Friday 13 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাকওয়া অর্জনে মনের পশু কুরবানি করুন

মো. আব্দুল্লাহ আলমামুন
৪ জুন ২০২৫ ১৪:০৫

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। প্রত্যেক বছর ধর্মপ্রাণ মুসলমান দুটি ঈদ পালন করে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। অতঃপর ঈদুল আজহা আসে। ঈদে শিশুরা বাধ ভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে। তারা খুবই উদগ্রীব হয়ে কুরবানির পশু কিনতে যায়। ইদের আগের দিন সন্ধ্যায় সবাই ইদের বাঁকা চাঁদ দেখে। তালগাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া চাঁদ দেখে ছোট বড় সবার মনে ইদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।

কুরবানি মানে কেবল পশু জবাই দেওয়া নয়। বরং এটি আত্মশুদ্ধির, ত্যাগের ও আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসার প্রকাশ। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করতে হয়। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ)কে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরবানি করতে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, কুরবানির মাংস গোশত কিছুই পৌঁছায় না। আল্লাহর কাছে পৌঁছায় মানুষের তাকওয়া।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান সময়ে কুরবানি হয়ে গেছে সামাজিক প্রথা। এখন অনেক মানুষ দুনিয়ায় সম্মান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করে। কত বেশি বড়, দামি, সুদর্শন পশু কেনা যায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া মূখ্য হয়ে গেছে। কিন্তু কুরবানি করলে নেকি দিবেন আল্লাহ তায়ালা। আর যদি লোক দেখানো কুরবানি হয় তাহলে আল্লাহ নারাজ হয়।

আত্মিক কুরবানি মানে নিজের ‘নফস’, অহংকার, হিংসা, রিয়া (লোক দেখানো কাজ), কৃপণতা, হঠকারিতা প্রভৃতি মনের পশুদের জবাই করা। কুরআন-হাদীসের আলোকে এটা কুরবানির প্রকৃত শিক্ষা। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে তাদের গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।’ (সূরা হজ্ব: ৩৭)

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, পশুর দেহ নয়, বরং অন্তরের খোদাভীতি বা তাকওয়াই আসল বিষয়। তাহলে আমরা যদি পশু জবাই করেও নিজেদের ভেতরের অহংকার, দম্ভ ও লোক দেখানোর মানসিকতা ত্যাগ না করি—তবে প্রকৃত কুরবানি আদায় হলো না। বরং কুরবানি দিতে হবে নিজে সামর্থ অনুযায়ী।

লোক দেখানো আমল সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয় করি ছোট শিরক’। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছোট শিরক কি?’ তিনি বললেন, ‘রিয়া (লোক দেখানো)’ (মুসনাদে আহমাদ)। বর্তমানে অনেকেই কুরবানির পশুর ছবি, দামের তথ্য ও গোশত বিতরণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেন। উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষকে দেখানো বা বাহবা পাওয়া, তবে তা ‘রিয়া’র পর্যায়ে পড়ে। সাহাবায়ে কেরাম কুরবানি করতেন চুপিসারে। তারা আত্মার কুরবানিকে প্রাধান্য দিতেন। তারা পশু জবাইয়ের পাশাপাশি নিজেদের আত্মাকে জবাই করতেন—তাদের ছিল না বাহ্যিকতা, না ছিল ছবি তুলে তা প্রচার করার প্রবণতা।

এই যুগে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মনের পশু জবাই করা যেন কুরবানির মাধ্যমে মানুষের মনের অহংকার, হিংসা, পাপাচার মোচন হয়। কুরবানি যেন হয় তাকওয়ার, আত্মশুদ্ধির ও নিঃস্বার্থতা প্রকাশের মাধ্যম। পশু নয়, জবাই হোক আমাদের মনের পশু। লোক দেখানো নয়, হোক গোপনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। সামাজিক মাধ্যমে নয়, বরং হৃদয়ের গভীরে হোক ত্যাগ ও প্রেমের নিঃশব্দ আরাধনা।

আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বলো, আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু—সবই আল্লাহর জন্য।’ (সূরা আন’আম: ১৬২)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘জিন ও মানুষকে আমি এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা জারিয়াত:৫৬)। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত লোক দেখানো ইবাদাত থেকে দূরে থাকা। কুরবানির পশুর ছবি, দাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে না দেওয়া। সর্বোপরি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মনের পশুকে কুরবানি করে আত্নীয় স্বজন ও গরিব দুঃখীদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া।মনে রাখা উচিত কুরবানি অর্থ আত্নত্যাগ।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এএসজি

কুরবানি তাকওয়া মো. আব্দুল্লাহ আলমামুন