Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এশিয়ার সমুদ্রে দুই প্রধান শক্তির সামরিক মহড়া, উত্তেজনা বাড়ছে


৬ জুলাই ২০২০ ১৩:৫৬

গত সপ্তায় এশিয়ার তিন গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে চীন। দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগর এবং পীত সাগরে চীনের এসব সামরিক মহড়া এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির দ্বন্দ্ব তাতিয়ে উঠছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এসব মহড়াকে এশিয়ার ‘তিন মুখ্য সামরিক এলাকায়’ অনুষ্ঠিত মহড়া বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব মহড়ার মাধ্যমে শুধু বহিঃশক্তিকে বার্তা দেওয়াই উদ্দেশ্য নয় বরং অভ্যন্তরীণ চাপকেও মোকাবিলা করতে চাচ্ছে চীন।

তিন সমুদ্রে চীনের এবারের মহড়ার ধরণ জানা যায় চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে। চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন এক প্রতিবেদনে জানায়— দক্ষিণ চীন সাগরে একটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ও দু’টি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অপরিচিত জাহাজ শনাক্তের মহড়া চালিয়েছে চীন সেনারা। মহড়াটি তাইওয়ান ও জাপান নিয়ন্ত্রিত সেনকাকু আইসল্যান্ডের সমুদ্র সীমায় সংগঠিত হয় যেখানে চীন সবসময় বাস্তবে এমন পরিস্থিতিতে পড়ার হুমকিতে থাকে। জাপান ও তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত এ দ্বীপপুঞ্জটিকে চীন নিজেদের বলে দাবি করে।

চীনের পিপল লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) দক্ষিণ চীন সাগর ও পীত সাগরে সরাসরি গুলিবর্ষণের মহড়াও চালায়। গত বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত (১-৫ জুলাই) এ মহড়া চলাকালে পারাসেল দ্বিপপুঞ্জে বেসামরিক জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের এমন তৎপরতার মধ্যেই মার্কিন নৌবাহিনীও বড় পরিসরে সামরিক মহড়া শুরু করেছে। মার্কিন নৌবাহিনী’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিকের সমর্থনে ইউএসএস-নিমিটজ ও ইউএসএস-রোনাল্ড রিগ্যান দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া ও অভিযান চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি-৫২ বোম্বার এই মহড়ায় পাঠানো হয়েছে।

একই এলাকায় দুই প্রধান সামরিক শক্তির মহড়ার এমন ঘটনা বিরল। একই জলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের এমন সামরিক মহড়া মূলত এ অঞ্চলে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

চীনের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে এশিয়ার কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়, চীন মনে করে প্রতিবেশী ভারত ও পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র উত্তেজনায় দেশটিতে উদ্বেগ বাড়ছে। যদিও এর আগে গত মাসে চীনের শীর্ষ কূটনীতিবিদ ইয়াং জিয়াচ হাওয়াইয়ে এক মার্কিন সামরিক স্থাপনায় সফর করেছিলেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে সাক্ষাত করলেও দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় কোনো শিথিলতার লক্ষণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পরপরই চীনের বিরুদ্ধে তোপ দাগান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির করুণ দশার জন্য তিনি চীনকে দায়ী করে এশিয়ার অর্থনৈতিক পরাশক্তি দেশটির বিরুদ্ধে একাধিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরী সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।

এদিকে সম্প্রতি হংকং নিরাপত্তা আইন বিষয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। চীনের পার্লামেন্টে গত মঙ্গলবার নতুন হংকং নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। এ আইনের আওতায় হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। চীনের এমন তৎপরতার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট একটি বিল পাস করে। এর ফলে ওয়াশিংটন চাইলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য বা দেশটির কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।

হংকং পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের এমন তৎপরতা শুধু পার্লামেন্টেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সমুদ্রেও সামরিক মহড়ার মাধ্যমে একে অন্যকে হুমকি ও শক্তির জানান দিচ্ছে।

তবে চীনের সামরিক ও কুটনৈতিক তৎপরতায় জোরদার হয় বছরের শুরু থেকেই। গত মার্চে করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের সময় থেকেই সমুদ্রে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে বেইজিং। একাধিক মহড়ার পাশাপাশি নিজেদের বলে দাবি করা সমুদ্র সীমায়ও প্রবেশ করছেন চীন। এ সপ্তাহে চীনের দুইটি কোস্টগার্ড জাহাজ জাপানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমায় অন্তত ৩৭ ঘণ্টা অবস্থান করেছে বলে দাবি করে জাপান। ২০১২ সালের পর জাপানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ জল সীমায় চীনের সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ সময় অবস্থান এটিই।

এদিকে গত মার্চ থেকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার বিরুদ্ধে লাগাতার মন্তব্য করে যাচ্ছেন। বছরের শুরু থেকেই চীন তার অন্যতম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলে ভারতকে অন্যতম সামরিক মিত্র বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ও তার মিত্র শক্তিদের বিরুদ্ধে চীনের দ্বন্দ্ব দিন দিন চাঙ্গা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ, রয়টার্স, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড। 

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক মহড়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর