বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। দিনটি অনেকের কাছেই এখনও তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু এই দিনকে কেন্দ্র করে পুরুষের স্বাস্থ্য, মানসিক সুস্থতা, পরিবারে তাদের অবদান, সমাজে তাদের দায়িত্ব—সবকিছুর প্রতি নজর দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। নারীদের মতোই পুরুষের জীবনে রয়েছে নানা চাপ, সংগ্রাম ও নীরব ত্যাগ। এই সফট ফিচারটি সেই অদেখা গল্পগুলোর কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা।
পুরুষ দিবসের সূচনা: কেন দরকার এই দিনটি?
১৯৯৯ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পুরুষ দিবস পালিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল মূলত—
পুরুষের স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ানো
মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা নিয়ে কথা বলা
সমাজ, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে পুরুষের ইতিবাচক ভূমিকা স্বীকৃতি দেওয়া
ইতিবাচক রোল মডেল তুলে ধরা
সময় বদলাচ্ছে। পুরুষদের ওপরও সামাজিক প্রত্যাশা ও দায়িত্বের চাপ বাড়ছে। অথচ আবেগ প্রকাশ বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তারা অনেক বেশি সংকুচিত। এই দিনটি সেই নীরবতা ভাঙার আহ্বান নিয়ে আসে।
নীরব দায়িত্ববোধের ভার
আমাদের সমাজে পুরুষকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়—
‘কাঁদলে চলবে না’,
‘শক্ত হও’,
‘চাপ সামলাতে জানতে হবে।’
এই ‘মাচো’ ধারণা অনেক সময় তাদের চোখে অদৃশ্য একটি মানসিক দেয়াল তৈরি করে দেয়। দায়িত্ব, সংসারের টানাপোড়েন, কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা—সব চাপ তারা নীরবে বহন করে। পরিবারের সুখের জন্য রাতজেগে কাজ করা কিংবা নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়া—এসব গল্প খুব কমই আলোচনায় আসে।
মানসিক স্বাস্থ্য: অবহেলিত এক ক্ষেত্র
গবেষণা বলছে— পুরুষেরা তুলনামূলক কম চিকিৎসা নেন, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হলেও তা প্রকাশ করেন না। এর ফলে তারা দ্রুত স্ট্রেস, বার্নআউট বা ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারেন।
পুরুষ দিবস সেই ভুল ধারণা ভাঙতে সাহায্য করে— ‘মনের কথা বলা দুর্বলতা নয়, বরং সাহস।’
পরিবারে পুরুষদের অবদান: দৃশ্যমানের বাইরেও অনেক কিছু
আজকের প্রজন্মের পুরুষরা সংসারে সমানভাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন—
সন্তানের যত্ন
রান্না-বান্না
গৃহস্থালির কাজ
সঙ্গীর সঙ্গে মানসিক সহযোগিতা
কিন্তু এখনও তাদের অনেক কাজ ‘কর্তব্য’ হিসেবে দেখা হয়, ‘অবদান’ হিসেবে নয়। পুরুষ দিবস সেই অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ।
নতুন প্রজন্মের পরিবর্তন
নতুন প্রজন্মের তরুণরা আগের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল, সচেতন ও দায়িত্বশীল। তারা লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকার কাঠামো ভেঙে সমতার পথে হাঁটছে।
ক্যারিয়ার ও পরিবার—দুটিই সামলানোর চেষ্টা
সম্পর্কের সীমারেখা ও সম্মান
আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ
এই সবকিছুই দেখাচ্ছে—পরিবর্তন ইতিবাচক।
পুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা: একটি অদৃশ্য অনুভব
পুরুষ দিবস কোনো প্রতিযোগিতা নয়—নারী বা পুরুষের মধ্যে তুলনা করারও জায়গা নেই এখানে। এটি কেবল একটি উপলক্ষ—
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা নীরবে আমাদের পাশে থাকে, পরিশ্রম করে, হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করে—তাদের প্রতি একটুখানি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের।
শেষ কথা
এই সমাজে প্রত্যেক মানুষই গুরুত্বপূর্ণ—নারী, পুরুষ, শিশু, প্রবীণ—সবারই আছে নিজস্ব সংগ্রাম, নিজস্ব গল্প। পুরুষ দিবস আমাদের শেখায়—
যত্ন, স্বীকৃতি, ভালোবাসা—এসব মানুষের জন্যই, কোনো লিঙ্গের জন্য নয়।
তাই আজকের দিনে একটি ছোট বার্তা—
হ্যালো, তুমি ক্লান্ত হলে একটু বিশ্রাম নাও। কথা বলতে চাইলে বলো। তুমি গুরুত্বপূর্ণ। তুমি মূল্যবান।