জবি: ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে শুধু ‘শিবির’ সন্দেহে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎ দাসকে— এমন অভিযোগ তুলে বিশ্বজিতের মৃত্যুদিবসে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বজিৎ চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিবির সমর্থিত প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই— রাজনৈতিক ট্যাগিংয়ের যে সংস্কৃতি অতীতে তৈরি হয়েছিল, তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা নতুন করে এই ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চায়, তাদের সতর্ক হতে হবে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে দেশের মানুষ বিশ্বজিৎ হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে, খুনিদের বিতাড়িত করেছে। আমরা অবিলম্বে বিশ্বজিৎ হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত সব খুনির ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ও জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, ‘২০১২ সালের এই দিনের সেই বর্বর হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ বিচার আজও হয়নি। ছাত্রলীগের ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলায় ৮ জনের ফাঁসি হয়, কিন্তু পরবর্তীতে নানা কৌশলে তাদের জামিন দেওয়া হয়। আমরা পালাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারসহ বিচার বিলম্বের সাথে জড়িত বিচারপ্রক্রিয়ার অনিয়মেরও তদন্ত দাবি করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ও ভিপি পদপ্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ আমরা এমন এক দিনের স্মরণে দাঁড়িয়ে আছি, যেদিন নিরীহ এক হিন্দু তরুণকে শুধু শিবির সন্দেহে হত্যা করা হয়েছিল। এ দিনে কেবল একজন বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়নি— ঢাকা শহরের মানবতাকে হত্যা করা হয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরও মিটফোর্ড হাসপাতালে পাথর মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আমরা এমন এক সমাজ চাই যেখানে কোনো মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না— সুন্দরবন থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত মানুষের সম্পদ সুরক্ষিত থাকবে।’
বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেলেও আমরা এখনো বিচার পাইনি। আমি সরকারের কাছে একটাই দাবি জানাতে এসেছি— আমার ভাই হত্যার বিচার নিশ্চিত করুন।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় ঝটিকা কর্মসূচি চলাকালে নিরীহ দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে বিনা কারণে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত পথচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আন্দোলনবিরোধী সেই তৎকালীন সংঘর্ষের সময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অতিক্রম করছিলেন। কিল-ঘুষি-লাথির পাশাপাশি লৌহশলাকা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।