আজ শিল্পকলায় স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’
২২ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:৫৮
নৃত্যনাট্য মূলত গীতিনির্ভর নাট্যধর্মী নৃত্য। নানা কাহিনী অবলম্বনে এ নৃত্য নির্মিত হয়। নৃত্য-গীতসহ নাটকীয়তা আছে বলেই একে নৃত্যনাট্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আধুনিক সময়ের নৃত্যনাট্য বলতে যা বোঝায় তার স্রষ্টা একজনই— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারই সৃষ্ট চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, মায়ার খেলা, চণ্ডালিকা, শাপমোচন, ভানুসিংহের পদাবলী, তাসের দেশের মতো নৃত্যনাট্য এখনো বঙ্গসংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ।
সময়কাল ১৯৩৬। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করলেন ‘চিত্রাঙ্গদা’। মূল রচনাটি ছিল নাট্যকাব্য। কিন্তু পরে এই কাব্যনাট্য রূপ নেয় নৃত্যনাট্যে। আর উপাখ্যানের উৎস মহাভারত। যে গল্প রয়েছে মহাভারতের আদি পর্বের ‘অর্জুন বনবাস পর্বাধ্যায়’-এ। যদিও রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদায় সে কাহিনী অনেকটায় গৌণ। তিনি তার কাব্যনাট্যে প্রধান উপজীব্য করলেন নায়িকার হৃদয়দ্বন্দ্বকেই। ম্লান করে রাখলেন স্বয়ং অর্জুনকেও।
কবিগুরু লিখলেন ‘মণিপুররাজের ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে শিব বর দিয়েছিলেন যে, তার বংশে কেবল পুত্রই জন্মাবে। তৎসত্ত্বেও যখন রাজকুলে চিত্রাঙ্গদার জন্ম হলো, তখন রাজা তাকে পুত্ররূপেই পালন করলেন। রাজকন্যা অভ্যাস করলেন ধনুর্বিদ্যা; শিক্ষা করলেন যুদ্ধবিদ্যা, রাজদণ্ডনীতি। অর্জুন দ্বাদশবর্ষব্যাপী ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে ভ্রমণ করতে এসেছেন মণিপুরে। তখন এই নাটকের আখ্যান আরম্ভ।’
পুরুষবেশী চিত্রাঙ্গদা মৃগয়ায় গিয়ে সাক্ষাৎ পান ব্রহ্মচারী অর্জুনের। অর্জুনকে প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু কুশ্রী চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন অর্জুন। তখন চিত্রাঙ্গদা মদনের তপস্যা করে রূপবতী হলেন এবং মিলিত হলেন অর্জুনের সঙ্গে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে অর্জুনের রূপতৃষ্ণায় ক্লান্তি এলো। চিত্রাঙ্গদার পরিচয় পেয়ে তিনি তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করলেন। সুশ্রী চিত্রাঙ্গদাও তখন রূপের খোলস খসিয়ে ফেলে সত্যরূপে অর্জুনের কাছে ধরা দিলেন।
চিত্রাঙ্গদার মূল কাব্যনাট্যকে উপজীব্য করে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের প্রশংসিত প্রযোজনা ‘চিত্রাঙ্গদা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরায়ত সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’-র গবেষণাগার নাট্যরীতিতে নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। বাইরের রূপ নয়, মানুষের আপন অন্তরের মাঝে লুকিয়ে থাকা যে ব্যক্তিত্ব আর সৌন্দর্যবোধ তার উপলব্ধি ও হৃদয়দ্বন্দ্বকে নিয়েই এই প্রযোজনা।
‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনার গ্রন্থিকরা হলেন সোনালী, জুয়েনা, শিশির, শ্যামল, অর্ক, হ্যাপী, সুমাইয়া, সামাদ, ঊষা, সম্রাট, আলী, বিপুল, অনিন্দ্য, অমর, মাসুদ, সুকুমার, শঙ্কর প্রমুখ।
পৌরাণিক কাহিনীর আড়ালে যেন এ কালেরই নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মানাবস্থানের প্রেরণারূপে ‘চিত্রাঙ্গদা’ আজ (শুক্রবার) উপস্থাপিত হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায়।
প্রসঙ্গত, স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি ২০১১-এ সার্ধশত রবীন্দ্রবর্ষ উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষযক মন্ত্রণালয়ের অনুদানে নির্মিত হয়। আজ প্রযোজনাটির ৭৯তম মঞ্চায়িত হবে।