৫৫ বছরের বন্ধুকে বিদায় দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন আবুল হায়াত
১২ অক্টোবর ২০২১ ১৫:১৮
দুজনেই বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তি—ড. ইনামুল হক ও আবুল হায়াত। তাদের বন্ধুত্ব ৬ দশকের। বন্ধুত্ব, খ্যাতি, পরিবার সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে ড. ইনামুল হক চলে গেছেন না ফেরার দেশে। দীর্ঘদিনের সে বন্ধুকে শেষ বিদায় দিতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে নাট্যজন ও শিক্ষক ড. ইনামুল হকের মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আনা হয়। সেখানে প্রিয় বন্ধুকে স্মরণ করতে গিয়ে আবুল হায়াত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব ৫৫ বছরের। আনন্দের এই সংখ্যাটি এখন শুধুই শোকের।’
১১ অক্টোবর সকালে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ড. ইনামুল হক। এরপর বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।
ড. ইনামুল হকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলার মটবী এলাকায়। তার বাবা ওবায়দুল হক ও মা রাজিয়া খাতুন। ফেনী পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি লাভ করেন ইনামুল হক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। নটরডেম কলেজে পড়াশোনাকালীন সময়েই তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তিনি ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন।
১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসেই ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র যাত্রা শুরু হয়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। নাটকটি ছিল আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। এরপর দলটির হয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুল দীনের সারা জীবন’সহ আরও বহু নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সালের তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। নিজ দলের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। ১৯৮৩ সালে লেখা হয় নাটকটি। ঢাকার মঞ্চে বেশ আলোচিত নাটক এটি।
এ পর্যন্ত টেলিভিশনের জন্য ৬০টি নাটক লিখেছেন তিনি। তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’ (মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’ ও ‘কে বা আপন কে বা পর’।
গুণী এই অভিনেতার পুরো পরিবার নাটকে সম্পৃক্ত। তার স্ত্রী লাকী ইনামও কিংবদন্তি অভিনেত্রী। মেয়ে হৃদি হক নির্দেশক এবং অভিনেত্রী। তার স্বামী অভিনেতা লিটু আনাম। ড. ইনামুলের অপর মেয়ে প্রৈতি হকের স্বামী সাজু খাদেম।
সারাবাংলা/এজেডএস