বিজ্ঞাপন

সুইস এওটির এলএনজি আসবে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

June 26, 2018 | 8:39 pm

|| বিশেষ সংবাদদাতা ||

বিজ্ঞাপন

দেশের জন্য উন্নত মানের জ্বালানি আনতে এবার সুইস কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বাধছে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সুইজারল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এওটি এনার্জির কাছ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আনবে সরকার।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অপেক্ষাকৃত কম দামে এবং মূল্য পরিশোধে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় দিয়েই বাংলাদেশে এলএনজি বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে এওটি এনার্জি। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হচ্ছে। সকল প্রক্রিয়া শেষে সিদ্ধান্তটি মন্ত্রীসভার ক্রয় কমিটিতে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।

এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম সুইজারল্যান্ডের এওটি সদর দফতর ও তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইট ঘুরে এসেছে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ঘুরে এসে ইতিবাচক সুপারিশ দিয়েছে এই প্রতিনিধি দল।

বিজ্ঞাপন

সুইস কোম্পানিটি বাংলাদেশ সরকারকে মানসম্মত প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়ার পাশাপাশি মূল্য পরিশোধে ৪৫ দিন সময় দিচ্ছে, যা অন্য যে কোনও কোম্পানির চেয়ে অন্তত ৩০ দিন বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো অফার এবং সরকার তথা দেশ এ থেকে বড় ধরনের সুবিধা পাবে।

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত হলে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। সুইস সরকারও এওটি এনার্জির সঙ্গে বাংলাদেশের এই নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

ছয় সদস্যের বাংলাদেশি ডেলিগেট সুইজারল্যান্ড ঘুরে এসে এরই মধ্যে তাদের সুপারিশ সরকারকে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

পেট্রোবাংলার পরিচালক অর্থ তৌহিদ খানের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, প্রশাসন মো. খলিলুর রহমান, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সৈয়দ আহমেদ, আরপিজিসিএল এর উপ-মহাব্যবস্থাপক কাজী এম আনোয়ারুল আজিম, ইএমআরডি’র যুগ্ম-সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন প্রতিনিধি।

এ বছরের মার্চে এই আন্ত-সংস্থা প্রতিনিধি দলটি এওটি সদরদফতর দেখতে যায় এবং এলএনজি শিপিংয়ে এর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়ে তাদের ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ ছিলো বলেই জানায়।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায় প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ জ্বালানি সচিব বরাবর তার পত্রে এওটি এনার্জিকে এলএনজি ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ এবং জাহাজ থেকে জাহাজে এলএনজি সরবরাহ ও বাণিজ্যে দক্ষ বলেই উল্লেখ করেন।

চূড়ান্ত হলে এওটি এনার্জি তৃতীয় আন্তর্জাতিক কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশকে এলএনজি সরবরাহ করবে। যা এরই মধ্যে কক্সবাজারে নির্মিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ)তে দেওয়া হবে। এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড (ইইবিএল) এবং সামিট কর্পোরেশন লিমিটেড যৌথভাবে এই ভাসমান টার্মিনাল বানিয়েছে যা থেকে এরই মধ্যে গ্যাস সঞ্চালনের জাতীয় গ্রিডে এলএনজি দেওয়া শুরু করেছে সরকার।

২০১৮ সালের মধ্যেই জাতীয় গ্রিডে এলএনজি দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতিই ছিলো সরকারের। যা এরই মধ্যে পূরণ করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর চাপ কমাতেই সরকার এই আমদানি শুরু করেছে। দেশে আমদানিকৃত এলএনজির প্রথম চালানটি আসে এবছরের এপ্রিলের শেষভাগে কাতার থেকে। ওই শিপমেন্টে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করে সরকার। কাতারের রাসগ্যাসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়াও ওমানের ওমান ট্রেডিংও বাংলাদেশকে এলএনজি দিতে এরই মধ্যে চুক্তিবদ্ধ। সুইজারল্যান্ডের এওটি এনার্জি হতে যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে তৃতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যারা বাংলাদেশকে এলএনজি সরবরাহ করবে।

আমদানীকৃত এলএনজির প্রথম চালান দেশে পৌঁছানোর পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রাজধানীতে একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, এলএনজি কেনা নিয়ে সরকারের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এলএনজি আনার ওপর আরও জোর দিতে চাই, কারণ এটাই অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন জ্বালানি।

এওটি এনার্জির সঙ্গে সরকার প্রথম নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক সই করে ২০১৭ সালের মধ্য জুনে। এরপর আলাপ আলোচনা ও দরকষাকষি চলতে থাকে। বিষয়টি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) এর আওতায় ভেটিংয়ের পর সে বছরের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর (প্রধানমন্ত্রী নিজেই) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন অনুমোদন দেন অক্টোবরের প্রথম ভাগেই। এরপর এ বছরের ৩০ জানুয়ারি এওটি এনার্জির সঙ্গে পেট্রোবাংলার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (এসপিএ) সম্পন্ন হয়। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এওটির সক্ষমতা যাচাইয়ে সরেজমিন দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এপ্রিলে আন্তঃ-সস্থার ওই প্রতিনিধি দলটি ঘুরে এসে ইতিবাচক সুপারিশ দিলে বিয়টি এখন চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সূত্র জানায় প্রতিনিধি দলটি জেনেছে, এওটি এনার্জির সঙ্গে সুইস সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং সফরকালে সুইস মন্ত্রী ম্যাথিয়াস মাইকেলসেনের সঙ্গেও তাদের সাক্ষাৎ হয়। তিনি এওটিকে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সামনে তুলে ধরেন।

এসময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অংশদারীত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও দুই দেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। সুইস প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন। সুইস প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরেও এওটির আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ ছিলো বলেও জানায় সূত্র।

বাংলাদেশে এলএনজি ব্যবস্থাপনায় ২০১০ সাল থেকে সহায়তা দিয়ে আসছে এই এওটি এনার্জি। এটি অ্যাস্ট্রা ওয়েল এক্সেলারেট কনসোর্টিয়ামের শীর্ষস্থানীয় সদস্য। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম এলএনজি ভাসমান টার্মিনাল সরবাহের টেন্ডারও পেয়েছিলো এই এওটি। মহেশখালীতে তাদের নির্মিত টার্মিনালে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

কাতার গ্যাস ও ওমান ট্রেডিংয়ের পর তৃতীয় কোম্পানি হিসেবে এওটি এনার্জিকে বেছে নেওয়া হলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক ও লাভজনক হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এর পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রণালয় ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্টসহ আরও কিছু দেশের কোম্পানির সঙ্গেও কথা বলছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহের অভাবে দেশে শিল্প বিকাশে যে দীর্ঘ বাধা রয়েছে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে তা দূর করা হবে।

এরই মধ্যে তিনি মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পায়রা বন্দরে আরও তিনটি স্থল-ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কথা জানিয়েছেন। এগুলোর ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। এবং সম্ভব হলে একটি কিংবা দুটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল তৈরি করবে সরকার।

Govt keen to get quality LNG from Swiss AOT

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন