হায়া সোফিয়ায় মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি, তুরস্কে করোনা বেড়েছে
১২ আগস্ট ২০২০ ১৮:৩৬
হায়া সোফিয়া মসজিদ হিসেবে খুলে দেওয়ার দিনে নামাজে অংশ নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তুরস্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ জুলাই প্রায় ৮৬ বছর পর প্রথম জমায়েতে নামাজ পড়া হয় হায়া সোফিয়ায়। আর এদিন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের তিন লাখ ৫০ হাজার মানুষ হায়া সোফিয়া এলাকায় জড়ো হোন। তবে ওই বিশাল জমায়েতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যে নতুন স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে- তা যথাযথভাবে মানা সম্ভব হয়নি। ফলে সেখান থেকে অনেকেই নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। আর এতে সারা দেশে আবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হায়া সোফিয়ার ভিতরে নামাজ পড়েছেন এমন অন্তত ৫০০ সংসদ সদস্য, সাংবাদিক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা ছিলো না।
আরব নিউজের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদ উল আযহার পর থেকেই করোনাভাইরাসে নতুন ঢেউ আছড়ে পড়েছে তুরস্কে। ঈদের পর থেকেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজারের উপর। প্রকৃত সংখ্যা প্রায় তিন হাজার বলে মনে করছেন অনেকেই।
আরব নিউজের তরফ থেকে তুরস্কের চিকিৎসা সংক্রান্ত পেশায় যুক্ত রয়েছেন এমন কয়েক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, গত মাস থেকেই মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। হায়া সোফিয়া খুলে দেওয়ার দিনে সেখানে যথেষ্ট ও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি।
আরও পড়ুন-
- বিশ্বখ্যাত জাদুঘর হায়া সোফিয়াকে মসজিদ ঘোষণা করল তুরস্ক
- হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর সঠিক হয়নি: ওরহান পামুক
- হায়া সোফিয়ার মসজিদে রূপান্তর: ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
- হায়া সোফিয়া ও এরদোগান: মতাদর্শ এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিতর্ক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আরব নিউজ জানায়, তিনি বলেন, হায়া সোফিয়া খুলে দেওয়ার দিন থেকেই আমরা অনেক রাজনীতিবিদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। এর কারণ হলো তারা প্রতি তিন দিন পরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। কিন্তু যদি সাধারণ মানুষেরও এভাবে নিয়মিত পরীক্ষা করা হতো তবে দেখা যেত প্রকৃত চিত্র আরও খারাপ।
উল্লেখ্য, যাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর করে হায়া সোফিয়ায় গত ২৪ জুলাই থেকে নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেওয়া হয়। ওইদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভ্যাটিকেনের পোপ ফ্রান্সিস থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানায় তুরস্ক। ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গের সার্জন অধ্যাপক ডা. এরজিন কসাইলডিরিম বলেন, মনে হচ্ছে ওইসব বিশ্ব ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কেউই সেদিন হায়া সোফিয়ায় উপস্থিতি না হলেও করোনাভাইরাস ঠিকই সেখানে উপস্থিতি হয়েছে।
তুরস্কের বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মুরাত এমির বলেন, দুঃখজনকভাবে হায়া সোফিয়া খুলে দেওয়ার দিনে হাজার হাজার মানুষ সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক না পরেই সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষ হায়া সোফিয়ায় ভ্রমণের জন্য বাস সার্ভিস চালু করেছিল।
উল্লেখ্য, তুরস্কে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সেদেশে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৭৩।