করোনাকালে যেভাবে ঘরে বসেই দাঁতের যত্ন করবেন
১৩ জুন ২০২০ ১৫:১১
করোনাভাইরাস সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই একান্তই জরুরি অবস্থা (Dental Emergency) ছাড়া ডেন্টাল ক্লিনিকে যাওয়া বা ডেন্টিস্ট ও রোগী উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক। তাই এখন যতটা সম্ভব ঘরে থেকে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
আসুন দেখে নেই কীভাবে ঘরে বসেই দাঁতের যত্ন করবেন।
১. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন
সকালে খাওয়ার পর ও রাতে ঘুমানোর আগে দিনে অন্তত দুবার দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এক্ষেত্রে নরম ব্রিসল এর ব্রাশ ব্যবহার করুন আর Vigorous brushing বা জোরে জোরে ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকুন। শুধুমাত্র দাঁতের বাইরের দিকে না, ভেতরের দিকটাও ভালো মতো ব্রাশ করুন। কয়লা ও শক্ত বস্তু দিয়ে দাঁত মাজবেন না। এগুলো Abrasion (অ্যাব্রাশন) নামে পরিচিত দাঁতের আবরণকে ক্ষয় করে।
২. কুলি করা
Mouth rinsing বা কুলি করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। নিয়মিত কুলি করলে এক দিকে মুখের দুর্গন্ধ যেমন দূর হয়, তেমনি Gingiva বা দাঁতের মাড়ি তে জমে থাকা খাদ্যকণাও বেরিয়ে আসে।
৩. মাউথওয়াশ ব্যবহার
করোনা পরিস্থিতিতে চমৎকার একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, সেটা হলো লবণ মিশ্রিত কুসুম গরম পানি দিয়ে গার্গল বা কুলি করা। লবণ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও লবঙ্গ বা Eugenol ও মিশিয়ে নিতে পারেন যা অ্যান্টিসেপটিকের পাশাপাশি ব্যাথা নিরাময়ে সাহায্য করে। এছাড়াও বাজার থেকে কেনা অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ তো রয়েছেই।
৪. নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লসিং
আমাদের দেশে ফ্লসিংয়ের ব্যবহার নগন্যই বলা চলে। অথচ Proximal caries বা দুই দাঁতের মাঝে ক্ষয় রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ফ্লসিং হচ্ছে সূক্ষ্ম তন্তুর সাহায্যে দাঁতের মাঝে জমা খাদ্য কণা বের করে আনা। ফার্মেসির দোকানে ডেন্টাল ফ্লস পাওয়া যাবে। অনেকে ফ্লস এর বদলে টুথপিক বা শলাকা ব্যবহার করেন, এতে দাঁত থেকে রক্ত পড়া, সংক্রমণ হতে পারে।
৫. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
প্রচুর পরিমাণ Dietary fiber বা আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এগুলো দাঁতের কোণায় জমে না থেকে দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। Coarse food বা শক্ত খাবার দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে যা পরবর্তিতে শিরশিরে অনুভুতি সৃষ্টি করে। সুস্থ সুন্দর দাঁতের জন্য চিনিযুক্ত খাবার কম খাওয়াই ভালো। কেননা, দাঁতের জীবাণু চিনিযুক্ত খাবারের উপর নির্ভর করেই বাঁচে। চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অবশ্যই কুলি করতে হবে। Acidic বা অম্লীয় খাবার যেমন লেবু, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি অধিক পরিমাণে খাওয়া যাবে না। খেলেও সাথে সাথে কুলি করে ফেলতে হবে। অম্লজাতীয় খাবার দাঁতক্ষয়ে ভূমিকা রাখে যাকে আমরা Erosion বলি। দাঁত ভালো রাখতে অ্যালকোহলও বর্জন করতে হবে।
৬. কিছু বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন
অনেকেই আনমতে দাঁত দিয়ে নখ কাটেন, অনেকের Abnormal grinding অর্থাৎ দাঁতে দাঁত পেষার একটা অভ্যাস থাকে। এসব কারণেও দাঁতের ক্ষয় হয়। আমরা এটাকে Attrition বলি। এই বদঅভ্যাস গুলি পরিবর্তন করা উচিত। ধূমপান মুখের রোগ সৃষ্টিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। দূর্গন্ধ, প্রদাহ, দাঁত বিবর্ণ হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে লিউকোপ্লাকিয়ার মতো Pre cancerous lesion (ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ)-ও দেখা যায়। তাই, যথাসম্ভব ধূমপান হতে বিরত থাকতে হবে।
৭. শিশুর দাঁতের যত্ন
শিশুদের দুধ খাওয়ানোর পর ভেজা কাপড় দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং পানি খাওয়ানো যেতে পারে। এতে করে শিশুর Deciduous teeth (দুধদাঁত) গুলো ভালো থাকবে এবং পরবর্তিতে Malocclusion (আঁকাবাঁকা দাঁত ওঠা) এর প্রবণতা অনেকাংশেই কমে যাবে।
৮. ডায়াবেটিস রোগীর দাঁতের যত্ন
যাদের ডায়েবেটিস আছে, তাদের Periodontitis হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। শরীরের অতিরিক্ত গ্লুকোজ ব্যাকটেরিয়ার জনন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। ফলে সহজেই Caries বা দাঁতে ক্ষয় দেখা দেয়। তাই এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৯. যারা আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করার জন্য Orthodontic appliance (অর্থোডন্টিকস অ্যাপ্লায়েন্স) ব্যবহার করছেন বা যারা আলগা দাঁত (Partial denture) ব্যবহার করছেন, তাদের appliance গুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। নাহলে এসবের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে পরবর্তিতে দাঁতের ও মাড়ির ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে।
এখন দেখা যাক, কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি জরুরি ভিত্তিতে ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে-
১. দাঁতে হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা Acute pulpitis (অ্যাকিউট পালপাইটিস) হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। এক্ষেত্রে ডেন্টিস্টের নিকট যেতে হতে পারে।
২. Dental Trauma বা দুর্ঘটনায় দাঁত ভেঙে গেলে বা চোয়াল থেকে দাঁত খুলে আসলে দেরি না করে নিকটস্থ ডেন্টিস্টের কাছে যাবেন।
৩. Accidental injury ‘র ক্ষেত্রে মুখে মারাত্মক চোট পেয়ে থাকলে অতিসত্ত্বর ডেন্টিস্ট বা নিকটবর্তী হাসপাতালে যেতে হবে।
৪. Severe orofacial infection বা মুখ ও মুখগহবরে তীব্র প্রদাহ অনুভব হলে দেরি না করে দ্রুত ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫. হঠাৎ কারো চোয়াল আটকে গেলে, মুখ বন্ধ করতে পারেন না। এটাকে Lock jaw (লক জ) বলে। এক্ষেত্রেও ডেন্টিস্টের কাছে যেতে পারেন।
সবশেষে, চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিডিএস রেজিস্টার্ড ডেন্টিস্ট এর কাছে যাবেন। Quack বা হাতুড়ে ডাক্তার এর কাছে না। মনে রাখবেন, বিডিএস নয় তো ডেন্টিস্ট নয়। সবার সুস্থতা কামনা করছি।
লেখক- ছাত্র, সিটি ডেন্টাল কলেজ