‘এহতেশাম দাদুকে অনেক মিস করি’
১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৩৭
তুহিন সাইফুল, এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট:
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সেলুলয়েডের আলো ঝলমলে দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন শাবনূর। তবে তার প্রথম সিনেমা ‘চাঁদনী রাতে’ ছিলো ফ্লপ। এর মানে এই নয় যে ব্যর্থতার তিলক এঁকে তাকেও হারিয়ে যেতে হবে বিস্মৃতির অতলে। শাবনূর হারিয়ে যাননি। কখনো ব্যর্থ প্রেমিকা, কখনো গ্রাম্য কিশোরী, কখনোবা শহুরে ধনাঢ্যের বেখেয়ালি মেয়ের সাজে তিনি দর্শককে কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন। আকাঙ্ক্ষায় পুড়তে থাকা প্রেমিকদের ঘুমের ভেতরে পাঠিয়েছেন স্বপ্নের বেনামি চিঠি। আর পরের বছরগুলোতে ভালবাসার চাবুক হাতে তিনি শাসন করেছেন বাংলা সিনেমা জগত।
বাংলা সিনেমার মিষ্টি মুখের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
চলচ্চিত্রে আসার গল্প
এহতেশাম দাদু আমাকে ফিল্মে নিয়ে আসেন। তিনি আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। একবার দাদু আমাদের বাসায় এলেন, তখন আমি ক্লাশ সিক্সে পড়ি। আমাকে দেখেই তিনি বললেন, ‘এই! তুই তো আমার সিনেমার নায়িকা হতে পারিস।’ আমার বাবার আরেকজন বন্ধু ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আফসার রহমান। তার এক মেয়ে ক্যান্সারে মারা যাওয়ার কারণে উনি আমাকে মেয়ে বলে ডাকতেন। তিনি তখন বললেন, ‘ফিল্ম নিয়ে পড়তে নূপুরকে (শাবনূর) আমি পুনে পাঠাবো। তারপর সে নায়িকা হবে।’ একথা শুনে এহতেশাম দাদু বললেন, ‘আমিই তো পুনে, আমার সিনেমার নায়িকা হলেই চলবে। পুনেতে পড়তে হবে না।’
তখন আমি বেশ ছোট ছিলাম। দাদু তাই বললেন, ‘আর বছর দুই অপেক্ষা করো।’ এরপর যখন ক্লাশ এইটে উঠলাম তখন প্রথমবারের মতো আমি সিনেমার জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। সিনেমার নাম ছিলো ‘চাঁদনী রাতে’, আমার সঙ্গে ছিলেন সাব্বির। প্রথম ছবিতেই দর্শক আমাকে বেশ ভালো ভাবে গ্রহণ করে।
প্রথম সিনেমা নিয়ে মজার স্মৃতি
‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর এক সাংবাদিক এসেছিলেন আমার সাক্ষাতকার নিতে। এসে আমাকে দেখে খুবই হতাশ হয়েছিলেন তিনি। আসলে পর্দায় আমাকে খুবই পরিণত মনে হলেও বাস্তবে সেসময় আমি একেবারেই বাচ্চা ছিলাম দেখতে! উনি ঠোট-মুখ বাঁকা করে বললেন, ‘তুমি নায়িকা শাবনূর! তোমার ইন্টারভিউ কি নিবো বাবা!’ এরপর তিনি আমার সাক্ষাতকার না নিয়েই চলে যান। এই স্মৃতিটা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।
নিজেকে নিজের মূল্যায়ন
এখনো আমি শিখছি। শেখার তো শেষ নেই। আর নিজেকে মূল্যায়নের প্রসঙ্গ এলে একটা কথাই বলবো যে, নিজেকে আমি বুঝিনা। আমি অনেক চটপটে তো, কিভাবে যে এতো কাজ করে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। ছোট ছিলাম তো, পরিচালকরা আমার মাথায় হাত দিয়ে কাজ করিয়ে নিতো। ‘প্লীজ মা, এটা করে দাও, ওটা করে দাও।’ আমি করে দিতাম। (হাসি)
যাকে মিস করেন
আমি আমার ভাইবোনকে অনেক মিস করি। ওরা বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। ওদের সংসার আছে, সন্তান আছে। আমার সবসময়ই মনে হয় ছোটবেলার মতো আমরা যদি একসঙ্গে থাকতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। সিনেমা জগতে এহতেশাম দাদুকে অনেক মিস করি। তিনি আমার অভিভাবক ছিলেন। সহশিল্পী অনেককেও মিস করি। কাজের সময় ফেরদৌস অনেক হাসাতো আমাদের। প্রবাস জীবনে ওকে খুব মিস করি।
বাংলা সিনেমায় ‘তখন’ আর ‘এখন’-এর পার্থক্য
আমাদের সময়ে অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে ছবি বানানো হতো। বিশেষ করে ডিরেক্টর, প্রডিউসার, আর্টিস্ট, এই তিনের মধ্যে অনেক আন্তরিকতা ছিলো। শুটিংয়ের সময় আমরা একসঙ্গে বসে খেতাম, আলোচনা করতাম। সিনেমার গল্প বা গানের আলোচনায়ও এতো লুকোছাপা ছিলো না, সবাই সবাইকে সময় দিতো। এখন এই পরিবেশটা নেই, আন্তরিকতাও আর নেই। সবার ভেতরেই কিসের যেন তাড়া। এখন কেউই সময় দিয়ে কাজটা করতে চায় না। আগেকার পরিচালকরা কাজ ভালো না হওয়া পর্যন্ত খাটাতো। একেকটা গান দশবার, বিশবার, পঞ্চাশবার পর্যন্ত বদল করা হতো পারফেকশন আনার জন্য। তখন এক বছর পর্যন্ত ভেবে একটা গান লেখা হতো, সেই গানগুলো এখনো মানুষ গুনগুন করে। এখন একটা গান একবার শুনলে একটু পর মনে থাকে না। তার মানে সময় দেয় নাই।
শেষ বয়সে নিজেকে যেখানে দেখতে চান
আমি জানি না, এটা আল্লাহ্ জানেন। আমি হয়তো কালকেই মরে যেতে পারি। তখন? তবে আমি অসুস্থ হয়ে মরতে চাই না। সুস্থ থাকতে থাকতে মরতে চাই। আমার দাঁত পড়ে যাবে, চামড়া কুচকে যাবে, আমি হাটতে পারবো, এমন সময়ে আমি মরতে চাইনা, তার আগেই যেনো আমার মৃত্যু হয়। কবরে একলা থাকতে হবে এটা ভাবলে আমার ভয় হয়। তবে বাঁচতে চাই সুন্দর ভাবে। জীবনকে উপভোগ করতে চাই কারণ জীবন সুন্দর।
ছবি: নূর
সারাবাংলা/টিএস/পিএম