আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। তালেবান সরকার দাবি করেছে, উত্তর সীমান্তের একাধিক পাহাড়ি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তারা পালটা হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, পাকিস্তান আগের দিন আফগান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সীমান্তবর্তী এক বাজারে বোমা হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ হিসেবেই এই অভিযান চালানো হয়।
তিনি জানান, সংঘর্ষে ৯ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামাবাদ জানায়, তাদের ২৩ সেনা নিহত এবং ২৯ জন আহত হলেও পালটা অভিযানে ২০০ জন তালেবান ও সংশ্লিষ্ট যোদ্ধাকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি অভিযোগ করেছেন, আফগান বাহিনী বিনা উস্কানিতে বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালিয়েছে।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘প্রতিটি ইটের বদলে পাথর দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।’
ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, আফগানিস্তান তাদের ভূখণ্ডে পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। তবে তালেবান সরকার তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
বিবিসির তথ্যে জানা গেছে, উভয়পক্ষ কুনার–কুররম সীমান্তে ছোট অস্ত্র ও কামান ব্যবহার করেছে। বাজাউর, চিত্রাল, দির ও বারামচাসহ একাধিক স্থানে গোলাগুলির খবর মিলেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার গভীর রাতে আফগান দিক থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু হয়।
গত সপ্তাহে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছিল, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকতিকা প্রদেশের একটি বেসামরিক বাজারে বোমা হামলা চালায়, যাতে বেশ কয়েকটি দোকান ধ্বংস হয়।
নয়াদিল্লিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পাকিস্তানের জনগণ বা নেতৃত্বের সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই। তবে কিছু গোষ্ঠী রয়েছে যারা দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়। আমরা আমাদের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছি।’
সংঘর্ষের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তের দুটি প্রধান ক্রসিং—তোরখাম ও চামান—বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে।
উত্তেজনা প্রশমনে সৌদি আরব ও কাতার উভয় দেশই দুই পক্ষকে সংযম ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছে।