পারটামিনায় দুর্নীতি: এলএনজি রফতানি নয়, আমদানি করবে ইন্দোনেশিয়া
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:১৬
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর একটি খবর দেয়— ২০২০ সাল নাগাদ ইন্দোনেশিয়াকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হবে। অব্যাহত গতিতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দোনেশিয়ার খোদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি ফার্ম পারটামিনা এই আশঙ্কার কথা জানায়।
তাদের আরও আশঙ্কা করে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটির এলএনজি ঘাটতি দিনে ৪ বিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছাবে।
বক্তব্যটি ছিল পারটামিনার এলএনজি বিক্রি উইংয়ের জেনারেল ম্যানেজার ইরমা সুরিয়ার। তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স আরও জানাচ্ছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটির পশ্চিম জাভায় গ্যাসের ঘাটতি ২০১৫ সালের তুলনায় পাঁচ গুণ বেড়ে যাবে। ইরমা সুরিয়া কথা বলছিলেন সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি উইকে অংশ নিয়ে।
এদিকে, পারটামিনার এই নিজস্ব সংকট ঘোষণার মাত্র একমাস ১০ দিন আগে ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দেশটির সরকারি পর্যায় থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে বাংলাদেশ। জাকার্তায় ওই এমওইউ সই হয়।
তবে রয়টার্সের ওই খবরের পর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা শুরু করে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে সরকারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি খাত মারাত্মক পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। আর সে কারণেই ঝুলে যায় পারটামিনার সঙ্গে এলএনজি আমদানির চূড়ান্ত চুক্তি। বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, পারটামিনার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সরকার আরও ভাববে।
এদিকে, জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এলএনজি আমদানির চুক্তি বাংলাদেশকে বিপাকেই ফেলবে। সে কারণে সরকার যদি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে, সেটাই হবে সবচেয়ে উপযুক্ত পথ। তাদের মতে, ইন্দোনেশিয়া এখনও এলএনজি রফতানি করছে। তবে ২০২০ সাল নাগাদ তারা নিজেরাই যে এলএনজি আমদানি করবে, সে কথা পারটামিনা কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বলেছে। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখছে কিংবা রাখবে— এমনটাই প্রত্যাশা জ্বালানি সংশ্লিষ্টদের।
পারটামিনা নিজেও দুর্নীতিতে জর্জরিত। বাংলাদেশের সাথে এলএনজি রফতানির লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই করার মোটে পাঁচ মাস আগে ২০১৭’র এপ্রিলে পারটামিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডাইরেক্টর ক্যারেন অগাস্তিয়াভানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে এই দুর্নীতি তদন্ত হয়। সে সময় গ্লোবাল অয়েল অ্যান্ড গ্যাস নিউজ সোর্স নামে একটি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, অগাস্তিয়াভানের বিরুদ্ধে ৪২ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির তদন্ত চলছে। কেবল অগাস্তিয়াভানই নয়, পারটামিনার আরও পূববর্তী প্রধানদের বিরুদ্ধেও ছিল একই ধরনের দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন।
কেবল ইরমা সুরিয়াই নয়, ইন্দোনেশিয়া যে এলএনজি রফতানির সক্ষমতা হারিয়ে ক্রমশই নিজেদের জন্য আমদানি প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ছে, সে কথা বলেছেন আরও অনেকে।
বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের দেড় মাসেরও কম সময় পর সে বছরের ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে (৭ ডিসেম্বর) দেশটির প্রধান সংবাদপত্র জাকার্তা পোস্ট প্রধান সারির অনলাইন কম্পাস ডটকমের বরাত দিয়ে খবরে জানায়, দেশটি জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংকটে রয়েছে এবং দেশটি এরই মধ্যে তেল আমদানি করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছে। আর শিগগিরই নিজ চাহিদা মেটাতে গ্যাস আমদানিতেও যেতে হবে ইন্দোনেশিয়াকে। পারটামিনার আপস্ট্রিম ডিরেক্টর সামছুল আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার ধরে রাখতে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস প্রয়োজন হবে, ততটা মজুত নেই।
তিনি আরও বলেন, লুকোছাপা করে খুব একটা লাভ নেই। আমাদের তেল ও গ্যাসের প্রকৃত অবস্থা কী, তা তুলে ধরা দরকার। তিনি অবশ্য ২০২০, নয় ২০২৩ সাল নাগাদ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে যেতে হবে বলে ঘোষণা দেন।
ইন্দোনেশিয়া তার নিজের চাহিদা মেটাতেই যেখানে ক্রমশ অক্ষম হয়ে পড়ছে, সেখানে বাংলাদেশের কাছে এলএনজি রফতানি করার জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেও সমালোচনায় পড়েছে পারটামিনা, তথা দেশটির সরকার। তবে এসব আলোচনা-সমালোচনায় সার্বিকভাবে পারটামিনার দুর্নীতিই সামনে এসেছে।
গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (কেপিকে) পারটামিনার বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত ঘোষণা করে। এদের মধ্যে ছিলেন সাবেক কোম্পানি প্রেসিডেন্ট ও সিইও ক্যারেন গালাইলা অগাস্তিয়াভান, প্রধান আইন পরামর্শক ও কমপ্ল্যায়ান্স অফিসার গেনাডেস পানজাইতান, সাবেক অর্থ পরিচালক ফ্রেডরিক সিয়াহান।
আরও পড়ুন-
এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ: দাম বাড়ার শঙ্কা কয়েকগুণ
সুইস এওটির এলএনজি আসবে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে
সারাবাংলা/এমএম