যে প্রেম মর্ত্যে মিলায়
৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৭:৩৮
তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
অভিনয়ের খাতিরে প্রথম ঘরের বাহির। ক্যামেরার সামনে প্রণয়, চোখেচোখ স্থির। শ্যুটিং শেষে অবকাশ, সন্ধ্যের আকাশ। সেই প্রথম জোৎস্না দেখা, জীবনকে নতুনভাবে শেখা। সঙ্গে রাত্রিযাপন, হাতধরে বহুদূর যাওয়ার স্বপন। পর্দা থেকে নেমে এসে বাস্তব জীবনের প্রেম, এরপর বিয়ে। এরপর বদলানো সময়কে সঙ্গে নিয়ে, প্রথম জোৎস্না দেখার স্মৃতিতে হাত বুলায় বিষাদের শব। প্রথম রাত্রিযাপনের আলোচনায় উঠে সন্দেহের উৎসব।
মিডিয়াতে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। বহু বিখ্যাত জুটি রয়েছেন যাদের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল মঞ্চের আলো-আঁধারিতে। সেই প্রেম তারা টেনে নিয়েছেন জীবনের শেষ অবধি। প্রণয়-অভিনয়ের দুর্দান্ত মিশেলে তারা উপহার দিয়েছেন দারুণ সব গল্প-গান-ছবি। তবে এর বিপরীত চর্চাও আছে। প্রেক্ষাগৃহের নরম আলোতে শুরু হওয়া অনেক সম্পর্ক প্রথমে দারুণ আলোচনার জন্মদিলেও এর সমাপ্তি আসে নিদারুণ বিদ্বেষে। এই ভাঙন প্রক্রিয়া পূর্ণ করতে আদালত পর্যন্তও যেতে হয় অনেককে। যার সর্বশেষ উদাহারণ শাকিব-অপু জুটি।
রূপালী আলোর ‘নকল’ দুনিয়ায় এমন বিচ্ছেদের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত কিংবা আমেরিকাতেও সেলিব্রেটিদের সম্পর্কের চিত্রটা একই রকম। অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে বেশির ভাগ সম্পর্কই তাসের ঘরের মতো সামন্যতেই ভেঙে পড়ে। বালির বাঁধে গড়া এসব সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কালে দেখা যায় তারকাদের প্রসাধনীর আড়ালে থাকা কদর্য রূপ।
কেন ভাঙে এমন সম্পর্ক? স্টারডম নাকি অন্যকিছু? এই প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া হাবিব বলেন, ‘এই ভাঙনের কারণ স্টারডম না। সংসার বা সম্পর্ক আসলে তাদেরই ভাঙে যাদের সোশ্যাল এক্সপোজার ও এক্সপেকটেশন বেশি। এটা স্টার বলে কথা না, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই দুটি ব্যাপার থাকলে সংসার ভাঙতে পারে। এখন এটা বলা যেতে পারে স্টারদের সোশ্যাল এক্সপোজার সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি। কিন্তু এ কারণেই যে তাদের সম্পর্ক ক্ষণস্থায়ী হচ্ছে তা কিন্তু নয়।’
তারকাদের সম্পর্কের ভাঙন নিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন খান বলেন, ‘স্টাররা সব সময় পাবলিক ওরিয়েন্টেড, কাজের প্রশংসাটা তারা চায়। দর্শকদের হাত তালিটা যেমন সে চায়, তেমনি নিজের পরিবারেও প্রশংসিত হতে চায়। এখন ব্যক্তিগত সম্পর্কে অনেক সময় সে ঠিকভাবে প্রশংসিত হয় না। তখন যে ব্যক্তি তাকে বেশি মনোযোগ দেয় সে তার দিকে বেশি ঝুকে পড়ে। শুরু হয় ভাঙন।’
চলতি বছরেই সংসার ভেঙেছে শখ, সারিকা, মিলা, তাহসান, মিথিলা, প্রসূন আজাদ, অর্চিতা স্পর্শিয়া, নোভা, হাবিব ওয়াহিদ, সালমা ও বাঁধনের মতো তারকাদের। এদের মধ্যে লাক্স তারকা বাঁধনের ডিভোর্সের বিষয়টি নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছে। বিচ্ছেদের পর সন্তানের অধিকার পেতে স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের বিরুদ্ধে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে বাঁধনকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নাট্যনির্মাতা জানান, অবিশ্বাস ও মতবিরোধের কারণেই তারকা যুগলদের এমন করুণ বিচ্ছেদ ঘটছে। তিনি বলেন, ‘অনেক নারী তারকা লোভে পড়ে ব্যবসায়ীদের বিয়ে করছেন। অনেকে আবার জুটি বেঁধে কাজ করবেন আশা করেও অসম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। এখানে প্রেম বা টান না থাকলেও তারা সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। পরে অবিশ্বাস, সন্দেহ, স্বার্থপরতাসহ নানা কারণে তারা বিচ্ছেদ ঘটাতে বাধ্য হচ্ছেন।’
বিচ্ছেদ কেবল তারকাদেরকেই নয়, প্রভাবিত করে করে সাধারণ মানুষকেও। এমন বিচ্ছেদের ঘটনা সাধারণ মানুষকে কতটা প্রভাবিত করে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের প্রভাষক রাউফুন নাহার বলেন, ‘তারকাদের ঘন ঘন বিয়ে করা বা ভেঙে যাওয়া বহুকাল ধরেই হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেয় কারণ এসব ব্যাপারে এদের অবচেতন মনের একটা পারমিশন থাকে। সমাজ এটা মেনে নিয়েছে যে তারকাদের বিয়ে বা সম্পর্ক ভাঙা বড় কোনো ঘটনা নয়। তবে এর প্রভাব তরুণদের উপর পড়তে পারে। তরুণরা পছন্দের তারকাকে অনুকরণ করতে পছন্দ করে। নিজেদের সম্পর্কের বেলায় তারা হয়তো ভাববে তারকাদের সম্পর্ক যদি ভাঙতে পারে তাহলে আমাদের ভাঙলে সমস্যা কী?’
সারাবাংলা/তুসা/পিএ