বিজ্ঞাপন

বেনসন ৩০০, স্টার-নেভি ১৩৪ ও হলিউড-ডার্বির দাম ৯০ টাকা

June 1, 2023 | 8:23 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে মানুষজনকে নিরুৎসাহিত করতে বাড়ানো হয় তামাকজাতীয় পণ্যের দাম। এবারও তাই হচ্ছে। এবারের বাজেটে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) সিগারেট, গুল ও জর্দার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে অপরিবর্তিত থাকবে বিড়ির দাম।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (যেমন-হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যম স্তরের (স্টার, নেভি) ১৩৪, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে জর্দা-গুলের দামও। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।

তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরেক দফা সস্তা হয়ে পড়বে বলে মনে করছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তরুণেরা তামাক ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে, তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বাড়বে এবং একই সঙ্গে এ খাতে সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব আমলে না নেওয়ায় সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারও বাধাগ্রস্ত হবে।

প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৫০ পয়সা (১২ দশমিক ৫০ শতাংশ)। এ স্তরের করহার প্রায় অপরিবর্তিত রেখে কেবল মূল্যস্তর বাড়ানোর কারণে বর্ধিত মূল্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭ টাকা (৩ দশমিক ০৮ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা থেকে ১১৩ টাকা (১ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৪২ টাকা থেকে ১৫০ টাকা (৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৫ টাকা ও ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিড়ির দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষি বিপণন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেশের ৮টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের (৭ মার্চ) তুলনায় ২০২৩ সালে (৭ মার্চ) খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ, চিনির দাম ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিমের দাম ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, গুঁড়া দুধের দাম ২১ দশমিক ২ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও মোটা চালের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম নামমাত্র বাড়ানো অথবা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরও সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, ‘নিত্যপণ্যের তুলনায় সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখলে থাকা কম দামি সিগারেটের মূল্যস্তর বা খুচরা মূল্য সামান্য পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে এ স্তরের সিগারেটের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য আমদানির সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত চূড়ান্ত করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।’

প্রজ্ঞা বলেছে, বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘ মেয়াদে ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট খাত থেকে গত বছরের তুলনায় সরকারের ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এই বাড়তি রাজস্ব আইএমএফের ঋণ শর্ত পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতিহাসের বৃহত্তম এই বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয় ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন