পটুয়াখালী: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দুই দিনব্যাপী রাস উৎসব গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে লাখো পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
জাগতিক পাপ-তাপ ও গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে প্রতিবছরের মতো এবারও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গাস্নানে মিলিত হন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর শুরু হয় শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার মূল পর্ব। এরপর বুধবার সূর্যোদয়ের সময় পূজাঅর্চনার মাধ্যমে রাস পূজা ও স্নানোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
অন্তত দুই শতাব্দী ধরে রাস পূর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটায় এই রাস উৎসব পালিত হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত লাখো মানুষ অংশ নেওয়ায় এ উৎসব এখন রূপ নিয়েছে সার্বজনীন মিলনমেলায়।
হিন্দুদের বিশ্বাস, দ্বাপর যুগে কংস বধের পর পূর্ণিমা তিথিতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার স্মরণে রাস উৎসবের সূচনা হয়। মঠবাড়িয়া থেকে পরিবার নিয়ে আসা পলাশ সরকার জানান, ‘পাপ মোচনের জন্যই প্রতিবছর আমরা কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নানে আসি।’
প্রায় দুইশ বছর ধরে কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটা সৈকতে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালিত হচ্ছে। কুয়াকাটার উৎসব শেষ হলেও কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাসমেলা চলবে আরও পাঁচ দিন।
উৎসবকে ঘিরে সৈকত ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রাঙ্গণে বসে পাঁচ শতাধিক অস্থায়ী দোকান। এসব দোকানে বিক্রি হয়েছে পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালি সামগ্রী। আমতলীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এবারের পরিবেশ ভালো ছিল, বিক্রিও হয়েছে ভালো।’
আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র হাওলাদার জানান, স্থানীয় প্রশাসন, সেবাশ্রম কমিটি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন একযোগে কাজ করেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রেখে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ফলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবারের রাসপূজা ও স্নানোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সব মিলিয়ে ভক্তি, আনন্দ ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে শেষ হলো কুয়াকাটার দুই দিনব্যাপী রাস পূজা ও গঙ্গাস্নান।