বরেণ্য চিত্রগ্রাহক এম এ সামাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
২৮ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৩৩
বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এর নির্মাতার জিজ্ঞেস করলে অনায়সে আপনারা বলে দিবেন চাষী নজরুল ইসলাম। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় এর চিত্রগ্রাহক কে ছিলেন? তাহলে হয়তো গুগলের আশ্রয় নিতে হবে। মানুষটির নাম এম এ সামাদ। তিনি একাধারে একজন চলচ্চিত্র গ্রাহক, নির্মাতা, প্রযোজক ও শিক্ষক। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মানুষটি চলে যাওয়ার ১৮ বছর পূর্ণ হবে।
এম এ সামাদ চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন ‘রূপবান’, ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘অপরাজেয়’, ‘ইন্ধন’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘আবির্ভাব’, ‘ভাগ্যচক্র’, ‘ওরা ১১ জন’ ও ‘সংগ্রাম’ চলচ্চিত্রে। তার শুরুটা হয়েছিলো বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক সাধন রায়ের সহযোগী হিসেবে। একক চিত্রগ্রাহক হিসেবে প্রথম নির্মাণ ‘অপরাজেয়’। নির্মাতা ও প্রযোজক হিসেবে নির্মাণ করেছেন ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘সূর্য সংগ্রাম’ ও ‘শিরি ফরহাদ’। পাশাপাশি তিনি ‘প্রসন্ন পানি’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেন। ১৯৮৭ সালে এম এ সামাদের সর্বশেষ ছবি ‘ধাক্কা’র কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়।
এম এ সামাদ হবিগঞ্জ জেলায় ১৯৩৭ সালের ৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বাবার ইচ্ছেতে স্নাতক শেষ করে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। ১৯৫৭ সালে সেখানে পড়তে যাওয়ার মাত্র ছয় মাস পরে ভর্তি হন চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টিংয়ে। কিন্তু সেখানেও ভালো না লাগায় ভর্তি হন ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের দ্য লন্ডন স্কুল অব ফিল্ম টেকনিকে চলচ্চিত্র প্রোডাকশন টেকনিক কোর্সে ভর্তি হন। প্রথম বছরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভালো করায় প্রিন্সিপাল রবার্ট ডানবার তাকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন। পাশাপাশি রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস থেকে অভিনয় ও মেকআপের ওপরও প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
ফিল্ম স্কুলে পড়াকালীন বিশ্বখ্যাত ‘গানস অব নাভারন’, ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই’ ছবিতে শিক্ষানবিশ চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে বিবিসিতে ক্যামেরাম্যান হিসেবে যোগ দেন তিনি। মা–বাবার আহ্বানে বিবিসির চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন আবদুস সামাদ, প্রতিষ্ঠা করেন ফিল্ম ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ। চলচ্চিত্রের জটিল, কারিগরি ও তাত্ত্বিক দিকগুলো সহজ করে চলতি প্রজন্মকে হাতে–কলমে শেখাতেই এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। তার ইনস্টিটিউট থেকে ১০টির মতো ব্যাচ হাতে–কলমে চলচ্চিত্রবিষয়ক শিক্ষা লাভ করে। প্রশিক্ষিত চলচ্চিত্রকর্মী গড়ে তুলতে এফডিসিতে প্রথম চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায়ও তার ভূমিকা ছিল। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন আমৃত্যু। এম এ সামাদ বাংলাদেশ ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেডএস