ইষ্টিকুটুমের মিলনমেলায়
২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:২৮
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী জেলা ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশাল আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সবুজের সমরোহে বেষ্টিত। যেখানে হাজার হাজার পাখিদের মিলন মেলা। শীতের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান এলাকায় দেখা মিলে ‘বেনে বউ বা ইষ্টি কুটুম’ পাখির। মনে হচ্ছে বাসা থেকে বের হয়ে রোদ পোহাতে এসেছে। এ পাখি সম্পর্কে নানা জনের নানা মত রয়েছে। তেমনি গ্রামের সাধারন মানুষ মনে করে, ‘কারো বাড়ির আঙ্গিনায় যদি ইষ্টি কুটুম পাখি ডাকে তবে সেই বাড়িতে কুটুম বা মেহমান আসবে’। এ চিরায়ত ধারনাটি যেন মানুষের যুগ যুগ ধরে ধারনা করে আসছে।
‘কালোমাথা বেনে বউ’ এক প্রজাতির হলুদ বৃক্ষচর পাখি। হলদে পাখি (বৈজ্ঞানিক নাম: Oriolus xanthornus) (ইংরেজি: Black-hooded Oriole) বা এরা ইষ্টিকুটুম পাখি নামেও পরিচিত। হলুদ সোনাবউ পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪৩ লাখ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এরা বিস্তৃত।
আকারে দেখতে ইষ্টিকুটুম ময়নার মতো, উজ্জ্বল হলুদ ও কালো রঙের পাখি। মাথা গলার রং, ডানা ও লেজের মাঝের পালকগুলোর রং কালো হয়। বাকি দেহ হলুদ রঙের। চঞ্চুর রং গোলাপি ও চোখের রং রক্তবর্ণ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি একই ধরনের দেখতে হয় কিন্তু স্ত্রী পাখির মাথার কালো রং কম উজ্জ্বল। অপরিণত পাখিদের কপালের রং হলুদ হয় ও কালো মাথায় হলুদ দাগ দেখা যায়।
ইষ্টিকুটুম হিমালয়ের পাদদেশে সমতলের ও পাহাড়ের বাসিন্দা। ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারে দেখা যায়। স্থানীয় পরিযায়ী পাখি। খাদ্য হিসেবে ইষ্টিকুটুম ফল, জামজাতীয় ফল, কীটপতঙ্গ ও ফুলের মধু গ্রহণ করে।
ইষ্টিকুটুম বৃক্ষচারী পাখি। একা বা একজোড়া পাখিকে গাছপালাযুক্ত অঞ্চলে পত্রাচ্ছাদিত গাছে দেখা যায়। মানুষের বসতির কাছেও বসবাস করে। পার্কে বা বাগানে গাছের ওপর থেকে ডাকতে দেখা যায়। বাঁশির মতো সুরে ‘হোয়াই-ইউ’ বা ‘হোয়াই-ইউ-ইউ’ করে ডাকে। কর্কশভাবে ‘কোয়াক’ করেও ডাকে যা শুনতে অনেকটা হাঁড়িচাচার মতো শোনায়।
এপ্রিল থেকে জুলাই ইষ্টিকুটুমের বাসা বানাবার সময়। ঘাস, গাছের তন্তু ও মাকড়শার জাল দিয়ে সুন্দর কাপের মতো বাসা বানায়। ২ থেকে ৩ টি গোলাপি সাদা রঙের ডিম দেয় যার ওপরে কালো বা লালচে-বাদামী ছিট থাকে।
প্রচ্চদে ব্যবহৃত ‘কালোমাথা বেনে বউ’ পাখির ছবিটি মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ জেলার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান এলাকা থেকে তোলা।
লেখক: লেখক এবং ফটোগ্রাফার
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি