কেবল না খেয়ে থাকলেই রোজা হয় না
৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০১
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত রোজা। এর দ্বারা খোদাভীতির যে পরাকাষ্ঠা দেখানো হয় তা অন্য কোনো ইবাদতে সম্ভব নয়। এ জন্য রোজাদারকে আল্লাহ ভালোবাসেন। তবে রোজার দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য ও কৃপা তখনই লাভ করা সম্ভব যখন রোজা হবে নিষ্কণ্টক। এ জন্য রোজাদারকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখতে হবে আল্লাহর নির্দেশনার দিকে। শরিয়তের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে প্রতিক্ষণ। প্রকৃত রোজাদারের সারাটি দিনই ইবাদততুল্য। বাহ্যিকভাবে কোনো ইবাদত না করলেও ধ্যান-ধারণায় সবসময় ইবাদতের খেয়াল জাগরুক রাখতে হবে।
রোজাদারের সর্বপ্রথম দায়িত্ব রোজার বাহ্যিক দাবিগুলো পূরণ করা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা। পাশাপাশি প্রবৃত্তি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যাবতীয় অবৈধ কামনা-বাসনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। পেটকে যেমন খাদ্যচাহিদা পূরণ থেকে বিরত রাখবে তেমনি জিহ্বাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমন যেন না হয়, ক্ষুধায় পেটে জ্বালাপোড়া শুরু হলো কিন্তু মিথ্যা, পাপাচার, কুৎসা ইত্যাদি দ্বারা জিহ্বা সজীব হয়ে উঠল।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ মিথ্যা কথা বলা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করলে তাকে শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি) বাকসংযম করতে না পারলে রোজার প্রকৃত দাবি পূরণ হলো না।’
যারা অধিক বাকপ্রবণ রোজার দিনে তাদের জিহ্বার লাগাম টেনে ধরতে হবে। বৈঠক মাতানোর বাসনা নিবারণ করতে হবে। প্রয়োজনে রমজানে আজেবাজে বৈঠক পরিত্যাগ করা উচিত। যেখানে গেলে জিহ্বা খোরাক পেয়ে যেতে পারে সে স্থানে যাওয়াই অনুচিত। যাদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাদের জন্য রাসুল (সা.) এর ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে যথাসম্ভব কম কথা বলা। তিনি বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে সব ধরনের আপদ-বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকে। তবে উত্তম কথা ও দ্বীনের আলোচনা অধিকহারে করতে পারলে জিহ্বা রোজার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’
রোজাদার তার আচরণ মার্জিত রাখবে। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগা ও পিপাসা পাওয়া স্বাভাবিক। এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে ফুটে না ওঠে। অযথা রাগারাগি ও বাজে আচরণ রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে। এর কারণে রোজার প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হওয়ারও আশঙ্কা আছে। রোজা রেখে আগবাড়িয়ে ঝগড়া ফাসাদ কিংবা কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। কেউ রোজাদারের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে ঝামেলা বাধাতে এলে সরাসরি তাকে জানিয়ে দেবে, ‘আমি রোজাদার, আপনার সঙ্গে কোনো কিছুতে জড়াতে চাই না।’
হাদিসের এ নির্দেশনা পালন করলে আশা করা যায় কেউই রোজাদারকে উত্ত্যক্ত করতে পারবে না। কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় কোনো হানা-হানিতে জড়িয়ে গেলে উপোস থাকা হবে বৃথা। কারণ রোজার প্রধান দাবি সংযমই হলো না।
রোজাদারের ধ্যান-ধারণাতেও যেন কোনো অন্যায় কাজ প্রশ্রয় না পায়। এ ধরনের কোনো কিছু মনে উদয় হলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলা উচিত। অনেকে রোজা রেখে মানুষের অনিষ্ট করার ফন্দি আঁটতে থাকেন। কাকে কীভাবে ফাঁসানো যাবে এই চিন্তায় বিভোর হন। এটাও রোজার দাবির পরিপন্থী। প্রকৃত রোজাদার থেকে মানুষেরা নিরাপদ থাকবে এটাই কাম্য।
রোজার মাস মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। রোজাদার নানামুখি ইবাদতের মাধ্যমে রমজানকে কাজে লাগাতে পারলে একটি রমজানই জীবনের সফলতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট। রমজানে প্রতিটি ইবাদতের জন্যই ন্যূনতম ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। রোজাদারের জন্য উচিত বেশি বেশি নফল ইবাদতে মনোনিবেশন করা। বিশেষত কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা ইত্যাদি অধিকহারে করা। সারা বছরের আমলে যে ত্রুটি রয়েছে তা এই মাসের নফল ইবাদতের দ্বারা পূরণ হতে পারে। মূলত রোজাদারের সারাদিনই ইবাদতের শামিল। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত রোজার প্রকৃত হক আদায় করে রোজার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
সারাবাংলা/এসবিডিই