প্রশ্নবিদ্ধ পুরস্কার; জটিলতা বাড়ছে
২২ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:২৬
প্রতীক আকবর ।।
আবারও প্রশ্নের মুখে দেশীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। ২০১৬ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পর শুরু হয় বিতর্ক। শ্রেষ্ঠ নৃত্যপরিচালক বিভাগে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত, জাজ মাল্টিমিডিয়া ও কলকাতার এসকে মুভিজ প্রযোজিত ‘নিয়তি’ সিনেমার নৃত্য পরিচালক হাবিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিজয়ী নৃত্যপরিচালক হাবিব বলছেন তাকে যে ছবির জন্য পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই ছবিতে তিনি কাজই করেননি।
সারাবাংলার সাথে আলাপচারিতায় হাবিব বলেন, ‘চলচ্চিত্রে যারা কাজ করেন সবারই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্ন থাকে। আমিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে চাই। কিন্তু আমি এই পুরস্কার নিতে পারবো না। কারণ যে কাজের জন্য আমাকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে, আমি সেই কাজ-ই করিনি।’
বিষয়টি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র পরিবার। সেখানে চিত্রনায়ক ফারুক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও নৃত্যপরিচালক হাবিব উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হাবিব আরও জানান, চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে তিনি এ বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন।
এখন সবারই প্রশ্ন, তাহলে কি কাজ না করেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়ে যাবেন হাবিব? এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি শাহিন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা নথি নিয়ে কাজ করি। প্রথমত আমরা নথিতে যা পেয়েছি সেই অনুযায়ী কাজ করেছি। জনাব হাবিব বলছেন তিনি কাজ করেননি, কিন্তু কোথায় বলছেন? আমরা কেন তা জানতে পারছি না। আপনাদের মাধ্যমে তাকে জানাতে চাই তিনি যেন দ্রুত তথ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দেন। আমরা নিশ্চয়ই তা পর্যবেক্ষণ করে দেখব।’
অনেকেই এই ব্যাপারটিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুড়ি বোর্ডের দিকে আঙুল তুলছেন। জনসাধারণকে এ বিষয়ে পরিষ্কার করতে জুড়ি বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সবার কাছ থেকে সততা আশা করি। আর এ ব্যাপারে আমাদের অর্থাৎ জুড়ি বোর্ডের কাজ শেষ। এখন যদি কোনো পদক্ষেপ নিতে চায়, সেটি মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হবে।’
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নিয়তি’। সিনেমার বাংলাদেশের প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবদুল আজিজ এ নিয়ে কথা বলতে চাননি।
পরিচালক সমিতির সভাপতি ও জুরি বোর্ডের সদস্য মুশফিকুর রহমান গুলজার বিষয়টিকে জালিয়াতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়তি সিনেমার মূল নৃত্যপরিচালক একজন ভারতীয় কোরিওগ্রাফার। এ ছবিতে কাজের জন্য তার কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছিল না। তাই সেন্সর বোর্ডে যখন সিনেমা জমা দিয়েছে, তখন আসল কোরিওগ্রাফোরের নাম বাদ দিয়ে স্থানীয় হাবিবের নাম দিয়ে ছবিটি জমা দিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এটি এক ধরণের জালিয়াতি।
এদিকে নিয়তি সিনেমার পরিচালক জাকির হোসেন রাজুও নিশ্চিত করেছেন নৃত্যপরিচালক হাবিব তার ছবিতে কাজ করেননি।’
তবে যতই আলোচনা-সমালোচনা-নিন্দা হোক না কেন, মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ না জমা পড়লে হয়ত এই ফলাফল মেনে নিতে হবে সবাইকে। বিষয়টি শুদ্ধ করতে হাবিবকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ চূড়ান্ত হয়ে প্রকাশ হওয়ার আগে নৃত্যপরিচালক বিভাগে হাবিবের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন হাবিব নিজেই। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘অনেক দামে কেনা’ সিনেমায় নৃত্য পরিচালনার জন্য বিকল্প হিসেবে ছিল হাবিবের নাম।
এদিকে হাবিব জানিয়েছেন, ‘নিয়তি’ বাদ দিয়ে ‘অনেক দামে কেনা’ ছবির জন্য পুরস্কৃত করা হলে তিনি গ্রহণ করবেন। অন্যথায় তিনি পুরস্কার গ্রহণ করবেন না।
ছবি : আশীষ সেনগুপ্ত
সারাবাংলা/পিএ/পিএম
চলচ্চিত্র পরিবার জাকির হোসেন রাজু জাজ মাল্টিমিডিয়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়তি নৃত্যপরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার হাবিব