বিজ্ঞাপন

এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ: দাম বাড়ার শঙ্কা কয়েকগুণ

May 3, 2018 | 11:07 am

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ব্যয়বহুল এলএনজিভিত্তিক (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে দেশি বিদেশি ১৮টি কোম্পানির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে অসম্পূর্ণ হওয়ার কারণে ৭টি প্রস্তাব বাদ দিয়ে বাকী ১১টি প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এখন এই প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। এর আগে, একটি দেশীয় ও একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।

এদিকে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় এলএনজির দাম অনেক বেশি। এছাড়া আর্ন্তজাতিক বাজারে এই গ্যাসের দাম সব সময় উঠা নামা করে। ফলে এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে যত কম নজর দেয়া যায় ততই ভালো। কারণ, বেশি দামের এই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এছাড়া, আমদানি নির্ভর হওয়ার কারণে সবসময় একটা বিপর্যয়ের শঙ্কা থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার এলএনজির দাম প্রায় ১৪ টাকা, যেখানে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৩৫ পয়সা। সামনে এলএনজির দাম আরও বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের বিভিন্ন জ্বালানি পণ্যের বেচা-কেনার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান প্লাটস। বাংলাদেশ এই সংস্থার তালিকাভুক্ত দেশ। প্লাটসের দাম অনুযায়ীই বাংলাদেশ জ্বালানি তেল কিনে থাকে।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, এলএনজি যেহেতু আমদানি করতে হয়, স্বাভাবিকভাবেই এর দাম কিছুটা বেশি হবে। তারপরেও এলএনজিনির্ভর কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে অন্যান্য প্রাথমিক জ্বালানিভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যে অনেক বেশি হবে, সেটা ঠিক না। তিনি বলেন, আমরা কেবল এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছি। এলএনজিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কারণ বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী মোট উৎপাদনের ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ, গ্যাসভিত্তিক হবে। কিন্তু আমাদের দেশে গ্যাসে মজুদ কম। তাই গ্যাসের বিকল্প হচ্ছে আমদানি করা এলএনজি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম বলেন, এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এটি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর এবং অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক বাজারে সবসময়ই এলএনজির দাম উঠানামা করে। ফলে এর প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পড়বে। একই সঙ্গে আমাদের সক্ষমতা নিয়েও ভাবতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০২৪ সালে এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এই মুহূর্তে ১১টি প্রস্তাব যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই বাছাই শেষে যেসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে সেগুলোর অনুমোদন দেয়া হবে। এরই মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিটকে ৬’শ মেগাওয়াট এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সকে ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স। মোট ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে সরকারের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সঙ্গে জার্মানির কোম্পানি সিমেন্স জয়েন্ট ভেঞ্চারে তিন হাজার ৬’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার এলএনজিনির্ভর কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কেন্দ্রটি নির্মাণে উভয় পক্ষের মধ্যে এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেলে মূল চুক্তি সই হবে।

বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান মার্কিন বহুজাতিক কোম্পনি জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এলএনজিনির্ভর বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতার ১৭ হাজার ৮’শ মেগাওয়াট। চাইনিজ ন্যাশনাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, জাপানের মিৎসুই অ্যান্ড কো. ৬০০ মেগাওয়াট, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি আহমেদ দালমুক আল মাকতুম এক হাজার মেগাওয়াট, ভারতের রিলায়েন্স ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, চীনের চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিপিপিইসি) ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, ইন্দোনেশিয়ার পার্টামিনা ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে।

অন্যদিকে, দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ৪৬০ মেগাওয়াট, ইউনিক গ্রুপ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ ৫০০ মেগাওয়াট, গোলার পাওয়ার দেড় হাজার মেগাওয়াট, মিডল্যান্ড পাওয়ার ও শাহজিবাজার কনসোর্টিয়াম ৬০০ মেগাওয়াট, ইউনিক গ্রুপ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এলএনজি নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রস্তাব করেছে।

এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রথমবারের মত এলএনজি আমদানি করেছে। গত ২৪ এপ্রিল কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের বিশেষায়িত জাহাজ এক্সেলেন্স বাংলাদেশে প্রবেশ করে। চলতি মাসের শেষে এই জাহাজ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এইচএ/জেএএম/এসআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন