উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার আল-খোমস উপকূলে ২৬ বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি নৌকা ডুবে গেছে। এতে চারজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে একই উপকূলে পৃথকভাবে আরও একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে, যেটিতে ৬৯ জন অভিবাসী ছিল, কিন্তু ওই ঘটনায় কেউ মারা যায়নি।
রোববার (১৬ নভেম্বর) টিআরটি ওয়ার্ল্ডে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারী সংস্থা লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট বৃহস্পতিবার রাতে দুইটি নৌকা ডুবে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে।
প্রথম নৌকাটিতে ছিলেন ২৬ জন বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি সবাইকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয় নৌকায় ছিলেন ৬৯ জন অভিবাসী— যাদের মধ্যে দুজন মিসরীয় এবং ৬৭ জন সুদানি, যার মধ্যে আটজন শিশু। এই নৌকাডুবিতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, উদ্ধারকাজের সঙ্গে মৃতদের মরদেহ সংগ্রহ, জীবিতদের সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটি ইউরোপগামী অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়। গাদ্দাফির শাসনামলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা লিবিয়ায় কাজ পেত, কিন্তু তার পতনের পর দেশটি প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সংঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে লিবিয়ায় ৮ লাখের বেশি অভিবাসী অবস্থান করছে।
মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ বলছে, লিবিয়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে নিপীড়ন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে সরঞ্জাম ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তবে কোস্টগার্ডের সঙ্গে কিছু মিলিশিয়ারদের অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলি আরও জানিয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলো ধাপে ধাপে রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান বন্ধ করার কারণে ভূমধ্যসাগরে নৌযাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দাতব্য সংস্থাগুলোও বিভিন্ন রাষ্ট্রের দমনমূলক পদক্ষেপের সম্মুখীন হচ্ছে।
ভূমধ্যসাগরের এই রুটে প্রতি বছর অসংখ্য অভিবাসীর প্রাণহানি ঘটে, যা লিবিয়াকে ইউরোপগামী অভিবাসীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রধান ট্রানজিট রুট হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।