Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাকালে শিশুদের দিনকাল।।১ম পর্ব।।রুটিনমাফিক জীবন


২৩ এপ্রিল ২০২০ ১৪:২৩

গত ডিসেম্বর থেকে বিশ্বময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঘাতক করোনাভাইরাস কোভিড-১৯। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও চলছে সাধারণ ছুটি। মার্চের শুরু থেকেই বন্ধ স্কুল-কলেজ। ফলে নিত্যদিন সকাল থেকে রাত নিদারুণ ব্যস্ততায় কাটত যাদের দিন তারা আজ চারদেয়ালে বন্দী। স্কুল, কোচিং, টিউশন, হোমওয়ার্ক, ছুটির দিনে বাইরে যাওয়া, বাইরে খাওয়া, স্ন্যাকস, ফাস্টফুড ইত্যাদি নিয়েই ছিল অধিকাংশ শহুরে শিশুর জীবন।

এই ছুটিতে ঘরে আবদ্ধ হয়ে সেই তারা কেমন আছে? একদিকে তাদের স্বাভাবিক জীবন যেমন থমকে গেছে অন্যদিকে বাইরে যেতে না পারে অস্থির হয়ে উঠছে তারা। এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে কিছু কিছু শিশুর পড়াশোনা শুরু হয়েছে। সেটুকু বাদ দিলে আর কীভাবে কাটছে তাদের জীবন?

বিজ্ঞাপন

সারাক্ষণ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার এক ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাদের। কারণ, এদের বেশিরভাগই ছিলেন কর্মজীবী ব্যস্ত বাবা-মা। সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন হয়ত শিশুদের সময় দিয়েছেন তারা। এখন তাদের অনেককেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম অর্থাৎ ঘরে বসেই নিয়মিত অফিস করা লাগছে। আবার অন্যদিকে শিশুদের জীবনের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তা আর সুস্থতার বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত তারা। তাই আসুন দেখে নেই আপনার শিশুর সঙ্গে কিরকম আচরণ করবেন ও তাদের জীবনযাপন কেমন হবে। ধারাবাহিকভাবে জানতে পারবেন সারাবাংলায়। আজ থাকলো প্রথম পর্ব।

প্রতিদিনের একই পরিবেশ, একই খেলনা, খাবারের তাগিদ, ঘুম, খেলা করতে করতে একটি শিশুর বিরক্তি আসাটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের দিনযাপনে বৈচিত্র্য আনা খুবই দরকার। কিন্তু যেহেতু বাইরে যেতে পারছেন না তাই ঘরেই কিছু কৌশল ও পরিকল্পনা শিশুদের একঘেয়েমিতা দূর করতে পারবে। সেই সঙ্গে তাদের আগ্রহী ও উদ্যোমি করে তুলতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

একটি শিশুর সারাদিনের কার্যক্রম অর্থবহ করতে তুলতে প্রতিটি অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কী করবে সেটি রুটিন করে দিতে হবে ও কঠরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সময় বন্টন করে না দিলে শিশুদের মধ্যে একসময় হতাশা ও একঘেয়েমিতা চলে আসতে পারে। সে বারবার জানতে চাইবে, ‘আমি এখন কী করবো?’

আসুন দেখে নেই কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

  • শিশুদের পাশাপাশি সারাদিন বাসার কে কী করবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এবং ডেইলি রুটিন অনুযায়ী সময় বন্টন করতে হবে। বাসার সবার সঙ্গে আলোচনা করে রুটিনের কাজগুলো ভাগ করে নিতে হবে। বয়স অনুযায়ী প্রত্যেকের কাজের দায়িত্ব ভাগ করা থাকবে।
  • আপনার শিশুকে একসঙ্গে সব খেলনা দিয়ে খেলতে দেবেন না। সেগুলো পরিষ্কার করে তাদের চোখের আড়ালে কোথাও তুলে রাখুন। তারপর অল্প অল্প করে অদল বদল করে বের করে দিন। এভাবে খেলনা বদলে দিলে তারা নতুন করে আনন্দ পাবে।
  • একটু বড় শিশুদের/কিশোর-কিশোরীদের জন্য গল্পের বই, ছবির বই, বিজ্ঞানের বই, সাধারণ জ্ঞানের বই, ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষার বই, উপদেশ, পরামর্শ এক সাথে পড়া ও শোনা উপভোগ করা।
  • ছবি আঁকার সরঞ্জাম, ডো, পাজেল, লুডু, কেরাম, দাবা ইত্যাদি সংগ্রহ রাখা।
  • টিভিতে কার্টুন, মোবাইলের গেমস, ট্যাব ইত্যাদি দেখতে দিলে সময় নির্দিষ্ট করে দিন। এই অবসরে তারা যেন কিছুতেই ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্ত না হয়ে যায় লক্ষ রাখুন। এটি ঠেকাতে সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর চাইল্ড লক অন করে রাখুন। এতে তাদের সামকনে এডাল্ট কন্টেন্ট আসবে না।
  • ঘরে সংস্কৃতি চর্চা, আবৃত্তি, নাটক, অভিনয় চর্চা করা করা যেতে পারে।
  • মজার মজার খাবার তৈরি শেখাতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খাবার তৈরির আনন্দ প্রতিযোগিতা চলতে পারে।

এই বিনোদন বিষয়গুলো দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে এমনভাবে  ভাগ করে দিতে হবে যাতে শিশুদের দেওয়া ছোট ছোট কাজের দায়িত্বগুলো এর সঙ্গেই মিশে যায়। এভাবে কাজ করতে করতে তারা দায়িত্ববান হয়ে উঠবে।

আপনার শিশু যদি এগুলো করতে না চায় সেক্ষেত্রে কী করবেন? শিশুকে ঘরের কাজে বা অন্যান্য দায়িত্ব পালনে আগ্রহী করে তুলতে বিনিময় ব্যবস্থা চালু করতে পারেন। অর্থাৎ তাদের প্রতিটা কাজের জন্য তাদের উপহার বা অর্থ দিতে পারেন। ছোট শিশুদের অর্থ দিলে সেটি জমা করে রাখার বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। এমনকি সেই টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করতে পারে তাও বুঝিয়ে বলুন। এভাবে তারা কাজের ব্যাপারে উৎসাহী হবে।

অর্থ ছাড়াও বিনিময় আর ভিন্নভাবেও করা যাবে কিশোর কিশোরীদের জন্য। টোকেন, মোবাইলের সময় বরাদ্দ, গেমসসের সুযোগ ইত্যাদি। লক্ষ্য রাখতে হবে শিশুদের আগ্রহ, পছন্দ প্রাধান্য পেলে ও তাকে দায়িত্বশীল হবে। তাই তাকে স্বাবলম্বী করার ‘এই নিবিড় সময়’ কে কাজে লাগাতে হবে।

একটু শিশু লেখাপড়ায় ভাল ফলাফল করার পাশাপাশি পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে যেন গড়ে ওঠে সেটিও দেখতে হবে। এর জন্য খেয়াল রাখুন যাতে সে নিজের কাজ নিজে করা ও সংসারের কিছু কাজেও যেন দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়, যা তার পরিপূর্ণ বিকাশ সম্পন্ন করবে। একজন সফল মানুষের বৈশিষ্ট্য এরকমই হয়ে থাকে। চলবে…

 

ড. মনোয়ারা পারভীন – কনসালট্যান্ট সাইকোলজিস্ট,  সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর, সাবেক জেষ্ঠ্য মনোবিদ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল

করোনাকাল করোনাকালে শিশুদের দিনকাল করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ রুটিনমাফিক জীবন শিশুর দিনকাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর