ভারতের জম্মু–কাশ্মীরের লাদাখের এক ছোট্ট উপত্যকা ঘিরে বিশ্বজুড়ে বহু কৌতূহল। আর্য উপত্যকা বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ব্রোকপা গ্রাম। কার্গিল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি নিয়ে শত শত গল্প প্রচলিত আছে— যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ইউরোপের বহু নারী এখানে আসেন সন্তান ধারণের আশায়।
‘বিশুদ্ধ’ রক্তের মানুষদের গ্রাম
বলা হয়, এ গ্রামে বসবাসরত ব্রোকপা জাতির মানুষরা এখনো বহন করে চলেছেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাদের বংশধারা। ইতিহাস বলে, ভারত অভিযানের সময় আলেকজান্ডারের সেনাদের একাংশ ফিরে না গিয়ে এখানেই বসতি গড়েছিল। তাদের বংশধররাই নাকি আজকের ব্রোকপা। লম্বা দেহ, উজ্জ্বল চামড়া, নীল চোখ ও স্বতন্ত্র চেহারার কারণে তাদের ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত হিসেবেই মনে করা হয়।
ইউরোপীয় নারীদের আগ্রহ
পশ্চিমা দেশে বহু নারীই বিশ্বাস করেন, ব্রোকপা পুরুষদের থেকে সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তান হবে শারীরিকভাবে সবল, সুন্দর এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সেই আকাঙ্ক্ষায় ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীরা ছুটে আসেন লাদাখের এই প্রত্যন্ত গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, অনেকে গোপনে সম্পর্ক গড়ে তোলেন, আবার কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে এ কাজ করেন। গর্ভধারণের পর তারা নিজেদের দেশে ফিরে যান।
সংস্কৃতি ও ব্যবসার দ্বন্দ্ব
ব্রোকপা জনগোষ্ঠী আজও নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষায় কঠোর। তাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, এমনকি বিয়ে-শাদিতেও বহিরাগতদের প্রবেশে নানা নিষেধাজ্ঞা আছে। তবু পর্যটন এবং মাতৃত্বকেন্দ্রিক আগ্রহের কারণে এখানকার মানুষের জীবনে এসেছে নতুন অর্থনীতি। কেউ কেউ এটিকে সাংস্কৃতিক ভাঙন হিসেবে দেখছেন, আবার কারও মতে এটি গ্রামের নারীদের জন্য নতুন রোজগারের পথ।
রহস্যময় উত্তরাধিকার
আজও আর্য উপত্যকায় প্রায় দুই হাজার ব্রোকপা মানুষের বসবাস। রঙিন ফুল দিয়ে সাজানো তাদের পোশাক, বিশেষ উৎসব আর লোকসংগীত স্থানীয় সংস্কৃতিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। কিন্তু ইউরোপীয় নারীদের আগমনে এ গ্রাম পেয়েছে এক নতুন পরিচিতি— ‘মাতৃত্বের উপত্যকা’।
আলো–অন্ধকারের গল্প
কেউ এই ঘটনাকে দেখেন বাণিজ্যিকীকরণ হিসেবে, কেউ আবার মনে করেন এটি প্রাচীন জিনগত ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার এক অদ্ভুত প্রচেষ্টা। কিন্তু যেভাবেই দেখা হোক না কেন, আর্য উপত্যকা আজ বিশ্বমানচিত্রে কৌতূহলের জায়গা করে নিয়েছে— যে গ্রামে সন্তান জন্মের আশায় ইউরোপীয় নারীরাও ছুটে আসেন।