Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ব ও বাংলা চলচ্চিত্র: একাল সেকাল


২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫৯

১৮৯০ সাল থেকে একাধিক শট সংবলিত, কয়েক মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরী হতে শুরু করে। ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিস শহরে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় (অগাস্তে এবং লুই লুমিয়ের) তাদের তৈরী দশটি ছোট ছোট চলচ্চিত্র প্রথমবারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন করেন। যা বিশ্ব চলচ্চিত্রে প্রথম বানিজ্যিক প্রদর্শন।

১৮৯৭ সালে প্রথম ফিল্ম ষ্টুডিও তৈরী হয়। স্পেশাল ইফেক্ট, এক ঘটনাক্রম থেকে অন্য ঘটনাক্রমে ছবির কন্টিনিউটি বা অবিচ্ছেদ্যতা বজায় রাখা, ইত্যাদি নানারকম প্রয়োগকৌশলের ব্যবহার শুরু হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ নির্মাতা আর্থার মেলবোর্ন-কুপার “ম্যাচেস: অ্যান অ্যাপিল” নামে একটি তিরিশ সেকেণ্ড দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরী করেন স্টপ-মোশন প্রযুক্তির সাহায্যে। এই চলচ্চিত্র প্রথম এ্যানিমেশন চলচ্চিত্র। ১৮৯৯ এর ডিসেম্বর মাসে লন্ডনের এম্পায়ার থিয়েটারে এই ছবি প্রদর্শিত হয়।

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বায়োস্কোপ কোম্পানি গঠন করেন বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরী গ্রামের হীরালাল সেন। তার প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি থেকে তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নির্মাণ করেন সীতারাম, আলীবাবা, দোললীলা, ভ্রমর ও হরিরাজ বুদ্ধ।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতার স্টার থিয়েটার ও ক্ল্যাসিক থিয়েটারে প্রদর্শিত হয় প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। হিরালাল সেন জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬৬ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯১৭ সালে। হীরালাল সেন ভারতীয় উপমহাদের প্রথম চলচ্চিত্রনির্মাতা। তবে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতার খেতাব পাননি, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম নির্মাতার খেতাব পেয়েছেন। ভারতীয় উমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতার খেতাব পেয়েছেন ধুন্ডিরাজ গোবিন্দ ফালকে ওরফে দাদাসাহেব ফালকে।

বিজ্ঞাপন

১৯০০ সাল থেকেই শটে ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং ক্লোজ-আপ শটের ব্যবহার শুরু হয়ে যায়, এটির উদ্ভাবক ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ। ১৯০৫ সালে পিটসবার্গে স্থাপিত ‘দ্য নিকেলোডিয়ান’কে বলা হয় প্রথম স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ যেখানে সফলভাবে শুধুই চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়েছিল। ১৯০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তৈরী “দি স্টোরি অফ দ্য কেলি গ্যাং” ছবিটিকে প্রথম পূর্নদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র বলা হয়। ১৯১০ সালে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম পর্দায় লেখা শুরু হয়।

১৯১৩ সালে দাদাসাহেব ফালকে প্রযোজিত এবং পরিচালিত “রাজা হরিশচন্দ্র” চলচ্চিত্রটি ভারতের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র। ৪০ মিনিটি ব্যাপ্তির এই চলচ্চিত্র ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে এপ্রিল বম্বে শহরের গ্র্যান্ট রোডের অলিম্পিয়া থিয়েটারে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের সামনে প্রথম দেখানো হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মে বম্বে শহরের করোনেশন থিয়েটারে প্রথম বানিজ্যিক মুক্তি দেওয়া হয় চলচ্চিত্রটি।

ধুন্ডিরাজ গোবিন্দ ফালকে ওরফে দাদাসাহেব ফালকে ৩০শে এপ্রিল, ১৮৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ সালে মৃত্যু বরণ করেন। দাদাসাহেব ফালকে ২৪ বছর চলচ্চিত্র জীবনে ৯৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্যে চলচ্চিত্র ও ২৬টি স্বল্প দৈর্ঘ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। দাদাসাহেব ফালকে-কে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক বলা হয়।

