ফিলিপাইনে শক্তিশালী টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় সময় আঘাত হানা টাইফুনটি দেশটির উপকূলীয় ও মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে মিন্ডানাও দ্বীপে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিপাইন বিমানবাহিনী।
বছরের অন্যতম শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জনবহুল সেবু দ্বীপে, যেখানে অন্তত ৪৯ জনের মৃত্যু ও আরও ২৬ জনের নিখোঁজ থাকার খবর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বেশিরভাগ মানুষ ডুবে মারা গেছেন। পাহাড়ি এলাকায় নেমে আসা কাদা ও বন্যার পানিতে বহু গ্রাম তলিয়ে গেছে, ঘরবাড়ি ও ভবন ভেসে গেছে, রাস্তাজুড়ে জমে আছে ধ্বংসাবশেষ। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা ব্যবহার করে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করছেন।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, কালমায়েগির আঘাতে প্রায় চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষ ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছে, রাস্তায় ভেসে যাচ্ছে গাড়ি ও কনটেইনার।
বর্তমানে টাইফুনটি কিছুটা দুর্বল হলেও এখনও ঘণ্টায় ৮০ মাইল বেগে অগ্রসর হচ্ছে। ফিলিপাইন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি বুধবারের মধ্যে আরও শক্তি সঞ্চয় করে ভিসায়াস অঞ্চল পেরিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে অগ্রসর হয়ে ভিয়েতনামে আঘাত হানতে পারে।
ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সিভিল ডিফেন্স অফিসের উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো বলেন, “আকাশ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকাজ ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তা ধ্বংসাবশেষে ভরা, সেগুলো সরাতেই সময় লাগছে।”
এদিকে সেবু প্রদেশে দুর্যোগকালীন অবস্থা ঘোষণা করে গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো জানিয়েছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম বাতাসের তীব্র গতিই বিপজ্জনক হবে, কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে উঠেছে জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা।’
ফিলিপাইনে প্রতি বছর গড়ে ২০টি টাইফুন আঘাত হানে। গত সেপ্টেম্বরেও সুপার টাইফুন রাগাসা (নান্দো) এবং টাইফুন বুয়ালয় (ওপং)-এর আঘাতে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।