Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এসি রুমে বসে থাকবেন না, দায়িত্ব পালন করুন বিএসটিআইকে হাইকোর্ট


২১ মে ২০১৯ ২০:১৬

ঢাকা: ‘দায়িত্ব নিয়েছেন দায়িত্ব পালন করেন। শুধু এসি রুমে বসে থাকবেন না। জনগণের পয়সায় আপনাদের বেতন হয়। তাদের জন্য কিছু করেন’ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) উদ্দেশে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

‘বাজারের ৯৬টি তরল দুধের ৯৩টির নমুনাতেই ক্ষতিকর উপাদান’ এমন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় মঙ্গলবার (২১ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

পরে সারাদেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্য ও পশু খাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আগামী ২৩ জুন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান অধ্যাপক ড. শাহনীলা ফেরদৌসীকে লিখিত আকারে তার বক্তব্য দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

আদালতের নির্দেশে প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসী সকালে কোর্টে হাজির হয়ে তার প্রতিবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে কাজ করি। এরপর সেই প্রতিবেদন যাচাই করে এফএও (ফুড ও এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন) তা প্রকাশ করে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের এমওইউ চুক্তির আওতায়ই এ কাজ করা হয়। এ কারণে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই্ নমুনা সংগ্রহ ও তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। আর গবেষণাগার এনএসএফএল আইএসও সনদপ্রাপ্ত।’

শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, ‘আমাদের ল্যাবের প্রতিবেদন পেলেই তারা তা প্রকাশ করে না। এই পরীক্ষা ও প্রতিবেদন ঠিক আছে কীনা তা বিভিন্ন দেশের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।’ তবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ল্যাবের মান অনেক দেশের চেয়েই উন্নত।’

বিজ্ঞাপন

ড. ফেরদৌসীর প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিএসটিআই’র আইনজীবী বলেন, ‘এনএসএফএল এর প্রতিবেদন যে সত্য তা প্রমাণ করার সুযোগ কী? তারা তো অন্য কোনো ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করেনি। এছাড়া তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার থেকে। কিন্তু পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও যশোরেই সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। সেখান থেকে তারা কোনো নমুনা সংগ্রহ না করে ঢালাওভাবে বলে দিল দুধে এইসব রয়েছে।’

এ সময় শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, ‘এখানে শুধুই তিনটি জেলা নয়, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পণ্য রয়েছে। যেমন মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, স্বপ্ন অর্গানিক, আফতাব ডেইরি মিল্ক, ঈগলু ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের পণ্য সারাদেশেই পাওয়া যায়। সুতরাং বিএসটিআই র দাবি যথাযথ নয়।’

শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, ‘খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসার উপস্থিতি নিয়ে আইসিডিডিআরবি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন ২০১৭ সালেও প্রকাশিত হয়েছে। তা ইন্টারনেটেই রয়েছে। তাই শুধুমাত্র আমাদের প্রতিবেদনেই যে ওইসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে তা নয়। আইসিডিডিআরবি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিএসটিআই কী করেছে তা জানা নেই।’

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ‘বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ ছিল আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করবে। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে। কিন্তু তারা সে কাজটুকু করেনি।’

তখন আদালত বিএসটিআই’র আইনজীবীকে বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেন। শুধু এসি রুমে বসে থাকবেন না। জনগণের পয়সায় আপনাদের বেতন হয়। তাদের জন্য কিছু করেন।’

পরে আদালত আগামী ২৩ জুন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পায়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন এবং রুল জারি করেন।

ওই আদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জন স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীকে তার প্রতিবেদন নিয়ে ২১ মে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। আজ তিনি হাইকোর্টে হাজির হলে এ মামলার শুনানি হয়।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে

নিরাপদ খাদ্য বিএসটিআই হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর