খাবারের দুনিয়ায় নতুনত্ব আনতে মানুষ কত কিছুই না করে। কোথাও চকলেট দিয়ে বিরিয়ানি বানানো হচ্ছে, কোথাও আবার আইসক্রিমে ঝাল মরিচ দেওয়া হচ্ছে। তবে এবার একেবারে ভিন্ন মাত্রার খবর— এক রেস্তোরাঁয় খাবারের সঙ্গে ফ্রি মিলছে চড়-থাপ্পড়! শুনে প্রথমে মনে হবে এটা বুঝি কোনো কমেডি সিনেমার দৃশ্য, কিন্তু না, ঘটনাটা আসলেই সত্যি।
খাওয়ার সঙ্গে বাড়তি অফার
আমরা সাধারণত রেস্তোরাঁয় গেলে খাবারের সঙ্গে বোনাস হিসেবে পাই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি, কনফারেন্স হলে ডিসকাউন্ট কুপন, কিংবা কফির সঙ্গে এক টুকরো বিস্কুট। কিন্তু জাপানের নাগোয়া শহরের এক রেস্তোরাঁয় মেনু কার্ডে লিখাই আছে— খাবারের পর চাইলে ফ্রি চড়! নাম দেওয়া হয়েছে ‘Nagoya Ladies Slap।’ এর দাম মাত্র ৩০০ ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২৫ টাকা)। তবে গ্রাহকের ইচ্ছা থাকলেই কেবল এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
কেন থাপ্পড়?
প্রশ্ন জাগতেই পারে—খাওয়ার পর মানুষ চড় খাবে কেন? রেস্তোরাঁর মালিকের ব্যাখ্যা, ‘মানুষ শুধু খেতে আসে না, আসে বিনোদনের খোঁজে। খাবারের পর একটা থাপ্পড় যেন স্ট্রেস রিলিফের মতো কাজ করে। এতে শরীর ব্যথা পায় না, বরং মনটা হালকা হয়ে যায়।’
অদ্ভুত হলেও, নিয়মিত ক্রেতারা বলছেন সত্যিই নাকি থাপ্পড় খেয়ে অনেকটা চাপ কমে যায়। কেউ কেউ তো বাড়তি টাকা দিয়ে তাদের পছন্দের সুন্দরী ওয়েট্রেসের কাছ থেকে থাপ্পড় খেতে চান!
বিশেষ সাজে ওয়েট্রেস
এই রেস্তোরাঁর ওয়েট্রেসরা পরেন জাপানি ঐতিহ্যবাহী কিমোনো। খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি তারা থাপ্পড় দেওয়ার জন্যও ট্রেনিংপ্রাপ্ত। চড় মারতে হবে এমনভাবে যাতে ব্যথা না লাগে, বরং একধরনের নাটকীয় মজা হয়। ফলে গ্রাহকরা হেসে গড়াগড়ি খান, ভিডিও করেন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে ভাইরাল করে দেন।
পুরুষই নয়, নারীরাও ভিড় জমাচ্ছেন
অনেকে হয়তো ভাবছেন, এমন জায়গায় শুধু পুরুষ গ্রাহকই ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, অনেক নারীও নাকি নিয়মিত যান এই রেস্তোরাঁয়। তাদের মতে, ‘অফিসের চাপ, সংসারের ঝামেলা সব মিলিয়ে একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা চাই। এখানে এসে হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই স্ট্রেস কমে যায়।’
ব্যবসায়িক সাফল্যের রহস্য
২০১২ সালে এই ব্যতিক্রমী কনসেপ্ট চালু করেছিলেন মালিক। শুরুতে মজা করে চালু করা হলেও পরবর্তীতে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া মেলে। এখন এই থাপ্পড়-খাওয়ার মেনুই তাদের মূল পরিচয়। যত বেশি ভাইরাল হচ্ছে, তত বাড়ছে ভিড়।
হাস্যরস না কি থেরাপি?
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এখানে আসলে প্রতীকী ‘আঘাত’ দিয়ে মানুষকে চমকে দেওয়া হয়, যা মনস্তাত্ত্বিকভাবে একধরনের মুক্তি এনে দেয়। আবার অনেকে বলেন, এর সঙ্গে খানিকটা নাটক, খানিকটা রোমাঞ্চও জড়িয়ে আছে।
যেখানে মানুষ খাবারের স্বাদ নিতে রেস্তোরাঁয় যায়, সেখানে কেউ যদি বলে— ‘চলেন, একটু থাপ্পড় খেয়ে আসি’— তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জাপানের নাগোয়ার এই রেস্তোরাঁ প্রমাণ করেছে, খাবার শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, বিনোদন আর নতুন অভিজ্ঞতার জন্যও হতে পারে।
তাহলে আগামীতে কী অপেক্ষা করছে? হয়তো কোনোদিন দেখা যাবে— ‘চা খেলে ঝাড়ি ফ্রি’ কিংবা ‘পিজ্জার সঙ্গে কিল ফ্রি’ অফার!