Wednesday 12 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এনআইডি জালিয়াতি: নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৩ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৩

চট্টগ্রামের সাবেক এক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক এক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের বন্দর থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের সাবেক জন্মনিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া আবদুল জলিল। আশরাফুল আলম বর্তমানে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

বিজ্ঞাপন

দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ সারাবাংলাকে মামলার বিষয়টি জানিয়েছেন।

মামলার এজাহারে আসামি ৫০ বছর বয়সী আবদুল জলিলের বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার পৌরসভার তারাবনিয়া ছড়া মসজিদ কলোনি এবং স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ হালিশহর অলি মাঝিরপাড়া উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালের ২২ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৪ মে একই ব্যক্তি আবারও একই ওয়ার্ড থেকে জন্মনিবন্ধন করেন। সেই জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয়ে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পান।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আবদুল জলিল নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন- চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে তিনি যে জন্মনিবন্ধন জমা দিয়েছে সেখানে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ আছে- কক্সবাজার জেলার চৌফলদণ্ডী এবং বর্তমান ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর শুলকবহর আব্দুল লতিফ রোড উল্লেখ আছে।

কিন্তু জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় আবদুল জলিল ও তার পরিবারের সদস্যদের কখনো বসবাসের কোনো তথ্য পায়নি দুদক। এছাড়া নির্বাচন কমিশনে আবেদন ফরমের ৪৬টি ঘরে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক অসঙ্গতি পেয়েছে দুদক। ফরমে মোবাইল নম্বর, ধর্ম, ভোটার তালিকায় বাদ পড়ার কারণ, শনাক্তকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, তথ্য সংগ্রহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, সুপারভাইজারের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, যাচাইকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের সংশ্লিষ্ট ঘরে কোনো তথ্য উল্লেখ না করে ঘরগুলো খালি রাখা হয়।

এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ফরমের সঙ্গে আবদুল জলিল জমির কাগজ, জাতীয়তা সনদ, শিক্ষা সনদ, বিদ্যুৎ বিলের কপি, প্রত্যয়নপত্র জমা দেননি। শুধুমাত্র একটি জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়ে কোনো জাতীয়তা সনদ ছাড়াই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনে যে জন্মসনদ জমা দিয়েছেন, সেটার যাচাইকারীর স্বাক্ষর ও নিবন্ধকের স্বাক্ষর দুদকের ফরেনসিক প্রতিবেদনে সঠিক পাওয়া যায়নি।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, আবদুল জলিল ও তার পূর্বপুরুষদের বাংলাদেশি নাগরিত্বের কোন বৈধ রেকর্ডপত্র নেই। তার কোনো জাতীয়তা সনদ নেই। তিনি কক্সবাজারের চৌফলদন্ডীতে জন্মগ্রহণ করেছেন দাবি করলেও এর সপক্ষে কোন রেকর্ডপত্র নেই। তার বাবা-মায়ের নামে কোনো ভূমির রেকর্ডপত্র নেই। আবার ভূমিহীন সনদও নেই। আবদুল জলিলের দাবি তার বাবা-মা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছেন। কিন্তু তার কাছে তাদের কোনো মৃত্যুসনদ নেই।

মামলার আরও অভিযোগ করা হয়েছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালে বৈধ কোনো নথিপত্র জমা না দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের তৎকালীন জন্মনিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমারের সাথে যোগসাজশ করে জন্মনিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীর স্বাক্ষর জাল করে জন্মনিবন্ধন করেন।

পরবর্তীতে নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম নির্বাচন কমিশনে কোনো রেকর্ডপত্র জমা না দিয়ে কার্যালয়ের নিজের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ব্যবহার করে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে আবদুল জলিলের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন।

দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর