Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছবি কথা বলে…


৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৪১

।। হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট ।।

সগৌরবে একটি বছর পার করল সারাবাংলা ডটনেট। শুরু থেকেই আমাদের চেষ্টা ছিল, পাঠকদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ খবর পৌঁছে দেওয়া। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে একটি ‘ভিজ্যুয়াল মিডিয়া’ হিসেবে ছবি-ভিডিও কনটেন্ট উপহার দিতেও আমরা সচেষ্ট ছিলাম। একটি বছর পেরিয়ে এসে যখন সারাবাংলাকে নিয়ে পাঠকদের মন্তব্য শুনি, এটুকু বুঝতে পারি, আমাদের শ্রম তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সারাবাংলার প্রতি পাঠকদের আস্থার একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। সে কারণে এই একটি বছর সারাবাংলার সঙ্গে কাটিয়ে গর্ব অনুভব করি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- মিডিয়া ডায়েট করুন… থাকুন সারাবাংলার সাথে

সারাবাংলায় কাজ করছি ফটো করেসপন্ডেন্ট হিসেবে। আর কথায় বলে, একটি ছবি হাজার শব্দের সমান। হাজার শব্দের প্রতিবেদনে যে কথাটি ফুটিয়ে তেলা যায় না, অনেক সময় একটি ছবিই সেই ভাবটি সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলে পাঠকের সামনে। অনেক ছবিই প্রথম দর্শনে নিরীক্ষণী দৃষ্টি কাড়ে, মানুষকে আবেগী করে, বিশ্লেষণের তাড়না জাগায়, কিংবা ক্ষণিকের দৃষ্টিপাতে পাঠককে উদাস করে দেয়। ঠিক তেমন ছবিই ধারণ করতে সবসময় সচেষ্ট থেকেছি, চেষ্টা করেছি এমন ছবি তোলার যেটি একটি ছবি হিসেবেই পাঠকের মন কেড়ে নিতে পারে। বছর ঘুরে এসে তেমন কিছু ছবির কথাই মনে পড়ছে আজ।

আরও পড়ুন- ছুটে চলার একবছর

গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্ট এলাকায় আটক দুই কর্মীকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিএনপির কর্মীরা। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি শেষে খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে ওই ঘটনায় নেতাকর্মীরা প্রিজন ভ্যানে ভাঙচুর শুরু করে। এসময় এক পুলিশ সদস্য বাধা দিতে গেলে তাকে ঘিরে ফেলেন কর্মীরা। সেই পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে তার এক সহকর্মী এগিয়ে এলে তাদের দু’জনের ওপরও হামলা করেন এবং একটি অস্ত্র ভেঙে ফেলেন বিএনপিকর্মীরা। লাথি মারা হয় পুলিশ সদস্যকে। সারাবাংলার সে ছবি আলোচিত হয়।

বিজ্ঞাপন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত ৬ আগস্ট রাজধানী ঢাকার আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সারাবাংলার ক্যামেরায় ধরা পড়েন লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তি। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে লুঙ্গি পড়া ওই ব্যক্তির ছবি দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার। গত দুই দশকের রীতি অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের বাইরে বিরোধী দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের তেমন নজির নেই। যদিও সকলের প্রত্যাশা, সবাই নিজ নিজ সম্মান নিয়েই ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে। সেদিন ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে ক্যাম্পাসে ছিলেন দেশের দুই শীর্ষ ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তারই এক ফাঁকে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সারাবাংলার ক্যামেরায় উঠে আসা সেই ছবি সবার প্রত্যাশাতেই যেন আশার আলো জ্বালিয়ে দেয়— হ্যাঁ, এমন সহাবস্থানই তো আমরা চেয়েছিলাম।

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহ ধর্মঘটে  শ্রমিকদের উশৃঙ্খল আচরণ সমালোচনার জন্ম দেয়। যাত্রী ও চালকদের মুখে, পোশাকে গাড়ির ব্যবহৃত পোড়া মোবিল মেখে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। সারাবাংলার ক্যামেরাতেও ধরা পড়ে সেই ছবি। এর মধ্যে বিশেষ করে একটি ছবি আলোচিত হয়। মুখে পোড়া মোবিল লাগানো একজন চালক উশৃঙ্খল পরিবহন শ্রমিকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন। এই খাতের দীর্ঘদিনের চলমান নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলারই প্রতিফলন ছিল ছবিটি— পাঠকরা তেমনই রায় দিয়েছেন।

এই তো, গত ১৪ নভেম্বরের কথা। একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে চলছিল মনোনয়ন ফরম বিতরণের কার্যক্রম। একপর্যায়ে সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। শুরু করে গাড়ি ভাঙচুর। পুলিশ গাড়ি ছেড়ে দূরে সরে গেলে হেলমেট পরিহিত অন্তত তিন জন পুলিশের প্যাট্রল কারের ওপর উঠে ভাঙচুর চালায়। বোতাম খোলা কালো শার্ট পরিহিত এক তরুণ ভাঙচুর চালাচ্ছিলেন রীতিমতো বীরের ভঙ্গিতে। মুখোশ পরিহিত একজন ছিলেন খালি গায়ে। সবুজ টি-শার্ট পরিহিত অন্যজনের মুখ খোলাই ছিল। এমন একটি পরিস্থিতিতে সাদা শার্ট পরা এক তরুণ পুলিশের প্রাইভেট কারটিতে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িটি। সারাবাংলার ক্যামেরায় ধরা পড়া সে ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এর বাইরেও বিভিন্ন ইস্যুতে সচেতনতামূলক অনেক ছবি ছাপিয়েছে সারাবাংলা। সমাজের প্রান্তিক মানুষের দুঃখ, দুর্দশা নিয়েও ছবির গল্প রয়েছে আমাদের পাতায়। রয়েছে নিসর্গের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের ছবি। প্রতিটি ছবি যেমন একেকটি গল্প, তেমনি একেকটি ছবির পেছনেও ছিল আলোকচিত্রীদের নিজস্ব গল্প। সে গল্প না হয় আরেকদিন বলা যাবে। এখনকার মতো ছবির গল্পের পেছনের ব্যক্তিগত বেদনার অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করছি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ছিল সেদিন। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। সেদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে রাস্তায়। সাত রাস্তা থেকে বিএনপির মিছিল মগবাজার, কাকরাইল হয়ে যাচ্ছিল বকশীবাজারের দিকে। মগবাজার কাকরাইল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঠিক ওই সময় কাকরাইল মোড়েই ছিলাম, সঙ্গে ছিল মোটরসাইকেল। ঘটনাপ্রবাহের কারণে মোটরসাইকেলের দিকে খুব বেশি নজর দেওয়ার সুযোগ ছিল না। ঠিক এমনই একটি সময়ে আমার মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাই আমার হাতিয়ার, আর সেই মোটরসাইকেলটি ছিল ছবির সন্ধানে ডানা মেলে বেড়ানোর একমাত্র মাধ্যম। সেদিন চোখের সামনে বাইকটি পুড়তে দেখলাম, হাতের ক্যামেরাতেই তার ছবিও তুলতে হলো। একটু ঘুরে তখন হেয়ার রোডের কোণায় শোরগোল শুনে ফিরতে হলো ছবি তোলার কাজে!

পাঠকদের এতটুকু বলতে পারি, সংবাদের ক্ষেত্রে সারাবাংলা যেমন সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে সচেষ্ট, তেমনি সচেষ্ট ‘কথা বলা’ ছবি উপহার দিতেও। সেই চেষ্টায় আমাদের সঙ্গেই থাকুন— এটুকুই প্রত্যাশা। সারাবাংলার সকল পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

সারাবাংলা/টিআর

সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর