বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার আমদানি
২১ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:২৪
অনেকেই ‘যৌনতা’কে ‘অশ্লীলতা’র সমার্থক মনে করেন। যৌনতা মানুষের জীবনের অনুষঙ্গ। যৌনতার মাঝেই থাকে সৃষ্টির বীজ। অপরদিকে অশ্লীলতা মানে কুত্সিত, অসুন্দর বা কুরুচিপূর্ণ আচরণ; অশিষ্টতা। অর্থাৎ যৌনতাকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হলেই কেবল আমরা তাকে অশ্লীল বলতে পারি। তবে, অশ্লীলতার মাপকাঠি শুধু নারীর শরীর নয়, পুরুষের শরীরও হতে পারে। যদিও আমাদের দেশে নারী নির্মাতা কর্তৃক একজন পুরুষের শরীর, অঙ্গসৌষ্ঠব, দৈহিক আকর্ষন নিয়ে প্রেম নিবেদনের আড়ালে অশ্লীলতার প্রদর্শন খুবই বিরল।
মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, উপস্থাপন ভঙ্গি, হিংস্রতাও অশ্লীল হতে পারে। নারীকে যদি খাদ্যবস্তুর মত লোভনীয় কিছু মনে করে তাকে পণ্যের মত উপস্থাপন করা হয়, তা অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়বে।
কিন্তু নর নারীর সম্পর্কের গল্প বলতে গিয়ে তাদের হৃদয় কেন্দ্রিক প্রেমের পাশাপাশি শারীরিক প্রেমের উপস্থাপনকে অশ্লীল বলা যায় না। এই উপস্থাপনের মাত্রাটা দেশ ভেদে, সমাজ ভেদে কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রটি ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। ১৯৭১ সালে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এবং মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) প্রযোজিত ‘ওরা এগারো জন’ চলচ্চিত্রটিতে এগারো জন মুক্তিযোদ্ধার ৯ মাসব্যাপী প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭২ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। ওই বছরেই মুক্তি পায় সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। ছবি দুটির সাফল্যের পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাম দিয়ে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছরে নির্মিত হয় ১১টি চলচ্চিত্র। সেসব চলচ্চিত্রের কয়েকটিতে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চেয়ে বাণিজ্য করাটাই ছিল চলচ্চিত্রগুলোর মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে আনন্দের ‘বাঘা বাঙালি’ এবং মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’ চলচ্চিত্রে ‘বীরাঙ্গনা’ চরিত্রের ধর্ষণ দৃশ্য কদর্য এবং বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে; যা ছিল চরম মাত্রায় অশ্লীল।
এ দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে আলমগীর কবির লিখেছিলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশার সাথে লক্ষ করছি যে, এর (রক্তাক্ত বাংলা) মুখ্য উদ্দেশ্য মুক্তি আন্দোলনের কোনো দিককে সততার সাথে তুলে ধরবার চেষ্টা নয় বরং ‘রক্তাক্ত বাংলা’ ছবির চিত্রায়ণ দেখে মনে হয়েছে যে, পরিচালকের ব্যবসায়িক সাফল্যের পুনরাবৃত্তির চেষ্টা চালানো হয়েছে। আর প্রথমবারের মতো বুঝতে পারলাম যে, পাকিস্তানি হানাদার কর্তৃক আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণের চলচ্চিত্রায়ণের মধ্যে বিরাট একটা বাজারি সম্ভাবনা রয়ে গেছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে সে ভয় সত্য বলে প্রমাণিত হলো। মুক্তি পেল ‘বাঘা বাঙালী’ নামক একটি ছবি, যেটিকে বাঙালি জাতির সর্বকালের লজ্জা বলে অভিহিত করা যেতে পারে। চলচ্চিত্রের সস্তা স্লোগান আর নিম্নরুচির কতগুলো নাচ, গান জুড়ে ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের দিকে নজর দিতে গিয়ে পরিচালক ভুলেই গেলেন মুক্তিযুদ্ধ ও তার ত্রিশ লাখ শহিদের স্মৃতির প্রতি কত বড় অবমাননা প্রদর্শন করেছেন।’
‘বাঘা বাঙালি’ এবং ‘রক্তাক্ত বাংলা’ ছাড়াও ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আমার জন্মভূমি’, ১৯৭৪ সালের ছবি ‘বাংলার ২৪ বছর’ এবং ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আজো ভুলিনি’ চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা বীরঙ্গনাদের অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নিপীড়নের শিকার নারীদের অর্ধনগ্ন, নারীদেহের বিভিন্ন অংশ প্রদর্শন, নেশাগ্রস্ত, নর্তকী, পাকসেনাদের মনোরঞ্জনকারী, ক্যামেরার নানা দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে ধর্ষণ দৃশ্যকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অপরদিকে ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হারুনর রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’ চলচ্চিত্রে ধর্ষণ-দৃশ্য ব্যবহৃত হয়েছে কাহিনীর প্রয়োজনে শৈল্পিকভাবে, ফলে এই চলচ্চিত্রটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত অন্যতম প্রধান একটা চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে।
পচাত্তুরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে পট পরিবর্তনের পর কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রবেশ করে ফ্যান্টাসি জগতে। সেই সময়ে ধর্মীয়, ধর্মীয় নামসর্বস্ব, আরব্য রজনীর কাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের জোয়ার আসে। তখনকার কিছু চলচ্চিত্রের নাম- আল্লাহ মেহেরবান, আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ, রাখে আল্লাহ মারে কে, কুদরৎ, শাহজাদী গুলবাহার, নবাবজাদী, রাজ নর্তকী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, দুলারী, ধর্ম আমার মা, দ্বীন দুনিয়া, শাহী খান্দান, শাহজামাল, ঈমানদার, স্বর্গ নরক, জীনের বাদশা, মরণের পরে ইত্যাদি।
নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পর চলচ্চিত্রে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
১৯৯৭ সালে চিত্রনায়িকা শাবানা প্রযোজিত ‘স্বামী কেন আসামী’ চলচ্চিত্রে কলকাতার ঋতুপর্ণাকে আশালীনভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগ উঠে। তবে, ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য পেলে বাংলাদেশে ঋতুপর্ণার মার্কেট তৈরি হয়। ১৯৯৮ সালে ঋতুপর্ণা নিয়ে নির্মিত হয় ‘রাঙা বউ’ নামের একটা চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী এই চলচ্চিত্রে ঋতুপর্ণার সাথে পাল্লা দিয়ে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হীরা চুনি পান্না’ চলচ্চিত্রে ক্যামেরার বিভিন্ন কোণ ব্যবহার করে নারী দেহের অশ্লীল উপস্থাপনের পাশাপাশি যুক্ত হয় ডিপজলের অশ্লীল গালাগালি এবং ডায়ালগ। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কঠিন শাস্তি’ চলচ্চিত্রে অশালীন দৃশ্যে অংশ নেন রুবেল এবং শাকিব খানের মত তারকারাও। তাদের সাথে ছিল শিমলা, তামান্না ও ডিপজল। অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ থাকার পরেও ছবিটি হলে চালানো হয়েছে পর্ণমুভির কাটপিস জুড়ে দিয়ে। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফায়ার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আবির্ভাব ঘটে আশ্লীল চলচ্চিত্রের অন্যতম একজন তারকা পলির। পলির সাথে এই চলচ্চিত্রে তখনকার জনপ্রিয় নায়ক মান্না অভিনয় করলেও, ছবিতে অশ্লীলতার বাড়াবাড়ি দেখে তিনি কিছু অংশের শ্যুটিং এবং ডাবিংয়ে অংশ নেননি।
অশ্লীলতার স্বর্ণযুগের শত শত চলচ্চিত্রের মধ্যে দুর্ধর্ষ সামসু, নষ্টা মেয়ে, জাদরেল, জাল, জাতশত্রু -এই পাঁচটা চলচ্চিত্র ‘কাটপিস’ সংযোজন ব্যতীত বিপুল ব্যবসা সফল ছিল। এর কারণ, এসব চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পীরা নিজেরাই ‘কাটপিস’-এর কাছাকাছি পর্যায়ের পর্ণগ্রাফিতে অংশ নিয়েছিলো। ১৯৯৭ থকে ২০০৭ পর্যন্ত এই ছবিগুলো আলোচনায় ছিল। এক হাজারেরও বেশি অশ্লীল সিনেমা তৈরি হয়েছিলো সেই অন্ধকার যুগে।
‘বাংলাদেশে খুনী মিন্টু ‘নামে অশ্লীল ছবি নিষিদ্ধের ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালে। ছবিটি সেন্সর করে মুক্তির সময় মার্কেটিংয়ে প্রচার করা হয় ‘ছবিটিতে বাংলাদেশি নায়িকাদের পর্নোগ্রাফিক দৃশ্য রয়েছে’। এই প্রচারণার ফলে সারাদেশ জুড়ে ছবিটি ব্যাপক ব্যবসা করতে থাকে। মুক্তির ৬ সপ্তাহ পর ‘অশ্লীল’ এবং ‘কুরুচিপূর্ণ’ দৃশ্য থাকার দায়ে বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড ছবিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৭ সালে র্যাবের কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে অশ্লীলতাবিরোধী টাস্কফোর্স গঠিত হলে বহু নীল ছবি, কাটপিস এবং অশ্লীল পোস্টার জব্দ করা হয়। এরপরে টনক নড়ে এফডিসিকেন্দ্রিক বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন এবং ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন অঙ্গনের নেতৃবৃন্দের। ওই সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি রাজু চৌধুরী এবং শাহাদত হোসেন লিটন নামে দু’জন পরিচালকের ‘অবৈধ অস্ত্র’ এবং ‘নিষিদ্ধ আখড়া’চলচ্চিত্রে ভয়াবহ অশ্লীল দৃশ্য থাকার অভিযোগে সদস্যপদ বাতিল করে। এছাড়াও এমএ রহিম, সাজেদুর রহমান সাজু, আহমেদ ইলিয়াস ভূঁইয়া এবং আনোয়ার চৌধুরী জীবন এই চারজন পরিচালককে শো’কজ নোটিস দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় ময়ূরী, মুনমুন, পলিসহ বেশ কয়েকজন অশ্লীল নৃত্যের নায়িকাকে নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি অশ্লীল ছবির জন্য দায়ী ১১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে এই মর্মে মুচলেকা আদায় করে- ‘ভুল ত্রুটি যা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আগামীতে কোনো ছবির অশ্লীল দৃশ্যে আর অভিনয় করব না। ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে শিল্পী সমিতি এবং সংশ্লিষ্টরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মাথা পেতে নেব।’ মুচলেকা দেয়া শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রিন্স, শায়লা, ড্যানিরাজ, জেসমিন, মমতাজ, নিরঞ্জন, লোপা, ডানা প্রমুখ।