ম্যাডান থিয়েটার প্রযোজিত রুস্তমজী দোতিবালা পরিচালিত “বিল্বমঙ্গল” প্রথম বাংলা সাদা-কালো নির্বাক চলচ্চিত্র। ১৯১৯ সালের ১লা নভেম্বর কলকাতার কমওয়ালিস প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ১৯২০ সালের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে চলচ্চিত্র উৎপাদনে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০০ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতো তখনই। বর্তমানেও বিশ্ব চলচ্চিত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম স্থান দখল করে আছে।

বিশ্বখ্যাত ওয়ার্নার ব্রাদার্স প্রযোজিত “দ্য জ্যাজ সিঙ্গার” ১৯২৭ সালে মুক্তি পাবার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে (পৃথিবীর কোথাও হয়তো এখনো নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মান হতে পারে) বলে মনে করা হয়। “দ্য জ্যাজ সিঙ্গার” চলচ্চিত্রে প্রথম সিঙ্ক্রোনাইজড সংলাপ এবং সংগীত ব্যবহার করা হয়।

১৯২৭ সালে ঢাকায় নওয়াব পরিবারের কয়েকজন তরুণ সংস্কৃতিসেবীর সহায়তায় অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্ত পরিচালিত “সুকুমারি” চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়। চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা ছিলেন খাজা নসরুল্লাহ ও সৈয়দ আবদুস সোবহান। উল্লেখ্য তখন নারী চরিত্রে পুরুষরা অভিনয় করতেন। ১৯২৯ সালের শেষে হলিউডের প্রায় সমস্ত ছবিই সবাক। শব্দের ব্যবহার শুরু হওয়ার জন্যেই হলিউডের চলচ্চিত্রশিল্প সেই সময়ের অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হয়।

প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯৩০ এর শুরুর দিকে। ইস্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানি ছিলো তৎকালীন সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ইম্পেরিয়াল মুভিটোন প্রযোজিত, আরদেশির ইরানি পরিচালিত “আলম আরা” চলচ্চিত্র ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। ১৯৩১ সালের ১৪ই মার্চ “আলম আরা” ভারতের মুম্বাই (তৎকালীন বোম্বাই) শহরের ম্যাজেস্টিক হলে মুক্তি পায়।

১৯৩১ সালে ম্যাডান থিয়েটার প্রযোজিত, অমর চৌধুরী পরিচালিত “জামাই ষষ্ঠী” ভারতীয় প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল এটি কলকাতার ক্রাউন সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়। ১৯৩১ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত প্রেমাঙ্কুর আতর্থী পরিচালিত “দেনা পাওনা” ভারতীয় প্রথম বাংলা সবাক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করে নিউ থিয়েটার্স। ১৯৩১ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেনা পাওনা কলকাতায় মুক্তি পায়।

নওয়াব পরিবারের উদ্যোগে ঢাকায় ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ কোম্পানির প্রযোজনায় অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্ত পরিচালিত নির্বাক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “দ্য লাস্ট কিস”। খাজা আজমল, খাজা আদিল, খাজা আকমল, খাজা শাহেদ, খাজা নসরুল্লাহ, শৈলেন রায় বা টোনা বাবু ছিলেন এই চলচ্চিত্রের অভিনেতা। ঢাকার কোন চলচ্চিত্রে নারী অভিনেত্রীরা অভিনয় করেন, নায়িকা চরিত্রে ছিলেন লোলিটা বা বুড়ি নামের এক বাইজী। চারুবালা, দেববালা বা দেবী নামের আরও দুই বাইজী এতে অভিনয় করেন। হরিমতি নামে একজন অভিনেত্রীও এতে অভিনয় করেন। ১৯৩১ সালে এই চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ঢাকার মুকুল হলে (অধুনা আজাদ হল)। এর প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার।

একই সময়ে কলকাতা কেন্দ্রিক প্রমথেশ বড়ুয়া এবং দেবকী বোস অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করে বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে নতুনমাত্রা যোগ করেন। ১৯৩২ সালে দেবকি বোস পরিচালিত “চণ্ডীদাস” চলচ্চিত্রে ডায়লগ স্পেস আউট ও ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশন সমস্যার সমাধান করে শব্দযোগ করেছিলেন মুকুল বোস, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ওবায়েদ-উল হক (ছদ্মনাম হিমাদ্রী চৌধুরী) প্রযোজিত এবং পরিচালিত “দুঃখে যাদের জীবন গড়া” মুক্তি পায় ১৯৪৬ সালে কলকাতায়। বাংলাদেশী মুসলিম পরিচালকের হাতে নির্মিত এটি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ইসমাইল মোহাম্মদ ছদ্মনাম উদয়ন চৌধুরী প্রযোজিত ও পরিচালিত “মানুষের ভগবান” মুক্তি পায় ১৯৪৭ সালে।

১৯৪৮ সালে নাজির আহমেদ পরিচালিত “ইন আওয়ার মিডস্ট” নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন, যা পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলা- বাংলাদেশ- ভূখণ্ডের প্রথম তথ্যচিত্র।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতেই চলচ্চিত্র শিল্পে প্রভাব পড়ে, চলচ্চিত্র নির্মান কমে যায়। ১৯৫০ সালে হাউস আন-আমেরিকান অ্যাক্টিভিটিস কমিটি হলিউডে তদন্ত চালিয়ে প্রচুর অভিনেতা, লেখক, নির্দেশককে কালো তালিকাভুক্ত করে। এদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত চার্লি চ্যাপলিন, ডালটন ট্র্যাম্বো ও আরো অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব। এদের অনেকেই ইউরোপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। হলিউডে বহিস্কৃত অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক চার্লি চ্যাপলিন এখন বিশ্ব চলচ্চিত্রে নিজেই একটি ইতিহাস। চার্লি চ্যাপলিনকে যারা বহিস্কার করে পথরোধ করে দিতে চেয়েছিলো তারা আজ পৃথিবীতে নেই কিন্তু চলচ্চিত্র যত দিন থাকবে চার্লি চ্যাপলিন তত দিন থাকবেন।

১৯৫৪ সালে নাজির আহমদের পরিচালনায় নির্মিত হয় প্রামাণ্য চিত্র “সালামত”। নাজির আহমেদ একাধারে অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, বেতারকর্মী ও লেখক। ১৯৫৫ সালে নাজির আহমদের উদ্যোগে ঢাকায় প্রথম ফিল্ম ল্যাবরেটরি এবং স্টুডিও প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বর্তমানে বিএফডিসি) প্রথম নির্বাহী পরিচালক হন। নবারুণ (১৯৬০) নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র তিনি নির্মান করেন।

১৯৫৪ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকার্স লিমিটেড। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ড. আবদুস সাদেক, দলিল আহমদ, আজিজুল হক, কবি জসীমউদ্দীন, কাজী খালেক, সারওয়ার হোসেন প্রমুখ। কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকার্সের ব্যানারে স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্র “আপ্যায়ন”এর কাজ শুরু করেন সারোয়ার হোসেন।

১৯৫৪ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইকবাল ফিল্মস। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের, মহিউদ্দিন, শহীদুল আলম, আবদুল জব্বার খান, কাজী নুরুজ্জামান, কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া প্রমুখ। ১৯৫৪ সালে ইকবাল ফিল্মসের ব্যানারে এই ভূখণ্ডের প্রথম চলচ্চিত্র “মুখ ও মুখোশ” এর কাজ শুরু করেন আবদুল জব্বার খান। কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ এর একজন প্রযোজক ছিলেন। কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়ার পুত্র চিত্রনায়ক আলমগীর।

১৯৫৫ সালে জুন মাসে তেজগাঁওয়ে সরকারি ফিল্ম স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত “পথের পাঁচালী” ১৯৫৫ সালে মুক্তিপায়। এই চলচ্চিত্র ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারসহ ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে (Best Human Documentary) পুরস্কার অর্জন করে, বাংলা চলচ্চিত্র বিশ্ব চলচ্চিত্রে প্রথমবার স্থান করে নেয়। এই সময় সত্যজিৎ রায় নির্মাণ করেন “অপরাজিত” (১৯৫৬), “জলসাঘর” (১৯৫৮) ও “অপুর সংসার” (১৯৫৯)।

সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২ মে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। পূর্ণদৈর্ঘ্য, কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মিলে ৩৭টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদের মধ্যে প্রথম অস্কার বিজয়ী হন ১৯৯২ সালে (সম্মানসূচক)।

মৃণাল সেন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র “রাত-ভোর” ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিটি বেশি সাফল্য পায়নি। তার দ্বিতীয় ছবি “নীল আকাশের নিচে” (১৯৫৮) এবং তৃতীয় ছবি “বাইশে শ্রাবণ” (১৯৬০) মুক্তি পাবার পরে তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান।

ইকবাল ফিল্মস প্রযোজিত আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত “মুখ ও মুখোশ” বাংলাদেশের (তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) প্রথম নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র। ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয় মুকুল প্রেক্ষাগৃহে (বর্তমান আজাদ প্রেক্ষাগৃহ)। এটি ঢাকার রূপমহল, চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড এবং খুলনার উল্লাসিনী প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পায়। প্রথম দফায় মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি ৪৮,০০০ (আটচল্লিশ হাজার) রুপি আয় করে রেকর্ড সৃষ্টি করে।

মেহবুব খান প্রযোজিত ও পরিচালিত “মাদার ইন্ডিয়া” চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার এবং রাজ কুমার। ১৯৫৭ সাল ভারত থেকে “মাদার ইন্ডিয়া” বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে নমিনেশন অর্জন করে।

১৯৫৭ সালের ২৭ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিল, ১৯৫৭’ পেশ করেন। ৩ এপ্রিল ১৯৫৭ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিল পাসের মাধ্যমে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ প্রতিষ্ঠিত হবার আইন পাশ হয়। আইনটি ১৯ জুন, ১৯৫৭ থেকে কার্যকর হয়। ১৯৫৭ এবং ১৯৫৮ সালে বাংলাদেশে কোনও চলচ্চিত্র মুক্তি পায়নি। ১৯৫৯ সাল থেকে এফডিসি থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্থাধীন হওয়ার পরে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

১৯৫৯ সালের ৮ মে মুক্তি পায় আখতার জং কারদার পরিচালিত “জাগো হুয়া সাভেরা”। ১৯৫৯ সালের ২৪ মে মুক্তি পায় ফতেহ লোহানী পরিচালিত “আকাশ আর মাটি”। ১৯৫৯ সালের ২৮ আগস্ট মুক্তি পায় মহিউদ্দিন পরিচালিত “মাটির পাহাড়”। ১৯৫৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পায় এহতেশাম পরিচালিত “এ দেশ তোমার আমার”। সফররাজ পাল্লোনঝি প্রযোজিত এবং কে আসিফ পরিচালিত “মুঘল-ই-আজম” চলচ্চিত্র ১৯৬০ সালে মুক্তি পায়। বলিউডে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে এই চলচ্চিত্রটি।

চিত্রকল্প প্রযোজিত ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত “মেঘে ঢাকা তারা” ১৯৬০ সালের ১৪ এপ্রিল মুক্তি পায়। প্রথম চলচ্চিত্রেই ঋত্বিক ঘটক আলোচনায় চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন কালজয়ী ক্লাসিক্যাল চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৬০ সালের ২ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় এহতেশাম পরিচালিত “রাজধানীর বুকে” এবং ১৯৬০ সালের ৪ নভেম্বর মুক্তি পায় ফতেহ লোহানী পরিচালিত “আসিয়া”। এই দুটি চলচ্চিত্র এফডিসিতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। ফতেহ লোহানী পরিচালিত “আসিয়া” শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে তৎকালীন পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ।

লেখক : চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ চলচ্চিত্র প্রবন্ধ বিনোদন বিশ্ব ও বাংলা চলচ্চিত্র: একাল সেকাল মনজুরুল ইসলাম মেঘ সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর