ডাকসু: স্বেচ্ছা-পর্যবেক্ষকদের শাস্তি চাওয়ায় ৫০ শিক্ষকের প্রতিবাদ
২৩ মার্চ ২০১৯ ১৮:১৩
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনের দিন স্বেচ্ছাপর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালনকারী আট শিক্ষকের শাস্তি চাওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষক।
শনিবার (২৩ মার্চ) এক বিবৃতিতে ওই ৫০ জন শিক্ষক ঢাবির প্রভোস্ট কমিটির দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে এর ধিক্কার জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠান।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষক স্বেচ্ছায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। তারা নির্বাচনি যে পরিস্থিতি দেখেছেন তার নির্মোহ বর্ণনা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। তাদের অভিনন্দন জানাই, প্রতিকূলতার মধ্যেও সততা নিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, গত ১৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, স্বেচ্ছাসেবী পর্যবেক্ষক দল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ‘‘অননুমোদিতভাবে’ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বাচন সম্পর্কে ‘অসত্য তথ্য’ ও ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ ছড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে আট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানায় প্রভোস্ট কমিটি। গণমাধ্যমে এ সংবাদ পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা মর্মাহত।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭৩ সালের আদেশের বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষকের প্রক্টরিয়াল ক্ষমতা আছে এবং তিনি তা প্রয়োগ করার অধিকার রাখেন। কাজেই আট শিক্ষকের পর্যবেক্ষণের অধিকার আছে এবং জনগণকে তা জানাবার অধিকারও আছে। এছাড়া চিফ রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে তারা পর্যবেক্ষণের মৌখিক অনুমতিও পেয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তারা অননুমোদিত কোনো কাজ করেননি।
স্বতঃপ্রণোদিত স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া শিক্ষকদের শাস্তি দাবি করে হল প্রভোস্টরা নিজেদের নৈতিক দেউলিয়াপনা ও ভিন্নমতের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত সবসমই ছিল ও থাকবে। এটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। ভিন্নমতের সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে হুমকি দিয়েছেন তার জন্য ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে প্রশাসন এ আটজন শিক্ষকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। তা নাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক পরাজয়ের জের আরও বহুবছর টানতে হবে।
ইমেইল ও ফেসবুক মারফত বিবৃতিতে সহমত প্রকাশকারীরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম।
বিবৃতি দানকারী অন্য শিক্ষক হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনাসির কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামসুল আরেফিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদাফ নূর।
এছাড়া মাসুদ ইমরান মান্নু, সহযোগী অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; নাসরিন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; জাভেদ কায়সার, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি; রায়হান শরীফ, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল; ওয়াকিলুর রহমান, অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; নাফীসা তানযীম, সহকারী অধ্যাপক, গ্লোবাল স্টাডিজ, উইমেন্স, জেন্ডারঅ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি বিভাগ, লেসলি বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র; কাজী শেখ ফরিদ, সহযোগী অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; মাহমুদুল সুমন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; হিয়া ইসলাম, প্রভাষক, মিডিয়া স্টাডিজ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারাল আর্টস, বাংলাদেশ (ইউল্যাব); আলী রিয়াজ, ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র; আকমল হোসেন, সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; খন্দকার হালিমা আক্তার রিবন, সহযোগী অধ্যাপক, নাট্য ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; পারভীন জলী, সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মাহমুদ হোসেইন, সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; লুৎফুন হোসেন, সাবেক শিক্ষক, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; দীপ্তি দত্ত, প্রভাষক, প্রাচ্যকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অভিন্যু কিবরিয়া ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, অনুজীববিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; অর্পিতা শামস মিজান, প্রভাষক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মোশরেকা অদিতি হক, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; মোশাহিদা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রায়হান রাইন , সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রোবায়েত ফেরদোউস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. তৈয়েবুর রহমান, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড আব্দুর রাজ্জাক খান, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সিউতি সবুর, সহযোগী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; গোলাম হোসেন হাবীব, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; হিমেল বরকত, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিবৃতিতে সহমত প্রকাশ করেছেন।
সারাবাংলা/একে
আরও পড়ুন
ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি
ডাকসু নির্বাচন: একটি নির্মোহ পর্যালোচনা
ডাকসু নির্বাচন: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি
পুনঃনির্বাচন নিয়ে ভিপি নুরের বক্তব্যে ধোঁয়াশা
কারো মিষ্টি কথায় ভুলবো না: অরণী সেমন্তী খান (ভিডিও)
ফের ডাকসু নির্বাচন সম্ভব না: ভিসি