আপনি কি কখনো এমন মুহূর্তে পড়েছেন, যখন চারপাশের সবকিছু ভারী মনে হয়? মাথার ভেতর হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খায়, বুকের ভেতর অজানা চাপ জমে থাকে, মনে হয় সব কিছুই ভেঙে পড়বে।
এমন সময় আমরা অনেকেই একা হয়ে যাই। শুন্যতা চেপে বসে, মনে হয় কেউ নেই, কেউ বুঝবে না, আশা হারিয়ে যাচ্ছে, আর চারপাশের শব্দগুলোও যেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে। দিক নির্দেশ হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, এক ধরনের শূন্যতার ভাব, কখনও কখনও আমাদের বোঝা ভারের চেয়েও বেশি মনে হয়।
কিন্তু জানেন কি? এমন মুহূর্তের সমাধানটা অনেক সহজ— ছোট্ট একটু আলিঙ্গন!
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলিঙ্গন বা হাগ হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধ। যখন আমরা কাউকে জড়িয়ে ধরি, তখন শরীরে অক্সিটোসিন নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। একে বলা হয় ‘লাভ হরমোন’ বা ‘হ্যাপিনেস হরমোন’।
এই অক্সিটোসিন আমাদের দুশ্চিন্তা কমায়, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক করে, এমনকি রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে আনে। শুধু তাই নয়, একে বলা হয় একটি ‘মানসিক শান্তির হরমোন’— যা আমাদের মনকে প্রশান্ত রাখে।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো— একটা আলিঙ্গন শরীরে সেরোটোনিন বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে। অন্যদিকে, কর্টিসল নামের যে হরমোন স্ট্রেস তৈরি করে, সেটার মাত্রাও কমে যায়। ফলে আমরা মানসিকভাবে অনেকটা হালকা হয়ে যাই।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন অন্তত কয়েক মিনিট প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করলে মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। এমনকি গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত আলিঙ্গন করে তারা সহজে একাকিত্বে ভোগে না, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী থাকে।
ভাবুন তো, একটা ছোট্ট আলিঙ্গন— কত বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে আমাদের শরীর আর মনের ভেতরে! আলিঙ্গন মানে শুধু ভালোবাসা নয়, বরং একে অপরকে নিরাপত্তা দেওয়া, ভরসা দেওয়া।
তাই যদি কখনো আপনার মন খারাপ হয়, মনে হয় চাপ সামলাতে পারছেন না— তাহলে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন। দেখবেন, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই অস্থিরতা কমে গিয়ে এক ধরনের প্রশান্তি নেমে আসবে।
মনে রাখবেন— ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া মানে শুধু অন্যকে নয়, নিজেকেও সুস্থ ও সুখী রাখা।
তাহলে আজ থেকেই শুরু হোক— ভালোবাসার এই সহজ অভ্যাস। কারণ, কখনো কখনো একটা আলিঙ্গনই হতে পারে জীবনের সেরা ওষুধ।