ওই সময় অশ্লীল ছবির প্রযোজক ও পরিচালক শরীফ উদ্দিন খান দিপুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সর্বোপরি অশ্লীলতাবিরোধী টাস্কফোর্স চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা দূরীকরণে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে।
অশ্লীল চলচ্চিত্রের কারণে এরই মধ্যে যেসব দর্শক হলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তাদের আর হলমুখো করা যায়নি। অশ্লীল চলচ্চিত্রের যে দর্শক শ্রেণী তৈরি হয়েছিলো অশ্লীল ছবি এবং কাটপিসের অভাবে তারাও হলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে, দর্শকের অভাবে একে কে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে দেড় হাজার থেকে এক শ’র নিচে নেমে আসে।
অশ্লীল চলচ্চিত্র বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির যে ক্ষতিসাধন করেছে তা কাটিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রি কবে জেগে উঠবে তা বলা মুশকিল।
শেষ করার আগে-
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নৃতত্ত্ব বিভাগের ফ্যাকাল্টি লোটে হাওক বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোতে কাটপিসের উপস্থিতি এবং অশ্লীলতা নিয়ে ১০ মাস গবেষণা করেছেন। তিনি ‘খুনী মিন্টু’ নামের একটা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তৈরির প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি দেখেছেন- চিত্রনাট্যকার বাস্তবসম্মত গল্প জমা দেয়ার পরে কীভাবে প্রযোজকের ইচ্ছায় যৌনোদ্দীপক দৃশ্য এবং অপ্রাসঙ্গিক নানান বিষয় যুক্ত হয়ে যায়। ছবিতে কাটপিস যুক্ত করার জন্য চিত্রনাট্যে পরিকল্পিতভাবে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে তা-ও তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। ২০১৩ সালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় তার লেখা Cut-Pieces: Celluloid Obscenity and Popular Cinema in Bangladesh শীর্ষক বইটি।
হাওক তার গবেষণায় জানার চেষ্টা করেছেন- বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাটপিস সংযোজনের প্রবণতা কেন এবং সেন্সরশিপ নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে নির্মাতারা কেন তাদের ছবিতে ‘অশ্লীল’ দৃশ্য ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তিনি ওসব চলচ্চিত্রের নির্মাতা এবং দর্শকের মনস্তত্ত্ব বুঝারও চেষ্টা করেছেন। তিনি তার গবেষণাপত্রে লিখেছেন-‘বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা এমন যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে সহিংসতা ও যৌনতার মতো নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরম পুলকের উপাদান। সেই মানুষগুলোই পরিণত হয়েছিল কাটপিস ছবির ভোক্তায়, যে কারণে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর দর্শক চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও, ঢাকার চলচ্চিত্র প্রযোজকদের ব্যবসার পথ বন্ধ হয়নি।’
হাওক অশ্লীল চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীদের সাথে কথা বলে- এ জাতীয় ছবিতে শরীরী প্রদর্শনের বিষয়টিকে তারা কীভাবে দেখেন, এবং এ ধরনের শরীরী প্রদর্শনের জন্য তাদেরকে কী কী বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় -তা জানার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফাররা দর্শককে সুড়সুড়ি দেয়ার লক্ষ্যে কীভাবে চিত্রনাট্য পরিবর্তন করে অশ্লীল্ভাবে দৃশ্য ধারণ করে তা হাওক তার গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেছেন। মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী ছবির প্রচারে কীভাবে বিতর্ক তৈরি এবং গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় তা-ও হাওকের গবেষণা পত্রে রয়েছে। অশ্লীল চলচ্চিত্রের ব্যাপারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের হল মালিক ও প্রজেকশনিস্টদের ভুমিকা এবং দর্শক এসব চলচ্চিত্র কীভাবে গ্রহণ করছে এ ধরণের সবগুলো বিষয় নিয়েই একটা পরিপূর্ণ গবেষণা করেছেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ও নৃতাত্ত্বিক লোটে হাওক।
অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ একটা গবেষণা আমাদের দেশের কেউ করার প্রয়োজন মনে করেননি।
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা
সারাবাংলা/এসবিডিই
অপরাজিতা সংগীতা ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার আমদানি বিনোদন সিনেমা