতিহ্য বিপন্ন হয়েছে বর্তমান বিলাপে। জমছে পরিকল্পনার ওপর পরিকল্পনা। হচ্ছে, হবে করে দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।
গত কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) একাধিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সেইসব কর্মপরিকল্পনাগুলো ঠিকমতো বাস্তবানের অভাবে খাদের কিনারায় পা দোলাচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গেল ১৭ জুন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। স্বাক্ষরিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির কার্যকরিতা জুলাই ১, ২০১৯ থেকে জুন ১, ২০২০ পর্যন্ত। এই কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এফডিসি’র সাম্প্রতিক অর্জন, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য প্রধান অর্জনসহ বেশকিছু বিষয় তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন : অক্সফোর্ডের ডক্টরেট ডিগ্রী পেলেন রাহাত ফতেহ আলী খান
চুক্তিতে এফডিসি’র উন্নয়নে মূলত দুটি বিষয়কে চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে। প্রথমটি এফডিসি’র যন্ত্রপাতি অকার্যকর হয়ে পড়ার কারণে নতুন প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কাজ অব্যহত রাখা।
দ্বিতীয়ত চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে যাওয়ায় এফডিসি অর্থ সংকটে পড়েছে। সরকার থেকে ঋণ গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট দূর করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা উল্লেখিত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এফডিসি’র যন্ত্রপাতি অকার্যকর। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নতুন যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এর আগে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ করলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। কেনো করা হয়নি আমি বলতে পারব না। কারণ জানতে আমাকে সমস্যার গহীনে ঢুকতে হবে। পুরো বিষয় জানতে হবে।’
আর্থিক সংকট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চরম অর্থ সংকটের মধ্যে এফডিসি দিন পাড় করছে। এমনকি কর্মচারির বেতন দেয়াও কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এফডিসিতে এখন প্রয়োজন পাঁচ শ’র মতো কর্মকর্তা–কর্মচারি। কিন্তু অর্থের অভাবে লোক নিতে পারছে না সংস্থাটি। মাত্র দুই শ’র মতো লোকোবল দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।’
সরকার সামান্য কিছু ভর্তুকি দিচ্ছে বলে এখন অব্দি টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত নিয়ম হলো, কর্পোরেশনগুলো নিজস্ব আয় দ্বারা পরিচালিত হবে। কিন্তু এফডিসি সেরকম আয় করতে পারছে না। কারণ সিনেমা নির্মাণ কমে আসছে। এফডিসির আয়ের উৎস সিনেমা নির্মাণ। এখানকার সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে যত সিনেমা নির্মিত হবে তত আয় হবে।
কর্মপরিকল্পনায় এক বছরে ৩০টি চলচ্চিত্র, ৬০টি বিজ্ঞাপন ও ২০টি নাটক/টেলিছবির শুটিংয়ে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ গত দুই বছরে যথাক্রমে ৪৭টি ও ৩৬টি চলচ্চিত্র এবং ৪০টি ও ৬৫টি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে সেবা প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে নতুন কর্মপরিকল্পনায় চলচ্চিত্র সেবা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে।
লক্ষ্যমাত্রা কম ধরার কারণ হিসেবে সিনেমা নির্মাণ কমে যাওয়াকে দুষলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সিনেমা নির্মাণ কমে যাচ্ছে। এখন বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরেও তো লাভ হবে না। আমরা চেষ্টা করছি সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা বাড়াতে। সেজন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এফডিসির আধুনিকায়ন, ফিল্ম সিটি নির্মাণ, ই–টিকেটিং প্রক্রিয়া চালু হবে শিগগিরই। এসব করতে সময় প্রয়োজন। সরকারও চাইছে সিনেমার বর্তমান পরিস্থিতি বদলে ফেলতে। এফডিসির সব সমস্যার কথা হয়ত সরকার জানেও না। জানার কথাও না। আমরা চেষ্টা করছি সেসব সম্পর্কে অবগত করে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নেয়া সব উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে।’
এদিকে কর্মসম্পাদন চুক্তিতে কয়েকটি ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা উল্লেখ আছে। সেগুলো হলো—চলচ্চিত্র নির্মাণ সেবা অধিকতর গণমুখী করা। ঢাকার অদূরে কবিরপুরে বিশ্বের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা। এফডিসিতে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স এবং ভাষানটেকে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ। সেন্ট্রাল সার্ভারের মাধ্যমে চলচ্চিত্র মুক্তি, ই–টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করা এবং সিনেমা হলসমূহ ডিজিটাল করা। সবশেষ, যুগোপযোগী চলচ্চিত্র উৎপাদন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ
আরও পড়ুন :
. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন ২৬ জুলাই
. আতঙ্ক ছড়াতে আবারও ঢাকায় আসছে অ্যানাবেল!
. তিন উৎসবে ‘যুদ্ধটা ছিল স্বাধীনতার’
. ৫ দিনেই ১০৫!
. রূপালী পর্দায় আসছে সৌরভ গাঙ্গুলির লর্ডস জয়ের গল্প
. সালমানের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ বন্ধু কে?
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএফডিসি