Thursday 16 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মিনার: গুঠিয়া মসজিদের রঙ বদলের খেলা

ফারহানা নীলা
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২৪

বরিশালের নাম শুনলেই প্রথমেই মনে আসে নদী, খাল আর সবুজ প্রকৃতির কথা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই জনপদে রয়েছে এক অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপনা— বায়তুল আমান জামে মসজিদ, যা গুঠিয়া মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত। শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবেই নয়, সৌন্দর্য ও স্থাপত্যের অনন্য সমন্বয়ে এটি এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো— এখানকার মূল মিনারটিকে এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মিনার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বরিশাল থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ

বরিশাল শহর থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার দূরে, উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে গড়ে ওঠা এই মসজিদ কমপ্লেক্সে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। পথে যেতে যেতে যে কোনো ভ্রমণকারীর চোখে পড়বে গ্রামের শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ, ফসলের ক্ষেত, আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বিশাল গম্বুজ আর মিনার। দূর থেকেই বোঝা যায়, এখানে কিছু একটা আলাদা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্বপ্ন থেকে বাস্তব

চাংগুরিয়ার ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু ছিলেন এই মসজিদের স্বপ্নদ্রষ্টা। ২০০৩ সালের বিজয় দিবসে তিনি কাজ শুরু করেন। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ একর জমির ওপর দাঁড় করান এই স্থাপনা। তিন বছরের নিরলস পরিশ্রম শেষে ২০০৬ সালে সম্পন্ন হয় মসজিদের নির্মাণকাজ। বলা হয়, প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিলেন এই স্বপ্ন পূরণে।

স্থাপত্যের অনন্য শৈলী

গুঠিয়া মসজিদের মূল ভবনে একসাথে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আর ঈদগাহ মাঠে জায়গা হয় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের। তবে এর জনপ্রিয়তার আসল রহস্য লুকিয়ে আছে এর গড়নে। ১৯৩ ফুট উচ্চতার মিনারটি দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গম্বুজ, কারুকাজ, রঙিন কাচ, দামি মার্বেল আর গ্রানাইট পাথরের কাজ দেখে মনে হয় যেন মোঘল স্থাপত্য আর আধুনিক নকশার মিলন ঘটেছে এখানে।

পবিত্রতার ছোঁয়া

মসজিদের প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে এক বিশেষ স্তম্ভ। এতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের ২১টি পবিত্র স্থানের মাটি এবং জমজমের পানি। কাবা শরিফ থেকে শুরু করে জাবালে নূর, মদিনা মসজিদ থেকে জান্নাতুল বাকি—প্রতিটি জায়গার মাটির উপস্থিতি যেন এই স্থাপনাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

দিনের বেলায় এক রূপ, রাতে আরেক

গুঠিয়া মসজিদের সৌন্দর্য ভিন্ন সময়ে ভিন্নভাবে ধরা দেয়। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের আলো যখন গম্বুজে পড়ে, তখন পুরো এলাকা সোনালি আভায় ঝলমল করে ওঠে। আর সন্ধ্যা নামলেই বদলে যায় দৃশ্যপট। লাল, সাদা, নীল, ফিরোজা—বিভিন্ন রঙের আলোকসজ্জা যেন মসজিদটিকে রূপকথার প্রাসাদে পরিণত করে।

প্রকৃতির কোলে

মসজিদের সামনে বিশাল দিঘি, চারপাশে ফুল-ফলদ বৃক্ষ আর ফোয়ারার জলছটা—সব মিলিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য এটি নিখুঁত এক ভ্রমণকেন্দ্র। এখানে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। এমনকি দরিদ্র ও অসহায়দের দাফনের জন্য রয়েছে বিনামূল্যের কবরস্থান।

সবার জন্য উন্মুক্ত

যদিও এটি একটি মসজিদ, তবে শুধু মুসলিম নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এখানে ভ্রমণে আসেন। কেউ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ঘুরতে আসেন, কেউ আবার ছবিতে বন্দি করতে চান এর অপূর্ব রূপ।

এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মিনার শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি বরিশালের গর্ব। ধর্মীয় উপাসনালয় হয়েও এটি মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে এক মহামিলনক্ষেত্র, যেখানে সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিকতা আর ভ্রমণের আনন্দ একসাথে মিশে যায়। তাই বরিশালে গেলে নদী-খাল দেখতে ভুলবেন না, তবে গুঠিয়া মসজিদ না দেখে ফেরত আসা একেবারেই অসম্পূর্ণ ভ্রমণ হবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর