Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিল্পী ইরফানকে কি হারানো যায়!


২৯ এপ্রিল ২০২০ ১৫:১৪ | আপডেট: ১০ মে ২০২০ ১৩:৪৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বড় অসময়ে চলে গেলেন কিংবদন্তি বলিউড অভিনেতা ইরফান খান। বুধবার (২৯ এপ্রিল) চলে গেলেন অনন্ত ঘুমের রাজ্যে। অথচ ৫৪ বছর কি একটা মানুষের যাওয়ার বয়স? না। কিন্তু প্রকৃতি যে তাদের প্রিয় সন্তানদের বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখতে পছন্দ করে না।

শরীরে ক্যান্সারের অস্তিত্বের খবর জানার পর থেকে লড়াইয়ের একের পর চেষ্টা করেছেন ইরফান খান। সবাইকে জানিয়েছেন সে লড়াইয়ের কথা। কিন্তু কি পারলেন?

গেল মার্চে ইরফান খান অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘আংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পায়। কিন্তু তখন যে তিনি ক্যান্সারের সাথে লড়ছেন তিনি। তাই ছবির প্রচারণায় সময় দিতে পারেননি। তারও মন খারাপ হয়। ভক্তদের উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন এক ভিডিও বার্তা।

বিজ্ঞাপন

‘হ্যালো, ভাই এবং বোনেরা। আমি তোমাদের সাথে থাকি কিংবা না থাকি। এ ছবি, আংরেজি মিডিয়াম, আমার জন্য খুবই আলাদা। যেভাবে একাগ্রতা দিয়ে আমরা ছবিটি বানিয়েছি, ঠিক তেমনভাবে আমি এটির প্রচারণাও চালাতে চাই। কিন্তু কিছু অনাহুত অতিথি বাসা বেঁধেছে আমার শরীরে। যাদের নিয়ে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আমি সবসময় তাদের সম্পর্কে তোমাদের জানাতে চাই। তারা বলছে, যখন জীবন তোমাকে লেবু দেয়, তখন তুমি লেমনেড বানাও। এটা শুনতে খুব ভালো শুনায়। কিন্তু যখন জীবন তোমাকে লেবু সরবরাহ করে, তখন শরবত বানানো সত্যিই কঠিন।’

হয়তো সে দিন তার কোন ভক্তও চিন্তা করতে পারেনি এটিই হবে তার শেষ বার্তা। কিন্তু জীবন বড় কঠিন। ইরফান সে কঠিনকে ভালোবেসে ছিলেন। তাই তো শরীরে ক্যান্সারের উপস্থিতি ধরা পড়ার পর নিজেই অকপটে কী নিদারুণ বাক্যে জানিয়েছিলেন সাংবাদিককে।

“বেশ কিছুদিন হল জানতে পেরেছি আমার হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রিন ক্যান্সার হয়েছে। আমার শব্দকোষে একেবারে নতুন এই শব্দবন্ধ। জানতে পেরেছি এই রোগ এতটাই বিরল যে এর নির্দিষ্ট কোনও চিকিত্‍সা পদ্ধতিও নেই। অতএব এক অনির্দিষ্ট ট্রায়াল অ্যান্ড এরর গেম-এর মধ্যে দিয়ে এগিয়েছি আমি। এতদিন আমি কিন্তু এক অন্য দুনিয়াতেই বুঁদ হয়ে ছিলাম; অনেক স্বপ্ন, পরিকল্পনা, উচ্চাকাঙ্খার ডানায় ভর দিতে দ্রুত গতির ট্রেনে যেন সওয়ার ছিলাম।

হঠাৎ‍ই ছন্দপতন।

যেন কোনও টিকিট চেকার এসে কাঁধে টোকা মেরে জানিয়ে গেলেন আমার সফর শেষ, এবার নেমে যেতে হবে। এদিকে আমি হতবাক। তর্ক করছি, না, এটা আমার স্টেশন নয়। তবুও তিনি বলে চলেছেন—হ্যাঁ, এখানেই নামতে হবে। এমনই হয়তো হয় জীবনে চলার পথে। ঘটনার আকস্মিকতায় অনুভব করলাম এক চরম সত্যি।

এই বিশাল বিশ্বের ভাসমান জীবন স্রোতে মানুষ শুধুমাত্র এক শক্তিহীন কর্কের থেকে বেশি কিচ্ছু নয়। তবুও আমরা সেই জীবনকেই নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অসুখের কথা জানার পরে হাজার অনিশ্চয়তার মধ্যেও ছেলের কাছে বার বার বলেছি ভয় এবং অনিশ্চয়তা যেন আমাকে দমিয়ে দিতে না পারে। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাত্‍ করেই চুড়ান্ত যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করল। কোনও সান্ত্বনা, কোনও প্রেরণাই কাজ করছিল না। ঈশ্বরের থেকেও যন্ত্রণা বড় হয়ে উঠেছিল।

জানেন, আমার হাসপাতাল ছিল ক্রিকেটের মক্কা লর্ডস স্টেডিয়ামের বিপরীতে। আমার স্বপ্নের মক্কা; এত যন্ত্রণা, এত কষ্টের মধ্যেও একদিন হাসপাতালের ঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে হঠাত্‍ই এক অন্যরকম উপলব্ধি হল। জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে শুধু এক রাস্তার ফারাক। প্রথমবার বুঝলাম মুক্তির স্বাদ কীমনে হল এই প্রথম যেন জীবনকে সঠিক অর্থে চিনতে পারলাম।

ঠিক করলাম, না হেরে যাব না। লড়াইটা আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে।’

লড়াইয়ে হয়তো ক্যান্সার ব্যক্তি ইরফানকে হারিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শিল্পী ইরফানকে হারাবে সাধ্য কার?

ইরফান খান ক্যান্সারের সাথে লড়াই মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর