এ তো দেখি ভয়াবহ অবস্থা: হাইকোর্ট
১২ মে ২০১৯ ২০:২৩
ঢাকা: ভেজাল খাবার খাওয়ার চেয়ে না খাওয়া অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। কয়েকটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘নামিদামি কোম্পানির হলুদের এ অবস্থা, তাহলে তো দেখছি তরকারিতে হলুদ খাওয়া যাবে না।’
বিএসটিআই পরীক্ষিত নিম্নমানের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার চেয়ে করা আবেদনের শুনানিকালে রোববার (১২ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এ সময় আদালত বলেন, ‘দুধে ৭০ শতাংশ পানি মেশানো, হলুদে ইটের গুঁড়ো মেশানো। এ তো দেখি ভয়াবহ অবস্থা।’
আদালত বলেন, ‘গত ১০ বছরে ক্যান্সারের রোগী আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আগে লাখে ছিল একজন। আর এখন মনে হয় হাজারে একজন। এখন তো মেডিকেল, ল্যাব, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আমাদের জীবনের নিয়মিত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের বাইরে আইন পড়া অবস্থায় পার্টটাইম চাকরি করতাম। যে টাকা দিয়ে লেখাপড়া এবং হাত খরচ চলত। একবার টাইফয়েড হয়। সুস্থ হওয়ার পর চাকরিতে জয়েন করতে গেলে তারা ৫/৭টি মেডিকেল পরীক্ষা করায়। এভাবে তিন মাস কেটে যাওয়ার পর চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়।
ওই বিচারপতি জানান, ডায়রিয়া হলে একমাস কাজ থেকে বিরত থাকতে হতো। কোথায় খাবার খেয়েছেন, কী খেয়েছেন সবিস্তারে জেনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। নিরাপদ খাদ্য আইনে হোটেল কর্মচারীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা আছে। খাবার যিনি দিচ্ছেন তিনি পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি মানছেন কি না সেটিও দেখার কথা বলা আছে। এসব তদারকি করার দায়িত্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের।
এ সময় তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘এ দেশে আর নিরাপদে থাকার উপায় নাই। দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। আমি তো দ্বৈত নাগরিক নই, ছেলে সন্তান নিয়ে এখানেই থাকতে হবে।’
বিচারপতি বলেন, ‘টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখেছি, আমার তেল হচ্ছে বেস্ট, আমার মশলা হচ্ছে বেস্ট। কিন্তু বাস্তবে দেখছি অন্য কিছু। তাহলে কি খাবো। শুধু সিদ্ধ ডিম? কিন্তু ডিমও নাকি প্লাস্টিকের।’
কয়েকটি কোম্পানির নাম তুলে ধরে আদালত বলেন, ‘নামিদামি কোম্পানির হলুদের এ অবস্থা, তাহলে তো দেখছি তরকারিতে হলুদ খাওয়া যাবে না। আমাদের দেশের নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা উন্নত দেশগুলোর মতো না হলেও ন্যূনতম একটা মান তো মেনে চলতে হবে।’
এ সময় আদালত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের কয়েকটি দিক তুলে ধরে বলেন, ‘এর চেয়ে ভালো আইন আর আছে? এ আইনে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে তাতে তো আর কিছু লাগে না। এ আইনে মামলার তদন্তের জন্য অধিদফতর কর্মকর্তাকে থানার ভারপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার সমান ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কারখানাও বন্ধ করতে পারবেন তারা। তারপরও তারা এসি রুমে বসে থাকে। তাদের ইচ্ছা নেই কাজ করার। অনেক সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে চাপ আসে। কিন্তু তাদের কাজ হলো দোকানে দোকানে হানা দেওয়া। আমাদের কাজ হলো মামলার শুনানি করা, আদেশ দেওয়া। তাদের কাজ হলো খাদ্য নিরাপদ করা। তাদের হাতে আইন আছে, অস্ত্র আছে। রোজা এলেই তারা পরীক্ষা শুরু করে। সারাবছর খবর থাকে না।’
পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেন। আদালতের আদেশে মানহীন ৫২ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও পণ্যগুলোর উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন শিহাব উদ্দিন খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ।
উল্লেখ্য ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ এর ২৩ (১) ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন অপরাধ তদন্তের বিষয়ে মহাপরিচালকের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুরূপ ক্ষমতা থাকিবে।
এ আইনের ৩৯ ধারায় বলা আছে, কোন ব্যক্তি আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করিয়া তাহার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ না করিলে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে বা সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে উক্ত তালিকা প্রদর্শন না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ৪১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত বিজ্ঞাপনের শর্তাদি লঙ্ঘন করিয়া বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্তিকর বা অসত্য তথ্য প্রদান করিয়া অথবা মিথ্যা নির্ভরতামূলক বক্তব্য প্রদান করিয়া ক্রেতার ক্ষতিসাধন করিতে পারিবেন না।
সারাবাংলা/এজেডকে/একে