রোজায় পণ্যের দাম: দেশে বাড়ে, বিদেশে কমে
১৪ মে ২০১৯ ১৭:২৬
রোজার মাসে দেশের বাইরে থাকা এই প্রথম। দেশে ইফতারের আগে বেশ হাঁকডাক চলে। ইফতারের আগে নগরবাসীর যানজট ঠেলে সময় মতো ঘরে ফেরার তাড়া। রোজার দিনের এসবের ভোগান্তি সবার জানা। তারপরও সবার সাথে ইফতারে মিললে সবাই ভোলে সব ভোগান্তি। প্রবাস জীবনে এসব অনুপস্থিত। বিদেশ অবশ্য মুসলিম দেশ না হলে রোজার মাস কী না তাই বোঝা দায়। প্রথম রোজার দিনেই পা ফেলেছি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে। এ নগরীতে রমজানের হাবভাব বোঝার কথা নয়। তারমাঝেও ব্যাতিক্রম চোখে পড়ে। সেদিন কোলস্ সহ বেশ কিছু শপিং মলে গিয়ে দেখলাম রমজানকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সেই সাথে ইফতারে কাজে লাগে, রোজাদাররা ইফতারে খেতে পছন্দ করেন এমন অনেক পণ্যের দামে ছাড় দেয়া হয়েছে। বিশেষত জুস ও জেলি ড্রিংস্। বলা হয়েছে, ৫ মে থেকে ৪ জুন মানে গোটা সংযমের মাসেও চলবে দামের সংযম। পণ্য ভেদে দুই থেকে আড়াই ডলার পর্যন্ত দাম কমানো হয়েছে। বলা যায় রোজাদারদের সম্মান জানানো হচ্ছে এ অফারের মধ্য দিয়ে।
উন্নত দেশের সংস্কৃতিতে অফার সেল নতুন কিছু নয়। বড় দিনের ছাড়, ইস্টার ডে সেল, মাদার্স ডে সেল, ফাদার্স ডে সেল, গ্র্যান্ড ফাদারর্স ডে সেল, লেবার ডে সেল এসব চলতেই থাকে। এমন কী ডগ ডে নাম দিয়েও সেল চলে। মানুষজন অপেক্ষায় থাকে কখন সেল আসবে, তারা বোঝাই করে প্রয়োজনীয় জিনিস সব কিনতে পারবেন।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন দীর্ঘদিন ধরে বাস করেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ইসকান্দার আলম চৌধুরী। মূল শহর থেকে দূরে ডেনডিডং এর বাসিন্দা তিনি। তাঁর কাছে জানতে চাইছিলাম রমজানে মেলবোর্নের মলে শপে ইফতার সামগ্রিতে দাম কমানোর প্রচলন কবে থেকে?
তিনি জানালেন, দুই এক বছর ধরে তিনি এমন প্রবণতা দেখতে পাচ্ছেন। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, মুসলিম জনসংখ্যা মেলবোর্নে দিন দিন বাড়ছে। সেকারণে মুসলিম ক্রেতাদের দিকে আলাদা করে নজর দিতে বাধ্য হচ্ছেন চেইন শপ মালিকরা।
তাছাড়া স্থানীয় রাজনীতি ভোটের সমীকরণের কথাও মনে করিয়ে দিলেন, তরুণ ব্যবসায়ী শাহেদ ইমরান চৌধুরী। বললেন, ভোটের মাঠে মুসলিমদের ভোট মূল্যবান। সেকারণেও এমন যত্নআত্নি বা মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো এক বিশেষ কৌশলও বলা যায়।
শাহেদের মতে বাজার অর্থনীতিতে নৈতিকতার স্থান নেই। যেখানে মুনাফা সেখানেই গুরুত্ব। তাঁর বাইরে এমন প্রবণতাও একেবারে নতুন নয়। জানা গেলো, নানান ধর্মালম্বী মানুষের বাস এ দ্বীপ মহাদেশে। সবই প্রায় অভিবাসী মানুষ। মেলবোর্ন শিক্ষা নগরী হওয়ায় শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সংখ্যাও কম নয়।
চল্লিশ লাখ মানুষের এ শহরে পাঁচ লাখের বেশি মুসলিমের বাস। যারা এসেছেন পৃথিবীর ৬০টি দেশ থেকে । ক্যাঙ্গারুর দেশে গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা। মুসলিম নাগরিকদের সংখ্যাও বাড়ছে।
তবে, বাংলাদেশি প্রবাসি সাহেদ আর ইসকান্দার দুইজনই বললেন, মুসলিম জনগোষ্ঠির সংখ্যা বাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার মূল জনগোষ্ঠীর কট্টরপন্থিরা বিষয়টি খুব সহজভাবে নিচ্ছে না।
মুসলিমদের জন্য বেশি সুবিধা বা সহানুভূতি দেখানোর পক্ষে নন তারা। তবে কট্টরপন্থিদের বাইরে সহানুভূতিশীল, সহমর্মী মানুষের সংখ্যাই বেশি। যারা মনে করেন কেবল ধর্ম দিয়ে কাউকে বিচার নয়, মানুষে মানুষে ভাতৃত্ববোধ আর ব্যাক্তিস্বাধীনতাও অন্যতম বিবেচ্য।
তবে অবাক করা বিষয় হলো মেলবোর্নে বাঙালি মুসলিমদের দোকানে রমজান উপলক্ষ্যে পণ্যমূল্যে ছাড় চোখে পড়েনি! তারা কি তাহলে বাংলাদেশের অভ্যাস পাল্টাতে পারেন নি!
মাহবুব স্মারক: সংবাদকর্মী, মেলবোর্ন অস্ট্রলিয়া
সারাবাংলা/এমএম