নেকড়ে— শুনলেই মনে পড়ে যায়, শৈশবের গল্পের সেই ভয়ঙ্কর খলনায়ক—যে কিনা লাল টুকটুকে টুপিওয়ালা মেয়েটার পেছনে লেগেছিল, কিংবা তিনটি ছোট্ট শুকরের ঘর উড়িয়ে দিয়েছিল। সিনেমা-গল্পে বেচারার ইমেজ এমন কালো হয়ে গেছে যে, বাস্তবে দেখা হলে হয়তো আমরা সঙ্গে সঙ্গে ‘বাঁচাও!’ বলে দৌড়াতাম। সিনেমা, রূপকথা, লোককথা—সবখানেই নেকড়ে এসেছে ভিলেন হয়ে। আমাদের মনে এত গভীরভাবে গেঁথে গেছে যে, বাস্তবে নেকড়ে দেখলেই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
কিন্তু সত্যি বলতে, এই পশুরা আমাদের শত্রু নয়। প্রকৃতপক্ষে, তারা বনের একধরনের নীরব নায়ক। তারা হরিণ, শিয়াল, এমনকি ছোটখাটো শিকার ধরে বনাঞ্চলের ভারসাম্য বজায় রাখে।তারা বনের এক ধরনের সিকিউরিটি গার্ড— হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, শিকার চেইন ঠিক রাখে, এমনকি বন আর নদীর ইকোসিস্টেম ঠিক রাখতে তাদের অবদান অবিশ্বাস্য। Yellowstone National Park-এ নেকড়ে ফিরিয়ে আনার পর প্রকৃতির ভারসাম্য কিভাবে ফিরল, সেটি এখন পরিবেশবিদদের প্রিয় কেস স্টাডি।
Yellowstone National Park-এ ১৯৯৫ সালে নেকড়ে ফিরিয়ে আনার পর দেখা যায়, বনের গাছপালা, নদীর প্রবাহ, এমনকি পাখিদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে— সবই প্রকৃতির সেই সূক্ষ্ম চেইনের কারণে, যা নেকড়েরা রক্ষা করে।
নেকড়ে পরিবারের ভেতরে শৃঙ্খলা দেখলে অনেক অফিস বসও লজ্জা পাবেন—সবাই মিলে শিকার, সবাই মিলে খাওয়া, সবাই মিলে বাচ্চা লালন। শুধু বোর্ড মিটিংয়ের বদলে তারা চাঁদের আলোয় হুক্কা-হুয়া করে।
১৩ আগস্ট, International Wolf Day-তে সারা বিশ্বে নেকড়েদের ভুল বোঝাবুঝি ভাঙার চেষ্টা হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণকর্মীরা মানুষকে বোঝান—নেকড়ের দাঁত যেমন তীক্ষ্ণ, তেমনি তাদের সামাজিক সম্পর্কও ততটাই মজবুত। তারা পরিবারের প্রতি নিবেদিত, একসাথে শিকার করে, বাচ্চাদের সবাই মিলে লালন করে। অনেকটাই মানুষের মতো— শুধু তারা ‘মিটিং’ করে চাঁদের আলোয় হুক্কা হুয়া ডেকে।
তবে হ্যাঁ, ভুলে গেলে চলবে না— নেকড়ে বন্যপ্রাণী। তাদের জায়গা জঙ্গলে, আমাদের জায়গা শহরে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে এই বনের রক্ষকদের সম্মান জানানোই আসল কৃতজ্ঞতা।
এই দিনে, হয়তো আমরা সবাই ছোট্ট একটি প্রতিজ্ঞা করতে পারি—
প্রকৃতিকে রক্ষা করব, তার নীরব নায়কদেরও রক্ষা করব। আর নেকড়েকে মনে রাখব শুধু লোককথার খলনায়ক নয়, বরং প্রকৃতির প্রকৃত বন্ধু হিসেবে।