চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাড়ে তিন দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন আগামীকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণের জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে সরঞ্জাম পাঠিয়ে দিয়েছে চাকসু নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের টহল চলছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১০টায় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করে ব্যালট বাক্স কেন্দ্রে পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়। বেলা ১২টার মধ্যে সব কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স পৌঁছানো হয় বলে জানান চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে চাকসু ভবনের সামনে পিকআপ গাড়িতে করে ব্যালট বাক্স আনা হয়। সেখান থেকে পাঁচটি অনুষদ ভবন যথাক্রমে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ ও প্রকৌশল অনুষদে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া হয়। এই পাঁচ ভবনে ভোটগ্রহণ হবে। এসব অনুষদের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০ বুথে ভোটগ্রহণ হবে।
এছাড়া দৃষ্টিহীনদের জন্য চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ কেন্দ্রে শুধু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা দুই নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে ভোট দেবেন।
জানতে চাইলে চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যালট বাক্স কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ভোটকক্ষ প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামীকাল (বুধবার) ভোটগ্রহণ শুরুর আগে সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে।’

প্রতিটি কেদ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ব্যলট বাক্স।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ওএমআর ব্যালট শিটে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। চাকসুতে থাকছে চার পৃষ্ঠার এবং হল ও হোস্টেল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে। চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনে মোট ভোটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ৫২১ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩২৯ জন।
চাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, এবারের নির্বাচনে ১৩ টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র থেকে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি পদে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ১৪টি পদে ৪৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন এবং এজিএস পদে ২১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজারখানেক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দলও ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে। ভোটের দিন বিজিবি, এপিবিএনও থাকবে। এছাড়া প্রত্যেক অনুষদ ভবনে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ-র্যাব মিলিয়ে এক হাজারের মতো ফোর্স মোতায়েন আছে। র্যাবের ৮টি টিম আমরা রেখেছি, তারা টহল দিচ্ছে। নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর, স্বাভাবিক আছে। আশা করি, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ সালে এবং ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসুর নির্বাচন হয়।