ঈদ আনন্দে দর্শক ছুটছে প্রেক্ষাগৃহে
১৬ জুন ২০১৮ ১৭:৩৭
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
ঈদে সবখানেই লাগে আনন্দের ছোঁয়া। সাজ সাজ রব সবখানেই। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও মজার খাবারের পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ খোঁজেন সবাই। সিনেমাপ্রেমীরা সেই বাড়তি আনন্দটুকু নেন সিনেমা দেখে।
ঈদুল ফিতরে দেশে মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি সিনেমা। যার মধ্যে তিনটি সিনেমাই শাকিব খান অভিনীত। এর মধ্যে রয়েছে ‘পাংকু জামাই’, ‘সুপার হিরো’, এবং ‘চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’। আর বাকি দুটো হলো ‘কমলা রকেট’ ও ‘পোড়ামন ২’।
পোড়ামন ২ ছবিটির কলাকুশলি, অভিনয় শিল্পী এবং প্রযোজকরা মিলে বের হয়েছেন রাজধানীর প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দর্শকদের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। তাদের এই সফরে প্রথেমেই তারা যান স্টার সিনেপ্লেক্সে। বেলা ২টায় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর পর পোড়ামন ২ দলটি যায় শ্যামলী সিনেমায়। সেখান থেকে বলাকা সিনেমা হলে আসেন দুপুর ৩টার শো-তে দর্শকদের ছবি দেখতে অনুপ্রাণিত করতে।
বলাকা হলে সিয়াম সারাবাংলাকে জানান, ‘সিনেপ্লেক্সে বেলা ২টা ও তার পরের শো হউজফুল। শ্যামলিতেও ২টা ৪০ ও ৫টা ৩০ এর শো দুটি দর্শকপূর্ণ। গাজিপুরের হল গুলোতে দর্শকরা প্রচন্ড ভীড় করছেন।’
এই ঈদটা জীবনের অন্যতম সেরা ঈদ হয়ে গেল সিয়ামের জন্য। ছোট পর্দার সিয়াম এখন বড় পর্দায়। কিন্তু এই বড় পর্দায় কাজ করতে বাধা ছিল পরিবারের। সেই পরিবারই এখন সিয়ামকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।
‘আমি অপেক্ষা করছিলাম আমার মা-বাবার মন্তব্যের জন্য। আমি সেটা পেয়েছি। এখন আমি খুব খুশি। তারা বলেছে যে, আমার জন্য গর্বিত তারা। এর চেয়ে বড় কিছু আমার জন্য কিছু নেই। কিন্তু একসময় তারাই চাননি যে বড় পর্দায় আমি কাজ করি।’ বললেন সিয়াম।
সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন সাঈদ বাবু। তিনি নায়িকার বড়ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি মনে করছেন এই কাজের পর দ্বিতীয় কোনো কাজ করলে আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
‘প্রথম কাজেই দর্শকরা আমাদের দারুনভাবে গ্রহণ করেছে। এতটা পাবো আশা করিনি। এখন যদি আমি এই টিমের সঙ্গে বা পরিচালক রায়হান রাফির সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করি তাহলে আরও অনেক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। না হলে দর্শকদের আশা পূরণ করতে পারবো না।’ বলেন সাঈদ বাবু।
এই ঈদে বড় পর্দার পরীক্ষায় আরও একজন ছিলেন, তিনি হলেন পরিচালক রায়হান রাফি। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, তাও আবার ঈদের চলচ্চিত্র হিসেবে। তাই কিছুটা চাপেই চিলেন তিনি। কিন্তু সকাল থেকে বিভিন্ন হলে গিয়ে সেই চাপ অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, ‘সকালে গাজীপুরের খবর নিলাম এবং আমি মুগ্ধ। দর্শকরা দলে দলে আসছেন ছবি দেখতে। শ্যামলীতে গিয়ে আমি আরও বিমোহিত হয়ে গেলাম। সবাই বলছেন ছবিটি ভালো লেগেছে। সিয়ামের যে সংলাপ তাদের ভালো লেগছে সেটি সবার মুখে মুখে উঠে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম ছবিটি প্রথম কয়েকদিন চলার পর সবার মুখে মুখে প্রচার হবে। কিন্তু এখন দেখছি প্রথম দিনেই সবার প্রশংসা পাচ্ছি। এখন দেখার অপেক্ষা পরের সময়ে দর্শকরা কেমন সারা দেন।’
সিনেমার প্রযোজক আবদুল আজিজ খুবই উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘এত মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। পোড়ামন ২ সব জায়গায় হাউসফুল। এতে করে আমরা অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে দর্শকরা পোড়ামন থ্রি চাইছে।’
শাকিব খানের ‘সুপার হিরো’ দেখতে রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলে ছুটছেন দর্শকরা। শাকিব-বুবলি অভিনীত ছবিটি পরিচালনা করেছেন আশিকুর রহমান। ছবিটি দেখতে দর্শদের আগ্রহ আছে যেমন, হলে আসছেনও তেমন।
কিন্তু অবাক করা বিষয়টি হলো খোলা নেই সিনেমা হলের কোনো টিকিট কাউন্টার। কয়েকজন লোক হাতে টিকিট নিয়ে উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করছেন।
মোহাম্মদ হৃদয়, খিলগাও থেকে এসেছেন তিনজন বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে। কিন্তু কাউন্টার বন্ধ থাকার কারণে ৪০ টাকার টিকিট ব্ল্যাকে তাদের কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা করে। দ্বিগুন দামে টিকিট কিনে অসন্তুষ্ট দর্শকরা। তবুও হলটি প্রায় ভর্তি এবং দর্শকরা সিনেমাও দেখছেন আনন্দ নিয়ে।
কাকরাইল মোড় থেকে একটু এগিয়ে গেলেই ‘রাজমনি’ ও ‘রাজিয়া’ নামের পাশাপাশি দুটো সিনেমা হল। দুটোর একটিতে চলছে শাকিব খান-অপু বিশ্বাস জুটির পাংকু জামাই, অপরটিতে নূর ইমরান মিঠুর কমলা রকেট। ঈদের দিনের প্রথম শোতে হল দুটিতে বেশ লোক সমাগম হলেও এদের বেশির ভাগই এসেছেন পাংকু জামাই দেখতে। অপর দিকে কমলা রকেটের প্রতি দর্শক আগ্রহ অনেক কম।
শান্তিনগর এলাকা থেকে স্ব-পরিবারে ‘পাংকু জামাই’ ছবিটি দেখতে এসেছেন গৃহবধূ রুনা খাতুন। সারাবাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, সিনেমা ভালো বা মন্দ তেমন যাচাই করতে আসেন নি তিনি। পরিবারকে নিয়ে বিনোদন নেবেন এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। স্বামী মোজাম্মেল হকও সহমত জানিয়েছেন স্ত্রীর কথায়।
রাজমনি সিনেমা হলের ম্যানেজার জানাচ্ছেন তার হলে মেয়ে দর্শক আসছেন বেশি। অপরদিকে কমলা রকেটের টিকিট কাঁটছেন বয়সে ত্রিশের কোটার মানুষজন। প্রথম শোতে দর্শক কম হলেও ছবিটি নিয়ে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করছেন রাজিয়া হলের ম্যানেজার।
ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত, তুহিন সাইফুল
সারাবাংলা/টিএস/এএএমএ/এএসজি/পিএ