চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৭ বছর পর লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতে চট্টগ্রামের জন্য ‘নগর সরকারের’ প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন সিটি মেয়র ও দলটির নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ‘নগর সরকার’ গঠনের উদ্যোগ নেবে, সেই প্রত্যাশা রেখেছেন তিনি। এছাড়া সাক্ষাতে দলীয় রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হলেও এ প্রসঙ্গে মুখে খোলেননি শাহাদাত।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে লন্ডনের কিংস্টোনে তারেক রহমানের বাসায় দুই নেতার মধ্যে সাক্ষাত হয়েছে বলে জানা গেছে।
অবশ্য রাত ১টার দিকে নিজের ফেসবুক পেইজে তারেক রহমানের সঙ্গে ছবিসহ সাক্ষাতের বার্তা দেন শাহাদাত হোসেন। ছবিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে একবছর দায়িত্ব পালন উপলক্ষে প্রকাশিত একটি বই তুলে দিতে দেখা যায় শাহাদাতকে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে মেয়র শাহাদাত হোসেন লন্ডন থেকে টেলিফোনে সারাবাংলা’র সঙ্গে কথা বলেন। তারেক রহমানের সঙ্গে কী কী বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলেন। আপনারা তো জানেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আমার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের একবছর পূর্ণ হয়েছে। এক বছরে আমরা কী কী কাজ করেছি, পুরো এক বছরের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের বিষয় জানিয়েছি। আমাদের একটা বই প্রকাশ হয়েছে। সেটা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়কে দিয়েছি।’
‘একবছরে আমরা তো শহরে অলমোস্ট সব নালাগুলো ক্লিন করলাম। এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা যে সহনীয় পর্যায়ে ছিল, নালাগুলো ক্লিয়ার থাকায় পানি সহজে চলে যেতে পেরেছে। আরও ২১-২২টা খাল নিয়ে আমরা কাজ করবো, সেটাও উনাকে অবহিত করলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই কাজগুলো অব্যাহত রাখবো, সেটা বলেছি। এছাড়া আমাদের আরও যেসব ফিউচার প্ল্যান আছে, চট্টগ্রাম শহরকে আমরা একটা গ্রিন ও ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, সে বিষয়ে উনার পরামর্শ নিয়েছি।’
‘নগর সরকারের’ প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার কথা জানিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমাদের নগর সরকার খুব দরকার। আমি নগর সরকার চেয়েছি। নগর সরকার কেন প্রয়োজন, সেটা বুঝিয়ে বলেছি। এই যে একেক সংস্থা একেকভাবে কাজ করে, কোনো সমন্বয় নেই, সমন্বয় করাও সম্ভব হয় না। এতে কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভোগান্তিটা কিন্তু নগরবাসীর হয়, তারা প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন, আবার নানা ঝামেলায়ও পড়েন।’
‘সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকলে নগরবাসীকে কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। আর সমন্বয় করা সম্ভব হবে, যখন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে আইনগতভাবে দায়িত্বটা থাকবে। সিটি করপোরেশনের মেয়র জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। সুতরাং সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে নগর সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই। আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়কে বলেছি, বিএনপি ক্ষমতায় এলে অবশ্যই যেন নগর সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করা হয়।’
রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কী না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘সাংগঠনিক, রাজনৈতিক সব বিষয়ে অনেক আলাপ হয়েছে। কিন্তু এগুলো এই মুহুর্তে বলতে চাই না। কোনো ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হোক, সেটা চাই না।’
১৭ বছর পর প্রথম সাক্ষাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছরে আমার সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি। স্কাইপিতে অনেকবার মিটিং হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও হয়েছে, আবার রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে আমি দুইবার লন্ডনে যাবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্ত তখন ভিসা পাইনি। এমনকি কানাডায় আমার ছেলের সঙ্গেও তো দেখা হয়েছে ৭ বছর পর গত জুলাইয়ে। ২০১৮ সালে একবার আসতে পেরেছিলাম কানাডায়। এখন কূটনৈতিক পাসপোর্টের কারণে সহজে ভিসা পেয়েছি।’
গত ৯ নভেম্বর ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্যে যান মেয়র শাহাদাত হোসেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন।
গত প্রায় ১৮ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন তারেক রহমান। ২০০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারেক রহমান। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তারেকের অনুপস্থিতিতে একাধিক মামলায় তার সাজা হয়। অবশ্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে সব মামলা থেকেই তিনি খালাস পেয়েছেন।
অন্যদিকে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থায় দলের দুঃসময়ে মাঠে সক্রিয় থেকে আলোচনায় আসেন সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহদাত হোসেন। ক্রমে তিনি তারেক রহমানের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে রাজনীতিতে পরিচিতি পান। পরবর্তীতে তিনি টানা প্রায় একযুগ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব দেন।
২০২১ সালে বিতর্কিত চসিক নির্বাচনে শাহাদাত হেরে গেলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর আদালতের নির্দেশে তিনি মেয়রের দায়িত্ব পান।