Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দূরত্ব কমছে আম্পানের, দিকও বদলাচ্ছে?


২০ মে ২০২০ ০৫:১৩

ঢাকা: গেল বছরের দুই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ও ‘বুলবুল’-এর তুলনায় ‘আম্পান’-এর উপকূলমুখী গতি অনেকটাই কম। তবুও সময় যত গড়াচ্ছে উপকূলের সঙ্গে এর দূরত্ব ততোই কমছে। বুধবার (২০ মে) ভোর রাত পর্যন্ত পায়রা সমুদ্র বন্দরের ৬০০ কিলোমিটারের ভেতর ঢুকে পড়েছে ঝড়টি।

আম্পান ইতিমধ্যেই তার শক্তি অনেক কমিয়ে এনেছে। সুপার সাইক্লোন থেকে এটি পরিণত হয়েছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এরই মধ্যে মেঘ-মানচিত্রের দৃশ্যপট থেকে জানা যাচ্ছে, ঝড়টি এতক্ষণে নিজের দিক বা গতিপথও বদলে নিয়েছে অনেকখানি।

বিজ্ঞাপন

                                                             আম্পান: লাইভ আপডেট

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির দিক পরিবর্তন হয়েছে সত্যি তবে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা ও যশোর অঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে নিশ্চিত। অনেক ঝড় হবে, বাতাসের গতিবেগ বাড়বে, এরসঙ্গে হবে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল থেকে জীবন বাঁচাতে রাতের মধ্যেই সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে ৩ লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বুধবার সকাল থেকেই বন্দরগুলোতে সংকেত পাল্টে যাবে। এখনো পর্যন্ত ৭ নম্বর সংকেতে চলতে থাকা মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যাওয়া হবে সারাদিন।

এই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের অর্থ হলো, বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ো বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার ঊর্ধ্বে হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।

বিজ্ঞাপন

তবে বিপদ বাড়লে ১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেতও দেখানো হতে পারে। যার অর্থ হলো আবহাওয়া বিপদ সংকেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্মকর্তা আবহাওয়া অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করছেন।

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস থেকে জানা যায়, এদিন সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে আম্পান।

বুলেটিনে জানানো হয়, মঙ্গলবার রাতে আম্পান পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছিল। একই সময় মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪০ ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থান করছিল আম্পান।

সাইক্লোন কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এবার ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য ৩১শ মেট্রিক টন চাল, ৫০ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ৩১ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ২৮ লাখ টাকা এবং ৪২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ৫ থেকে ১০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ১৪০ থেকে ১৬০ মিটার বেগে ঝড়ো বাতাসসহ অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা নৌযানগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী গভীর সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় তিন স্তরের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে। সেই সঙ্গে নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩১৩টি স্পিডবোট, ১৫টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, ২৩৯ আউট বোর্ড মোটর, চারটি জাপানিজ উদ্ধার বোর্ড, ছয়টি ফাইবার গ্লাস বোর্ড, ১১৫টি শার্ক বোর্ড এবং দুইটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ভেহিক্যাল প্রস্তুত রয়েছে। আর্মি এভিয়েশন উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান দিক বদলাচ্ছে দূরত্ব কমছে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর