ভালোবাসা মানে শুধু দু’জন মানুষের সম্পর্ক নয়, বরং বিশ্বাস, সম্মান আর বোঝাপড়ার এক সুন্দর বন্ধন। কিন্তু যখন এই বন্ধনের ভেতর হঠাৎ তৃতীয় কারও উপস্থিতি অনুভূত হয়— তখন সম্পর্কের ভিত কেঁপে ওঠে। সেটা হয়তো একজন বন্ধুর মতো, সহকর্মীর মতো, বা পুরনো পরিচিত কেউ হতে পারে। তবু প্রশ্নটা থেকে যায়— এখন কী করব?
চলুন দেখি, এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে শান্ত মাথায় এবং সম্মান রেখে সম্পর্কটিকে টিকিয়ে রাখা যায়।
সম্পর্কের অ্যালার্ম বাজলে থেমে যান
অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না— তৃতীয় ব্যক্তিটি ঠিক কখন, কীভাবে প্রবেশ করেছে। হঠাৎই অনুভব করি, প্রিয়জন দূরে সরে যাচ্ছে, কথোপকথনে আগ্রহ কমে যাচ্ছে, বা বারবার কারও নাম উঠে আসছে।
করণীয়:
নিজেকে শান্ত রাখুন।
আগে মনোযোগ দিন বোঝার দিকে।
একদিন সময় নিয়ে সোজাসুজি কিন্তু শান্তভাবে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলুন।
উদাহরণ:
মিতা লক্ষ্য করল তার সঙ্গী রাজীব হঠাৎ করে অফিসের এক সহকর্মীকে নিয়ে অতিরিক্ত কথা বলছে। সন্দেহ নয়, কৌতূহল থেকেই সে একদিন জিজ্ঞেস করল— ‘তোমাদের বন্ধুত্বটা বেশ ভালো মনে হচ্ছে, কেমন মানুষ ও?’ রাজীব খোলামেলা কথা বলল, এবং অস্বস্তির জায়গাটা একসাথে আলোচনা করল। ফলাফল— বিশ্বাস আগের চেয়ে দৃঢ় হলো।
খোলামেলা যোগাযোগই মূল
সন্দেহ, ক্ষোভ, বা ঈর্ষা— এই তিনটি অনুভূতিই সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই নীরব রাগ জমিয়ে না রেখে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলুন।
করণীয়:
দোষারোপ না করে ‘আমি অনুভব করছি…’ দিয়ে কথাটা শুরু করুন।
অপরজনের কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
প্রয়োজনে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির সীমা ঠিক করে নিন।
নিজের ভেতরও তাকান
কখনো তৃতীয় ব্যক্তির আগমন শুধু সম্পর্কের দুর্বল দিকগুলোকে প্রকাশ করে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন:
আমরা কি যথেষ্ট সময় দিচ্ছি একে অপরকে?
আগের মতো যত্ন, মনোযোগ দিচ্ছি তো?
সম্পর্কটিকে নতুনভাবে সাজানো দরকার কি না?
পরামর্শ:
একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যান, পুরনো দিনগুলোর মতো একসাথে কিছু করুন— হয়তো একটি সিনেমা, ডিনার, বা নিছক হাঁটা। অনেক সময় ছোট্ট কিছু মুহূর্তই বড় সংকট দূর করে।নিজে থেকে তার সম্পর্কে পজিটিভ বিষয়গুলো ভাবতে থাকুন। তার ভালো দিকগুলো স্মরণ করতে থাকুন।তার সাথে কাটানো ভালো মুহূর্তগুলো নিজের মতন করেই ব্রেনে নিতে থাকুন যে তার এই কাজটি ভালো ছিল। নতুন করে আবারও তারই
প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন
যদি মনে হয় সম্পর্কটা জটিল হয়ে গেছে, কথা বলেও বোঝাপড়া হচ্ছে না— তাহলে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। সম্পর্ক পরামর্শদাতারা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়টি দেখতে পারেন এবং আপনাদের উভয়কেই বোঝাতে সাহায্য করতে পারেন।
সবশেষে: ভালোবাসা মানে মালিকানা নয়
মনে রাখবেন, ভালোবাসা কাউকে বাঁধা দেওয়া নয়— বরং তাকে বোঝা, সম্মান করা। সম্পর্কের ভেতর তৃতীয় কেউ প্রবেশ করলে সেটিকে ব্যর্থতা নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখুন— যাতে দুজন মিলে সম্পর্কটাকে আরও শক্ত, আরও সুন্দর করে তোলা যায়।
ভালোবাসা ও সম্পর্ক নিজের মধ্যেই
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার যাত্রা ঠিক গাছের মতো— ভালোবাসা হচ্ছে জল, বোঝাপড়া হচ্ছে সার, আর বিশ্বাস হচ্ছে শিকড়। মাঝে মাঝে ঝড় এলেও, যদি যত্ন ঠিক থাকে, গাছটা টিকে যায়— আর ফুল ফোটে আগের চেয়েও সুন্দরভাবে।