পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান। এভাবেই সুন্দরী পুতুলকে জীবনসঙ্গী করার জন্য তার বাবার কাছে সরাসরি আর্জি জানিয়েছিলেন।
ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান চাকরিকালে দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। ঠিক পাশেই একটি স্কুলে পড়তেন কিশোরী খালেদা খানম। আদরের নাম পুতুল। সময়টা ১৯৫৯ সাল। স্কুল থেকে সেনা ক্যাম্পের দূরত্ব ছিল খুব কম। কথা হতো চোখে চোখে, নীরবে। আর সেই নীরব পরিচয়ই ধীরে ধীরে রূপ নেয় গভীর প্রেমে।
পুতুল ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ছিল তার সৌম্যতা, সংযম আর শান্ত স্বভাব। দুজনেই একে অপরের প্রেমে বিভোর। কিন্তু খালেদার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবে কে?
সাহসী ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান কোনো ঘুরপথে যাননি। তিনি সরাসরি হাজির হন পুতুলের বাবার কাছে— ‘আমি আপনার জামাই হতে চাই।’
পুতুলের বাবা এমন প্রস্তাব শুনে থমকে গেলেন। তিনি ছিলেন রাশভারী চেহারার খুবই গম্ভীর একজন মানুষ। জানতে চাইলেন তুমি কি আসলেই বিয়ে করতে চাও?
কথা পাকাপাকি পারিবারিকভাবেই। কোন ঘটক নেই। জিয়াউর রহমান নিজেই ঘটক।
১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট, দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায়, পারিবারিক পরিবেশে সেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। পুরোপুরি একটি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। কিন্তু ভেতরে ছিল গভীর প্রেম। বিয়ের সময় খালেদা জিয়ার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।
বিয়ের আগে নাম ছিল খালেদা খানম, ডাকনাম পুতুল। বিয়ের পর তিনি নিজের নাম বদলে রাখেন খালেদা জিয়া। যে নাম একদিন দেশের ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে যায়।
খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ি ভারতের জলপাইগুড়ি শহরের নয়াবস্তিতে। এক অভিজাত ও বনেদি মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর খালেদা জিয়ার পরিবার জলপাইগুড়ি থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) দিনাজপুরে চলে আসেন।
জলপাইগুড়িতে তাদের এক সময়কার বিশাল বাগানবাড়ির একটি অংশ এখন বসতবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি আজও পরিচিত— ‘খালেদা জিয়ার জন্মভিটা’ নামে। যদিও বর্তমানে সেখানে পরিবারের কোনো আইনগত মালিকানা নেই।
কৃতজ্ঞতা: সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন