Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমি সবসময় এই দেশের মানুষের ভাষায় কথা বলতে চাই’- শবনম ফেরদৌসী


৮ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:৪২

২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে নির্মাতা শবনম ফেরদৌসীর ‘জন্মসাথী’। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছে একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর। এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে বাহাত্তরে জন্মগ্রহণ করা তিনজন যুদ্ধশিশুর কথা যাদের কথা সেভাবে প্রচার পায়নি কখনও।

এই সম্মাননা প্রাপ্তিতে নির্মাতার অনুভূতি জানতে সারাবাংলার কথা হল শবনম ফেরদৌসীর সঙ্গে। নিচে কথোপথনটি তুলে ধরা হল।

বিজ্ঞাপন

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাজনীন ফারজানা।

 

জন্মসাথী সুধীরের সাথে নির্মাতা

 

আপনার নির্মিত ‘জন্মসাথী’ চলচ্চিত্রটি ২০১৬ এর সেরা প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেল। আপনার অনুভূতি জানতে চাই সবার আগে।

শবনম ফেরদৌসী: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অনেক বড় সম্মান আমাদের দেশে। আমি ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার প্রত্যাশী মানুষ না। কিন্তু ‘জন্মসাথী’র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য বিশেষ ঘটনা। কারণ, এই প্রামাণ্যচিত্রে আমি এমন সব মানুষের গল্প তুলে ধরেছি যাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধশিশুরা বাস্তব, তাদের কথাই উঠে এসেছে জন্মসাথীতে। তাই জন্মসাথী সম্মানিত হওয়ার মানে এই মানুষরা সম্মানিত হলেন। এই জায়গাটা থেকেই এই পুরস্কার পাওয়াটা আমার জন্য দারুণ এক অনুভূতি।

জন্মসাথীর প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলুন।

শবনম ফেরদৌসী: এই প্রামাণ্যচিত্রে আমি তুলে ধরেছি এমন সব মানুষের কথা যাদের অস্তিত্ব নাই বলেই ধরে নিয়েছিলাম আমরা। স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলাম আমি। যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশে আমার সাথেই জন্ম নিয়েছিল অনেক শিশু। এসব শিশুর মা পাকিস্তানি সৈন্য কিংবা বাংলাদেশি রাজাকার আলবদরদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। সেই সত্য কেন যেন কেউ স্বীকার করতে চাইত না।

বিজ্ঞাপন

এসব শিশুর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমারও কোন ধারণা ছিল না দীর্ঘদিন পর্যন্ত। আমার বয়স যখন উনিশ কুড়ি তখন এসব শিশুর অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। পরে আমার মাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, আমি যে বছর জন্মালাম হলিফ্যামিলি হাসপাতালে, সে বছরই অর্থাৎ বাহাত্তরে বেশ কয়েকজন যুদ্ধ শিশুর জন্ম হয়েছিল। সবাই ভেবেছিল এসব শিশুদের সবাইকেই বুঝি বিদেশে এডপ্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসলে তা না। অনেকেই দেশে ছিল। যাদের কথা কেউ বলত না। এমনকি পঁচাত্তর পরবর্তী সরকার নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র যেখানে যুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন করা হত তা বন্ধ করে দেয়। এভাবেই যুদ্ধশিশুদের ইতিহাস আরও কিছুটা চাপা পড়ে যায়।

প্রামাণ্যচিত্র বানানোর জন্য অনেক বিষয়ই বেছে নিয়েছেন এতদিন। আজ যুদ্ধশিশু নিয়ে কাজ করলেন। বর্তমান বাস্তবতায় এধরণের বিষয় বেছে নেবার বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে কী?

শবনম ফেরদৌসী:  এমন না যে বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে ‘জন্মসাথী’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছি। এই বিষয় নিয়ে আমার কাজ করার আগ্রহ আরও আগে থেকেই ছিল।

শুরু থেকেই নানা বিষয় নিয়ে কাজ করলেও যুদ্ধশিশুদের নিয়ে কাজ করাটা আমি বলব একটু দেরিতেই হয়ে গেল। পরিকল্পনা থাকলেও শুরু করা যাচ্ছিল না। এর মাঝে ২০১৪ তে তিনজন যুদ্ধশিশুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় কাজটি দ্রুত শুরু করার অনুপ্রেরণা পাই। এক বছর তিনমাস লেগেছিল জন্মসাথী বানানোর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এবং যুদ্ধশিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরে সব মহল থেকে যেভাবে সাড়া পেয়েছি তাতে আমার মনে হয় কাজটা করা সার্থক হয়েছে। এখন সরকারসহ দর্শকদের মাঝ থেকেও বিপুল সাড়া পাচ্ছি। সবাই এখন যুদ্ধ শিশুদের ব্যাপারে আরও জানতে আগ্রহী।

জন্মসাথীর শুটিং এর মুহূর্ত

ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও কাজ করবেন কী?

শবনম ফেরদৌসী: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবশ্যই আরও কাজ করতে চাই। আসলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত গল্প আছে যার বলতে গেলে কিছুই আমাদের চলচ্চিত্রে উঠে আসেনি। সেসব গল্প উঠে আসা প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব কাজ আমাদের দেশে হয়েছে তার বেশিরভাগই তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার গল্প ব্রডার এঙ্গেলে বলেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানবিক গল্প হয়েছে হাতে গোনা। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতে কত মানুষের কত অভিজ্ঞতা, যা ক্যামেরায় উঠে আসা প্রয়োজন বলে মনে করি আমি। ‘জন্মসাথী’র কাজ করতে গিয়েই এমন অনেক গল্পের সাথে পরিচিত হয়েছি। আমিসহ আমাদের দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দায়িত্ব সেসব গল্প চলচ্চিত্রে তুলে আনা। কারণ, আমাদের দেশের যে প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে তারা চলে যাচ্ছেন। তাদের গল্পটা এখনও তুলে ধরতে না পারলে দেরি হয়ে যাবে। স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহন করে এসব গল্প তুলে ধরার দায়িত্ব আমারই কিংবা আমাদেরই যারা এই সময়ে চলচ্চিত্র বানাচ্ছি। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও কাজ করব।

এদেশে প্রামাণ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারির দর্শক কেমন? একজন চিত্রনির্মাতা হিসেবে কী মনে হয় আপনার? এই জায়গাটি কী সংশ্লিষ্ট মহল থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পায়?

শবনম ফেরদৌসী: নির্মাতা হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা বলে আমাদের দেশে ডকুমেন্টারির দর্শক আছে। এই প্রচারণাটা আসলে ঠিক না যে মানুষ ডকুমেন্টারি দেখে না। আমি বলব প্রামাণ্যচিত্রে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায়, নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পায় তাই এ ধরনের চলচ্চিত্রে নিজের সাথে বেশি রিলেট করতে পারে। এ কারণেই হয়ত প্রামাণ্যচিত্র দেখে লোকে। টিভিতে প্রচারিত হলেও দেখেছি ভালো টিআরপি পায়, এমনকি রিপিট টেলিকাস্টেও।

নারী মির্মাতা হিসেবে কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়?

শবনম ফেরদৌসী: নারী নির্মাতা হিসেবে সবচাইতে বড় যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই তা হল প্রচারের অভাব। আঠারো বছর ধরে কাজ করছি অথচ সেভাবে স্বীকৃতি পাইনি শুধুমাত্র নারী বলেই। আজ এসে পুরষ্কার, সম্মাননা পাচ্ছি দেখে মানুষ আমার কথা, আমার চলচ্চিত্রের কথা জানছে। অথচ আমার কাজের সংখ্যা নিতান্ত কম না। আমার জায়গায় কোন পুরুষ নির্মাতা থাকলে তিনি আরও বেশি পরিচিতি পেতেন। তাই বলব নারী নির্মাতা হিসেবে প্রচারের আলো কম পেয়েছি।

জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তি একটি বড় অর্জন- নিজের কাজের ক্ষেত্রটিতে এই পুরষ্কার আপনাকে কতটা অনুপ্রেরণা জোগাবে?

শবনম ফেরদৌসী: চলচ্চিত্র নির্মান আমার কাছে আরাধনার মত। এইসব পুরষ্কার, স্বীকৃতি না পেলেও আমি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই যেতাম। তারপরেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্তি একটি বড় ঘটনা কারণ, এর মাধ্যমে যুদ্ধশিশুরা সম্মানিত হয়েছেন, তারা তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি পেলেন।

একজন নির্মাতা হিসেবে সবসময়ই আমার চেষ্টা থাকে আমাদের দেশের মানুষের গল্প আমাদের ভাষায় তুলে ধরতে। আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে ভাবে, যে ভাষায় কথা বলে, যেভাবে তাদের আবেগ প্রকাশ করে তা তুলে ধরাটাই প্রাধান্য পেয়েছে আমার চলচ্চিত্র ভাবনায়। ফর্মুলা ফিল্ম তো অনেক হয়েছে আর হচ্ছে, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের জীবন কতটা উঠে আসে সেসব চলচ্চিত্রে? সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি মানুষের গল্প বলে যাই, মা ও মাটির গল্প মায়ের ভাষায় বুনে যাই।

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বোদ্ধারা সেটা বুঝুক না বুঝুক তা নিয়ে আমি ভাবিনা। বরং আমি মনে করি তাদের বোঝা উচিৎ আমাদের ভাষা। সবই তো তারা বোঝেন তাহলে আমাদের চলচ্চিত্রের ভাষা কেন বুঝতে পারেন না? আসলে তারা সচেতনভাবেই বুঝতে চাননা। হয়ত নিজেদের চলচ্চিত্র ভাবনাই যে শ্রেষ্ঠ তা তুলে ধরতে চান। তবে যাই হোক আমি এভাবেই কাজ করে যাবো, নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে। এইযে আজ ‘জন্মসাথী’র মাধ্যমে যুদ্ধসাথীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত হলেন এটাও আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

আবার এই ‘জন্মসাথী’ দেখার পরে যুদ্ধশিশুদের নিয়ে আরও অনেকেই কাজ করেছেন। তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী হয়েছে, আরও কাজ হচ্ছে। এভাবে অনেক যুদ্ধশিশুর গল্প, মুক্তিযুদ্ধের একটা জোর করে ভুলিয়ে দেওয়া অধ্যায় উঠে আসছে সেলুলয়েডের ফিতেয়। এটাও একজন নির্মাতা হিসেবে আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।

 

নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী

আপনার বর্তমান কাজ সম্পর্কে জানতে চাই।

শবনম ফেরদৌসী: ‘জন্মসাথী’র পর ৩ টি ছোট আকারের প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছি ইতোমধ্যে। এই মুহূর্তে ‘আজব কারখানা’ নামক একটি কাহিনীচিত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই চলচ্চিত্রটি সরকারি অনুদান পেয়েছে। এই কাহিনীচিত্রে একজন রকস্টারের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের গল্প তুলে ধরব। তুলে ধরা হবে তার আত্মঅনুসন্ধানের গল্প।

পেশাগতভাবে একটি দায়িত্বশীল পদে থেকেও চলচ্চিত্র নির্মান কাজ কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন?

শবনম ফেরদৌসী: আসলে আমি একজন কাজপাগল মানুষ। আলসেমি ব্যাপারটা আমার ধাতে নাই একদমই। আর কাজ করিও খুব দ্রুত। তাই পেশাগত দায়িত্ব সামলে নির্মানের কাজ সামলানো খুব একটা কঠিন না আমার জন্য। তাছাড়া আমার টিমও আমাকে দারুণ সাপোর্ট দেয়। আর আমি আসলে পুরোদস্তুর চলচ্চিত্রপ্রেমী একজন মানুষ। একান্ত আরাধনার মত চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যাই আমি। মানুষ অবসরে ঘুরতে যায়, কিংবা এখানে সেখানে বেড়াতে যায়। আর আমি অবসরেও নানারকম মুভি দেখি, নিজের কাজ করি, নির্মান কিংবা সম্পাদনা করি। কারণ এটাই আমার ভালবাসার জায়গা। অন্যদিকে কোন কাজকেই আমি ছোট মনে করিনা। সবকিছু নিজের হাতে করতে পছন্দ করি। সবমিলিয়ে পেশাগত দায়িত্ব আর চলচ্চিত্র নির্মান দুটো সামলাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়না আমাকে। তবে দুটো কাজ সামলাতে গিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যে সময় লাগার কথা তার থেকে একটু বেশি সময় হয়ত লেগে যায় আমার। কিন্তু তারপরেও আমি সন্তুষ্ট যেহেতু আমি কাজ করতেই ভালোবাসি।

নিজস্ব টিমের সাথে নির্মাতা

 

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে নারীর অবস্থান বিষয়ে জানতে চাই।

শবনম ফেরদৌসী: আমাদের দেশের অধিকাংশ চলচ্চিত্র নির্মাতাই পুরুষ। তাই তারা তাদের দৃষ্টিতে নারীকে যেভাবে দেখে সেভাবেই তাদের চলচ্চিত্রে নারীকে তুলে ধরেন। একজন নারী নির্মাতা যে দৃষ্টিকোণ থেকে একজন নারীকে তুলে ধরেন বা ধরতে পারেন একজন পুরুষ নির্মাতা সেটা পারেননা।

অথচ চলচ্চিত্র নির্মাতার আসলে কোন জেন্ডার নাই। তিনি মানুষের গল্প তুলে ধরবেন, তেমনটাই হওয়ার কথা। একজন নারী নির্মাতা হিসেবে আমি কী পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি জানিনা? জানি অবশ্যই আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি আর ভাবনাই তুলে ধরতে চেষ্টা করব আমার চলচ্চিত্রে। ঠিক তেমনিভাবে পুরুষ নির্মাতারাও পারেন নারীর প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরতে।

সব চলচ্চিত্রেই যে নারীকে দুর্বল, অসহায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে তা নয়। অনেক চলচ্চিত্রেই নারীকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। নারীরা কর্মক্ষেত্র, রাজনীতিসহ মাঠ পর্যায়েও দারুণ ভূমিকা রাখছেন কিন্তু তা সেভাবে উঠে আসছে না।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন নারী নির্মাতার চোখে নারীদের প্রকৃত অবস্থান আরও ভালোভাবে উঠে আসবে বলেই আমি মনে করি।

 

ফিচার ফটো – বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা টেপরী বেওয়ার সাথে নির্মাতা

 

 

সারাবাংলা/আরএফ/এসএস

 

 

 

 

 

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর