দিনে কয়টি ডিম খাওয়া নিরাপদ?
১৪ অক্টোবর ২০২২ ১৭:১৪
যদি সুস্থ থাকতে চান, প্রতিদিন ডিম খান— কথাটি প্রায়ই শুনে থাকি আমরা। কিন্তু ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকার কারণে অনেকেই রোজ ডিম খেতে ভয় পান। কিন্তু আসলে আমরা যে পরিমাণ কোলেস্টেরল গ্রহণ করি, আমাদের শরীর সম পরিমাণ কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেয়। আজ বিশ্ব ডিম দিবসে আসুন জেনে নেই কোলেস্টেরল কীভাবে কাজ করে ও দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ।
সবার আগে জেনে নেই কোলেস্টেরল কী
অনেকসময় কোলেস্টেরলকে মানুষের শত্রু হিসেবে দেখা হয়। এর কারণ, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃদরোগের জন্য দায়ী। কিন্তু কোলেস্টেরল ছাড়া আমাদর স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম চলে না। কোলেস্টেরল এমন এক ধরনের কাঠামোবদ্ধ অনু যা প্রতিটি কোষ ঝিল্লির প্রয়োজন।
এছাড়াও এটি টেস্টস্টেরন, ইস্ট্রোজেন ও কর্টিসলের মত স্টেরয়েড হরমোন তৈরিতেও কাজে লাগে। তাই আমাদের শরীর অর্থাৎ লিভার তার জন্য পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল উৎপাদন করে নেয়। এর জন্য আলাদা করে খাবারের মাধ্যমে কোলেস্টেরল গ্রহণের দরকার হয়না। তাই আপনি যখন কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খাবেন, তখন আপনার শরীর সেই পরিমাণ কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেবে। আসলে আমাদের শরীরে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে বা বাড়ে না, এর উৎস বদলে যায়। তাই আপনার রক্তে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে সতর্ক হতে হবে।
এখন ডিমের কুসুমে যেহেতু উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল রয়েছে তাই দিনে একাধিক ডিম খাওয়া বা ডিমের কুসুম খাওয়া ক্ষতিকর হিসেবে বলা হয়। এবার আসুন দেখে নেই দিনে একাধিক ডিম খেলে কী হয়।
মাঝারি আকারের একটি ডিমে প্রায় ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে যা প্রতিদিনের কোলেস্টেরল গ্রহণের আদর্শ মাত্রার ৬২ শতাংশ। অন্যদিকে সাদা অংশে থাকে মূলত প্রোটিন এবং স্বল্প মাত্রার কোলেস্টেরল। তাই সাধারণভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৬ টি কুসুম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও এব্যাপারে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা নাই।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে ডিমের প্রভাব সংক্রান্ত হাতে গোনা কিছু গবেষণা আছে। এক গবেষণায় এক দল ব্যক্তিকে দুই ভাগে ভাগ করে এক দলকে দিনে ১ থেকে ৩ টি আস্ত ডিম খেতে বলা হয়। আর অন্য দলকে ডিমের পরিবর্তে অন্য খাবার দেওয়া হয় যা ডিমের সাবস্টিটিউট।
পরীক্ষায় যা জানা যায়—
প্রায় সবারই গুড কোলেস্টেরল হিসেবে খ্যাত এইচডিএলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যাড কোলেস্টেরল হিসেবে খ্যাত এলডিএলের মাত্রা অপরিবর্তিত রয়েছে। অল্প দু’একজনের ক্ষেত্রে এর মাত্রা সামান্য বেড়েছে।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম খাওয়ার ফলে রক্তে ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমেছে।
রক্তে লুটেইন ও জিজ্যানথাইন নামক ক্যারেটোনয়েড অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পরীক্ষা শেষে তাই গবেষকরা জানান, আমাদের শরীরে ডিম খাওয়ার প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের উপর।
জানা যায়, ৭০ শতাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এলডিএলের মাত্রায় তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাকি যে ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে এর মাত্রা কিছুটা বেড়ে যার তাদের হাইপার রেসপন্ডারস বা উচ্চমাত্রার প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই যাদের এধরনের সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য দিনে একাধিক ডিম খাওয়ার কারণে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। তাই বৈজ্ঞানিক মত অনুযায়ী একজন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রে দিনে ৩টি পর্যন্ত ডিম খাওয়া নিরাপদ।
ডিমের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক
অনেক গবেষণাতেই ডিম খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকির সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য এক দল ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। শুধু ডিম খাওয়াই নয়, তাদের অন্যান্য খাবার, ধূমপানের অভ্যাস ও ব্যায়াম করা না করা ইত্যাদিও লক্ষ্য করা হয়। যারা দিনে একটি আস্ত ডিম খান, তাদের চেয়ে অন্যদের হৃদরোগের ঝুঁকি থাকা না থাকায় খুব একটা পার্থক্য পাওয়া যায়নি। যাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ডিম খাওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি লক্ষ্য করা যায়। তবে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একদল ব্যক্তিকে তিন মাসজুড়ে সপ্তাহের ছয়দিন দিনে দুটি করে ডিম দিয়ে দেখা যায় তাদের রক্তের লিপিডের মাত্রায় বড় ধরনের কোন পরিবর্তন আসেনি। স্বাস্থ্যহানির জন্য অন্য খাবারের ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে।
ডিম কেন খাবেন?
ডিমে শুধু কোলেস্টেরলই নয় এতে রয়েছে নানারকম পুষ্টি উপাদান। চলুন দেখে নেই সেগুলো কী।
এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার লুটেইন ও জিন্যানথাইন নামক অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যা চোখ ভালো রাখে।
কোলাইন নামক উপাদান কোষের জন্য জরুরি।
প্রাণীজ প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিম যা হাড় ও পেশির গঠন ও সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
ডিম দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে যা এটাসেটা খাওয়ার ইচ্ছা ও পরিমাণ কমায়।
সব থেকে বড় কথা, ডিম খেতে সুস্বাদু আবার সহজেই রান্না করা যায়।
দিনে কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ
বেশিরভাগ গবেষণাতেই দেখা গেছে দিনে তিনটি পর্যন্ত ডিম খাওয়া যায়। এর চেয়ে বেশি খেলে তা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ব্যক্তিক্রম নাই তা বলা যাবে না। ৮৮ বছরের এক বৃদ্ধ দিনে ২৫ টি করে ডিম খেতেন। পরীক্ষা করে দেখা যায় তার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা একদম স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো। তবে সবাই যে এভাবে ডিম খেয়ে হজম করে ফেলতে পারবেন তা নয়। তাই সতর্ক থাকাই ভালো।
যেহেতু ডিম খেলেই হৃদরোগের ঝুঁকি আছে এমন কিছুর স্বপক্ষে শক্ত কোন যুক্তি পাওয়া যায়নি তাই কোন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা না থকলে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খান। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও প্রতিদিন ব্যায়ামও জরুরি।
সূত্র: হেলথলাইন ডটকম
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি